খেলাধুলা

নির্ভরতার প্রতীক সাকিব-মুশফিক জুটি

২০০৬ সালে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল তা এখনও চলছে। দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশির মতো তাদের অর্জন। সময় যত বাড়ছে অর্জনের ঝুলি তত ভারী হয়।

শূন‌্য থেকে শুরু করে তাদের জুটি এখন দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও যে জুটি বেশ সমাদৃত। বলা হচ্ছে সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের জুটির কথা।

২০০৬ সালে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দিয়ে দুজনের একসঙ্গে পথ চলা শুরু হয়েছিল। সবশেষ আয়ারল‌্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টেও একসঙ্গে ২২ গজ রাঙিয়েছেন তারা। সুসময়ে, দুঃসময়ে দুজন জমাট বেঁধে দলকে এমন স্বস্তিকর অবস্থানে নিয়ে গেছেন যেখানে কেবল বাংলাদেশ হেসেছে।

পরিসংখ‌্যানে তারা সবাইকে ছাড়িয়ে। ম‌্যাচের প্রভাব বিস্তার করতেও তাদের জুটি হয়েছে অনন‌্য। তিন ফরম‌্যাট মিলিয়ে ১৯২ ইনিংসে তারা জুটি বেঁধেছেন। যেখানে রান করেছেন ৬৮২৭ রান। সর্বোচ্চ রান ৩৫৯। সেঞ্চুরির জুটি আছে ১২টি। ফিফটির ৫৮টি।

তাদের একসঙ্গে পথ চলার পর থেকে এখন পর্যন্ত কেবল দুটি জুটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে আছে। বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মার  (১৪১ ইনিংসে ৭১৭১ রান) ও শিখর ধাওয়ান ও রোহিম শর্মার (১৭৩ ইনিংসে ৬৯৮৪ রান) জুটি।

সাকিব বরাবরই বাংলাদেশের ক্রিকেটের ধ্রুবতারা। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত একই ছন্দ ধরে রেখে নিজের কারিশমা দেখিয়ে চলছেন। ব‌্যাটিংয়ে ব‌্যর্থ হলে বোলিংয়ে পুষিয়ে দেন। বোলিংয়ে খারাপ করলে ২২ গজে তার ব‌্যাটে রান ফোয়ারা ছুটে। ক‌্যারিয়ারে খুব কম সময়ই তাকে অফফর্মে পাওয়া গেছে।

মুশফিকুর রহিমের শুরুটা মনমতো হয়নি। তবে প্রতিশ্রুতিশীল ক্রিকেটার আস্থার প্রতীক হতে সময় নেননি। ব‌্যর্থতার খোলস থেকে বেরিয়ে আসার পর মিস্টার ডিপেন্ডেবল হয়েছেন মুশফিক। তবে আয়ারল‌্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের আগে মুশফিক পথ হারিয়েছিলেন। তবে ওয়ানডে ও টেস্ট ম‌্যাচের সেরার পুরস্কার পেয়ে মুশফিক বুঝিয়ে দিয়েছেন তার সামর্থ‌্য এখনও ফুরোয়নি।

অফিসিয়াল বয়সে মুশফিকের চেয়ে বড় সাকিব আল হাসান। তবে বিকেএসপিতে মুশফিক ছিলেন ওপরের ক্লাসে, সাকিব তাই ডাকেন ‘মুশফিক ভাই’। আয়ারলান্ডের বিপক্ষে টেস্টে সাকিব ও মুশফিকের ১৫৯ রানের জুটি বাংলাদেশকে বড় বিপদ থেকে বাাঁচিয়েছিল। সেই ইনিংসের পর থেকে আবার তাদের জুটি আলোচনায় এসেছে। এর আগে পরে নানা সময়ে তাদের ব‌্যাট বাংলাদেশকে হারিয়েছে। উড়িয়েছে নতুন ভুবনে। দিয়েছে নতুন আনন্দ।

এই পথ চলা সাকিবের চোখে বিকেএসপির দিনগুলোর মতোই। মিরপুর টেস্ট শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাকিব বলছিলেন, ‘মুশফিক ভাইয়ের সঙ্গে আমি খেলছি ২০০৩ সাল থেকে, অনূর্ধ্ব-১৫ থেকে একসঙ্গে খেলছি। তখনও যেমন দেখেছি, এখনও তেমনই।’ দেশের ক্রিকেটে দুজনের একসঙ্গে পথচলা যেমন দীর্ঘদিনের। পারফরম‌্যান্সের উঠা-নামা, সম্পর্কেরও চিড় ধরা, অতঃপর তা অবসান ঘটিয়ে কাছে ফেরা...সবকিছুই দেখা হয়েছে দুজনের। তাইতো দুজনের সম্পর্ক মজবুত থেকে লম্বা সময়। সাকিবের কণ্ঠেই উঠে এলো সেসব, ‘এটা তো হয়ই। আমি নিশ্চিত পরিবারের সঙ্গে সবসময় সুসম্পর্ক থাকে না, খারাপ সম্পর্কও হয় না সবসময়। পারফরম্যান্সও ওরকম ওঠা-নামার ভেতরে থাকে। অভিজ্ঞতা যখন থাকে ওটা কীভাবে ওভারকাম করতে হয় সেটা জানে। এই ধাপগুলো সবাই পার করে আসছে। যারা ১০-১৫ বছর খেলে তাদের সবারই এমন থাকে।'

মুশফিকুর রহিম টি-টোয়েন্টি ছেড়েছেন। সাকিব খেলে যাচ্ছেন তিন ফরম‌্যাট। ২০২৩ বিশ্বকাপ তাদের পথ আলাদা করতে পারে। আলাদা করলেও রেকর্ডের পাথায় তাদের অর্জন কখনো ফিকে হবে না।