সাতসতেরো

মাগফিরাত থেকে নিরাশ হবেন না

আলহামদুলিল্লাহ! আমরা রহমতের দশ দিন অতিক্রম করে মাগফিরাতের দশকে প্রবেশ করেছি। আগের আলোচনায় আমরা দেখেছি যে, রোজার এই দশক আমাদের জন্য নতুন একটি সম্ভবনা এবং একইসঙ্গে সম্ভবনা হারানোর দশকও বটে। আমরা যদি সদ্যবিগত রহমতের দিনগুলোতে রহমত অর্জনে ব্যর্থ হয়ে থাকি তাহলে সেটা অবশ্যই দুর্ভাগ্যের বিষয়।

তবে মহান আল্লাহর রহমত, তার সুবিশাল দয়া ও ভালোবাসার দিকে লক্ষ করে আমরা আশাবাদী হবো। আমরা নিরাশ হবো না। কারণ আল্লাহ তায়ালা আমাদের নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন। 

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। (সূরা জুমার-৫৩)

এমনকি নিরাশ হওয়াকে কাফেরদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে কোরআনে ব্যক্ত করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘মনে রেখ, একমাত্র কাফেররাই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যায়।’ (সূরা ইউসুফ : আয়াত : ৮৭)

এই নির্দেশনা এবং বাণী মান্য করে আমরা নিরাশ হবো না। বরং আশাবাদী হবো এবং পূর্ণ উদ্যোম ও উৎসাহ নিয়ে আল্লাহর ক্ষমা পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে যাবো; ইনশাআল্লাহ।

মাগফিরাত আরবী শব্দ। মাগফিরাত মানে ক্ষমা করা, গাফার ও গুফরান মানে ক্ষমা; ইস্তিগফার মানে ক্ষমা চাওয়া। পবিত্র কোরআনে ক্ষমার ব্যাপারে তিনটি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। সেগুলো হলো: ১. ‘গাফফার’। শব্দটির অর্থ হচ্ছে অত্যন্ত ক্ষমাশীল। পবিত্র কোরআনে এ শব্দটি পাঁচবার উল্লেখ হয়েছে।  ২. ‘গাফুর’। যার অর্থ হচ্ছে পরম ক্ষমাশীল। এ শব্দটি পবিত্র কোরআনে একানব্বই বার উল্লেখ হয়েছে।  ৩. ‘গাফির’। যার অর্থ ক্ষমাকারী। 

যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তিনি গুনাহ ক্ষমাকারী’। (সুরা ৪০ মুমিন, আয়াত: ৩)। আরও উল্লেখ রয়েছে, ‘জেনে রেখো, তিনি পরাক্রমশালী পরম ক্ষমাশীল’। (সুরা ৩৯ জুমার, আয়াত: ৫)

মাগফিরাতের পারিভাষিক অর্থ হলো, মহান আল্লাহ তায়ালার নিজ গুণে ও ইচ্ছায় বা মানুষ ও জ্বীন কর্তৃক ক্ষমা চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের ক্ষমা করে দেয়া। 

ক্ষমা করা মহান আল্লাহ তায়ালার অন্যতম প্রধান গুণ। তিনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। কোরআনে বহু জায়গায় আল্লাহ তায়ালা নিজেকে ক্ষমাশীল হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো; নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল।’ (সুরা-৭১ নূহ, আয়াত: ১০)

তিনি বলেন, ‘আর তুমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ সুরা নিসা-১০৬

‘যে ব্যক্তি অসৎ কাজ করে কিংবা নিজের আত্মার প্রতি জুলুম করে, অতঃপর আল্লাহ হতে ক্ষমা ভিক্ষে করে, সে আল্লাহকে অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু পাবে।’ সুরা নিসা-১১০

‘অনন্তর যে ব্যক্তি সীমা লংঘন করার পর (চুরি করার পর) তাওবা করে এবং ‘আমলকে সংশোধন করে, তাহলে আল্লাহ তার প্রতি (রাহমাতের) দৃষ্টি বর্ষণ করবেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।’ সুরা মায়েদা-৩৯

‘তোমাদের প্রতিপালক দয়া-রহমতের নীতি নিজের প্রতি অবধারিত করে নিয়েছেন আর তা হচ্ছে যদি তোমাদের কোনো ব্যক্তি না জেনে অন্যায় পাপ করে, অতঃপর তাওবা করে ও নিজেকে সংশোধন করে, তাহলে আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু।’ সুরা আনআম-৫৪

এভাবে অর্ধশতকেরও বেশি জায়গায় আল্লাহ তায়ালা নিজেকে ক্ষমাশীল হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। বান্দাদের ডেকেছেন এবং ক্ষমা না চাইলে তিনি রাগ করেছেন। তার ওপরে পবিত্র রমজানের এই দশককে তিনি আলাদা করে মাগফিরাতের দশক বলে ঘোষণা করেছেন। সেজন্য আমরা আল্লাহর ক্ষমার ব্যাপারে পূর্ণ আশাবাদী হয়ে এই দশককে কাজে লাগাবো। বেশি বেশি তাওবা-ইস্তেগফার করা, রোনাজারি করা, ইবাদাত করা চালিয়ে যাবো।  আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন।