জাতীয় পার্টিতে কোনো বিভেদ নেই, এ দাবি করে দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেছেন, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নির্দেশনা অনুযায়ীই চলবে দল। যারা তার নির্দেশনা মানবেন না, তারা পার্টি ও নিজের ক্ষতি ডেকে আনবেন। নতুন-পুরাতন সব ত্যাগী নেতাকর্মীকে নিয়েই কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলে পার্টি শক্তিশালী হবে।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সোমবার (২৭ মার্চ) রাজধানীর গুলশানের একটি কমিউনিটি সেন্টারে জাতীয় পার্টি (রওশন) আয়োজিত আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এখন থেকে দলের নেতাকর্মীদের জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে রওশন এরশাদ বলেছেন, গণতন্ত্রের মূল শর্ত নির্বাচন। যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচন হবে। সাংবিধানিক ধারা মেনেই হবে সে নির্বাচন। জাতীয় পার্টি বরাবরই নির্বাচনমুখী দল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে পার্টি সব নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। আগামী নির্বাচনেও অংশ নেবে জাতীয় পার্টি। তাই, ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে হবে। দলকে তৃণমূল পর্যায়ে আরও সুসংগঠিত করতে হবে। এখন থেকেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিজ নিজ আসনে গণসংযোগ শুরু করতে হবে। এজন্য সতর্কতার সঙ্গে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
তিনি বলেন, দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হলে পার্টি সংস্কার করতে দ্রুত কাউন্সিল শেষ করতে হবে। সেজন্য জেলা পর্যায়ের নেতৃত্ব এখনই ঠিক করতে হবে।
‘রমজানের পর জাতীয় পার্টি ব্যাপক সাংগঠনিক কর্মসূচি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে। আমাদের দরজা সব দেশপ্রেমিক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী ব্যক্তির জন্য খোলা আছে।’
পবিত্র রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, রমজানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে সাধরাণ মানুষ কষ্ট পাচ্ছেন। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী পবিত্র নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করছে। দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহ ঊর্ধ্বগতি নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলছে।
স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে নয় মাসের মুক্তি সংগ্রামে লাখো শহীদের আত্মত্যাগে সার্বভৌম এই বাংলাদেশ অর্জিত হয়, উল্লেখ করে রওশন এরশাদ বলেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭১ এর স্বাধীনতাযুদ্ধ বাঙালির অহঙ্কার। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশ নানা বিবর্ণ সময় অতিক্রম করে এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত। যার পথধারায় দেশের স্বর্ণউজ্জ্বল উন্নয়নের ইতিহাসে ৯ বছরের সফল রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নাম লিখা রয়েছে।
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলে গেছেন, মুক্তিযোদ্ধারা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান। তিনি মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শ—ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পল্লীবন্ধু মহান স্বাধীনতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অনেক কাজ করেছেন, যা জাতি আজও স্মরণ করে। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের পূর্ণাঙ্গ রূপ দান, শহিদ মিনার আধুনীকিকরণ, মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে বড় বড় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পল্লীবন্ধুর হাত ধরেই হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন—বিশেষ অতিথি রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ এমপি, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বিরোধী দলীয় নেতার মুখপাত্র কাজী, মামুনুর রশীদ, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা, সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সরোয়ার মিলন, প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি, সাবেক উপদেষ্টা রফিকুল হক হাফিজ, প্রেসিডিয়াম সদস্য নাজমা আক্তার এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য ক্বারী হাবিবুল্লাহ বেলালী, সাবেক প্রেসিডিয়াম ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গহীর, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা রওশন আরা মান্নান এমপি, সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম নূরু।
উপস্থিত ছিলেন দলের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সাল চিশতি, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, সাবেক এমপি অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন, সাবেক ছাত্রনেতা মনিরুজ্জামান টিটু, সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার মামুনূর রশীদ, ইঞ্জিনিয়ার ইকরাম খান, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, সৈয়দ ওয়াহিদুল ইসলাম তরুণ, অ্যাডভোকেট অশোক কুমার ঘোষ, নারী নেত্রী মনোয়ার তাহের মানু, শারমিন পারভিন লিজা, কেয়া চৌধুরী, আব্দুল আজিজ, শ্রমিক নেতা সাখাওয়াত হোসেন, এম জাহের, শাহ জামাল রানা, ডা. সেলিনা, হাসনা হেনা, এজাজ আহমেদ খান, মো. কামাল হোসেন, মঞ্জুরুল হক সাচ্চা, কামাল খন্দকার, নজরুল ইসলাম, শেখ রুনা, জহির উদ্দিন জহির, ইসরাফিল মিয়া, আজমল হোসেন জিতু, ইদ্রিস আলী, ইমদাদুল হক, সাজিউল ইসলাম রকি, ছাত্র সমাজের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হাফসা সুলতানা, সদস্য সচিব আবু সাঈদ লিয়ন, জাপা নেতা শফিকুল ইসলাম, মিশু আহমেদ, এবি মাসুম রেজা, জিয়াউল হক জুয়েল প্রমুখ।