সারা বাংলা

পদ্মাপাড়ে সৈকতের আবহ

রাজশাহী শহরের দক্ষিণ পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। ভাটার সময় সাগরের পানি যেমন দূরে চলে যায়, তেমনি শুষ্ক মৌসুমে তীর থেকে দূরে চলে গেছে পদ্মার পানি। জেগে উঠেছে চর। সেই বালুচরে সারি সারি বিচ চেয়ার। কেউ শুয়ে আছেন, কেউ বসে ছবি তুলছেন। কেউ চড়ছেন বিচ বাইকে। এখানেই যেন সৈকতের বিনোদন! আর নদীর মধ্যে জেগে ওঠা চরটা যেন কোনো দ্বীপ। নৌকায় চড়ে সেই দ্বীপে গিয়ে পদ্মার অপার সৌন্দর্য উপভোগ করছেন অনেকে।

এবার ঈদেও পদ্মার এমন সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় করেন নানা বয়সী হাজারো মানুষ। নির্মল বাতাসে একটু প্রশান্তির শ্বাস নিতে মানুষ ছুটে যান পদ্মা নদীর তীরে। ভরা মৌসুমে থৈ থৈ পানি আর গ্রীষ্ণের ধু-ধু বালুচরের মধ্যেই বিনোদনের খোরাক মেটান মানুষ। 

ঈদ, বাংলা নববর্ষ কিংবা অন্যান্য উৎসবগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই হারায় পদ্মার পাড়। এবার ঈদেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ঈদের দিন থেকে এখনও প্রতিদিন পদ্মাপাড় থাকছে লোকে লোকারণ্য।

হাজার হাজার শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠছে পদ্মাপারের প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা। ঈদের ছুটিতে সব বয়সী মানুষকেই কাছে টেনেছে পদ্মা। সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে নগরীর লালন শাহ মুক্তমঞ্চ এলাকায়। টি-বাঁধ, বড়কুঠি, পঞ্চবটি কিংবা ফুলতলার ঘাটেও জনস্রোত নামতে দেখা গেছে পদ্মার বালুচরের দিকে।

ভরা মৌসুমে এসব এলাকায় মানুষ পদ্মার বুকে যেতেন নৌকা ভ্রমণে। এখন পদ্মা দূরে সরেছে। তাই লালন শাহ মুক্তমঞ্চ এলাকায় বালুচরে বিনোদনের জন্য আনা হয়েছে বিচ বাইক। নদীর পাড়ে রাখা হয়েছে বেশকিছু বিচ চেয়ারও। আর নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে পুরো পদ্মার পাড়টিকেই সাজিয়ে তুলেছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। নতুন নতুন ওয়াক ওয়ে তৈরি করা হয়েছে। সেখান দিয়ে পদ্মার বাতাস গায়ে লাগিয়ে হেঁটে চলেন অনেকে।

পদ্মার পাড়ে রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য রেস্তোরাঁও। ঈদের ছুটিতে এসব রেস্তোরাঁগুলোতেও মানুষের ভিড় দেখা গেছে। কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে, কেউ বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে গিয়ে সেখানে খেয়েছেন। আড্ডা দিয়েছেন। রেস্তোরাঁগুলোতে বসে উপভোগ করেছেন সূর্যাস্ত কিংবা সে সময় পদ্মার ওপর দিয়ে ঝাকে ঝাকে উড়ে পাখিদের নীড়ে ফেরার দৃশ্য।

লালন শাহ মুক্তমঞ্চ এলাকায় পদ্মার পাড়ে রয়েছে ছোট একটি পার্কও। সবুজ ঘাস দিয়ে সাজানো সেই পার্কে পেতে রাখা হয়েছে কিছু চেয়ার। সেখানে বসে ছিলেন হাবিবুর রহমান। কথা হলে তিনি বলেন, তিনি ঢাকায় থাকেন। অনেক দিন এখানে আসেননি। এবার এসে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন। সবুজে চোখ জুড়িয়েছে। আর নির্মল বাতাসে জুড়িয়েছে প্রাণ।

প্রতিনিয়তই পদ্মার পাড়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কাজ করছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। এখন শহরের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার একটি সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমেও পদ্মার পাড়কে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। করা হচ্ছে আলোকায়ন। 

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন মাঝে মধ্যেই পদ্মা পাড়ে ঘুরতে যান। তিনি নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। বাস্তবায়নও করেন দ্রুত। ফলে পদ্মাপাড় হয়ে উঠেছে রাজশাহীর মানুষের বিনোদনের জায়গা।