শিক্ষা

সাদ হত্যাকাণ্ড : বহিস্কৃত আরেক ছাত্র গ্রেফতার

আরিফুল ইসলাম, বাকৃবি : বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শেষ বর্ষের মেধাবী ছাত্র সাদ ইবনে মমতাজ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বহিস্কৃত ছাত্র অন্তর চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দীর্ঘ দেড় মাস আত্মগোপনে থাকার পর শুক্রবার গভীর রাতে গোয়েন্দা সংস্থার গোপন তথ্যের ভিত্তিতে কোতোয়ালী থানার একটি টিম অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। ময়মনসিংহের কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল করিম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, সাদ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার একাধিক টিম কাজ করছে। সদ্য গ্রেফতারকৃত অন্তর চৌধুরী দীর্ঘ দেড় মাস আত্মগোপনে ছিল। তার বাড়ি নাটোর হলেও সে গাইবান্ধায় ফুফুর বাসায় আত্মগোপনে ছিল। গোয়েন্দা সংস্থার গোপন তথ্যের ভিত্তিতে কোতোয়ালী থানার একটি টিম রাত ২টার দিকে অভিযান চালিয়ে তাকে ফুফুর বাসা থেকে গ্রেফতার করে। পরে তাকে ময়মনসিংহ কোতোয়ালী থানায় আনা হয়। সাদ হত্যার দায়ে অভিযুক্ত আরও তিন শিক্ষার্থী- রেজা, রাসেল এবং মুফরাদকে ধারার চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আশরাফুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের স্নাতক শেষ বর্ষের ক্লাস প্রতিনিধি সাদ ইবনে মোমতাজকে গত ৩১ মার্চ আশরাফুল হক হলের ২০৫ নাম্বার রুমে ডেকে নিয়ে স্ট্যাম্প, লাঠি, রড দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করে তার সহপাঠীসহ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পর দিন মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে ট্রমা সেন্টারে তিনি মারা যান। তবে কে বা কারা তাকে ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যান তা এখনও জানা যায়নি। আসন্ন অনুষদীয় সহ-সভাপতি নির্বাচন ও একটি ক্লাস পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে সুজয় ও রোকনুজ্জামান এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানান তার সহপাঠীরা।এদিকে এঘটনায় পুলিশ সাদ হত্যার পরদিন ২ এপ্রিল জড়িত সন্দেহে আশরাফুল হক হলের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজয় কুমার কুণ্ডু ও একই হলের ছাত্রলীগ কর্মী রোকনুজ্জামানকে শহরের পাটগুদাম বাসস্ট্যান্ড থেকে পালানোর সময় গ্রেফতার করে। তাদের দুজনকে সাদ হত্যার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে প্রথমে সাময়িকভাবে ও পরে স্থায়ীভাবে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করে বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগ। পরদিন তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সেই সঙ্গে তারা আরও ১৪-১৫ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী এ কিলিং মিশনে অংশ নেয় বলে আদালতকে জানিয়েছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে পুলিশ তাদের নাম প্রকাশ করছে না।সহপাঠী সাদ হত্যার পরদিন থেকেই আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। প্রায় এক মাস ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন চালিয়ে যান সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। হত্যাকাণ্ড তদন্তে গঠিত কমিটির প্রতিবেদন এবং শৃঙ্খলা ও আবাসন কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট ৬ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কার করে। গতকাল গেফতারকৃত অন্তর চৌধুরীকে দুই বছরের (৪ সেমিস্টার) জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া পূর্বে গেফতারকৃত সুজয় ও রোকনকে আজীবনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অন্য দিকে সাদ হত্যার দায়ে অভিযুক্ত আরও তিন ছাত্রলীগ নেতা- রেজাকে আজীবনের জন্য, রাসেল এবং মুফরাদকে চার বছরের জন্য বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। এরা বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিস্কৃত ৬ জনের মধ্যে গ্রেফতার করা হল তিনজনকে।

 

রাইজিংবিডি/বাকৃবি ১৭ মে,২০১৪/আরিফুল ইসলাম/সন্তোষ