সারা বাংলা

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংসের মুখে ২৫৪ বছরের ‘আওকরা মসজিদ’

রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে দিনাজপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী ‘আওকরা মসজিদ’।

জেলার খানসামা উপজেলার পাকেরহাটে অবস্থিত মসজিদটি প্রায় ২৫৪ বছরের পুরোনো এবং ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম।

‘আওকরা’ শব্দের অর্থ কথা বলা। জনশ্রুতি আছে এই মসজিদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় কথা বললে প্রতিধ্বনি হতো। তাই স্থানীয়রা মসজিদটির নাম রাখেন ‘আওকরা’ বা কথা বলার মসজিদ।

জানা গেছে, ২৫৪ বছর আগে মীর্জা লাল বেগ নামের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি বাংলা ১১৭২ সালে মসজিদটি নির্মাণ করেন। নির্মাণের সময় মসজিদটি কি নামে পরিচিত ছিল তা স্থানীয়দের কেউ বলতে পারেননি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সংস্কারের অভাবে মসজিদের প্রাচীরগুলোতে ফাটল ধরেছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যেকোনো মুহূর্তে মসজিদটি ভেঙে পড়তে পারে। তিন বছর আগে এলাকাবাসী চারপাশের ঝোপ-জঙ্গল পরিস্কার করে নামাজ আদায়ের পরিবেশ তৈরি করে মসজিদটিতে। কিন্তু প্রাচীরে ফাটল দেখা দেওয়ার পর স্থানীয় মুসল্লিরা প্রাচীরের কাছে টিনসেট আর বেড়া নির্মাণ করে নামাজ আদায় করছেন।

এদিকে, গত দুই বছর আগে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় মসজিদটিকে ঐতিহ্যবাহী প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ হিসেবে ঘোষণা দেয়। তবে এখন পর্যন্ত মসজিদটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। তাই এলাকাবাসীর দাবি দ্রুত মসজিদটি সংস্কার করার।

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংসের মুখে ২৫৪ বছরের ‘আওকরা মসজিদ’। ছবি: রাইজিংবিডি

৭২ বছর বয়সী আফছার আলী নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মীর্জা লাল বেগ মসজিদটি নির্মাণের সময় মসজিদের চারপাশে অনেক বসতি ছিলো। লোকমুখে শোনা ইংরেজ শাসন আমলে তাদের অত্যাচারে গ্রামবাসী এখান থেকে পালিয়ে যায়। এরপর থেকে মসজিদটি অযত্ম ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। বর্তমান মসজিদটির সংস্কার দরকার।’

আওকরা মসজিদ কমিটির সভাপতি মফিজ উদ্দিন বলেন, ‘গ্রামবাসীর সহযোগিতায় আমরা মসজিদটি পরিষ্কার করে টিনের ছাউনি, মাইক ও নলকূপ স্থাপন করেছি। নামাজ আদায়ের উপযোগী করা হয়েছে মসজিদটি। তবে মসজিদটি দ্রুত সংস্কার না করলে এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি ধ্বংস হয়ে যাবে।’

মসজিদের ইমাম হাসান আলী বলেন, ‘দীর্ঘদিন মসজিদটি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকার পর স্থানীয়রা পরিস্কার করে নামজা আদায় করা শুরু করে। আশা করছি সরকার দ্রুত মসজিটি সংস্কার করে দেবেন। তাহলে আমরা নিরাপত্তার সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবো।’

দিনাজপুর প্রত্মতত্ত্ব জাদুঘর ও কান্তজিউ মন্দিরের সহকারী কাস্টোডিয়ান হাফিজুর রহমান বলেন, ‘মসজিদটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ঐতিহ্যবাহী প্রত্মতত্ত্ব সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি পরিদর্শন করে সংস্কার করা হবে।

পড়ুন: ঐতিহাসিক ছোট সোনা মসজিদ: ঐতিহ্য রক্ষায় উদ্যোগের দাবি