দেহঘড়ি

যেসব লক্ষণে বুঝবেন পাকস্থলীর ক্যানসার

ক্যানসারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যথাযুক্ত ক্যানসার হিসেবে পাকস্থলীর ক্যানসার পরিচিতি। নারীদের তুলনায় পুরুষরাই এ ক্যানসারে বেশি ভোগেন। এ রোগে ভুক্তভোগীদের অনেকের মধ্যে ব্যথা এ রোগের প্রাথমিক সতর্কীকরণ উপসর্গ নয়। এ প্রতিবেদনে পাকস্থলী ক্যানসারের ৬টি উপসর্গ দেওয়া হলো, যার সম্পর্কে প্রত্যেকেরই সচেতন হওয়া উচিত।

মল বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া: পাকস্থলীর ক্যানসার ছাড়াও কোলাইটিস এবং ক্রোনস ডিজিজের কারণেও মল বা বমির সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। যদি রক্তপাত পাকস্থলী ক্যানসারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়, তাহলে আপনার মলের রক্ত মেরুন বা আলকাতরার মতো কালো হতে পারে। অন্যদিকে, বমির রক্ত উজ্জ্বল লাল হতে পারে।

দ্রুত ক্ষুধা চলে যাওয়া: আপনি ক্ষুধার্ত ছিলেন, যখন আপনি খেতে বসলেন, অল্প খাওয়ার পরই আপনার ক্ষুধা চলে গেছে এবং খাবারটি খেতে আর ভালো লাগছে না। এটি হতে পারে পাকস্থলী ক্যানসারের অন্যতম উপসর্গ। চিকিৎসকদের মতে, ‘বিশেষ করে যদি আপনার ক্ষুধা সচরাচরের তুলনায় দ্রুত মিটে যায়, তাহলে আপনার একে অবহেলা করা উচিত নয়।’

অন্ত্রে ব্যথা হওয়া: কিছুক্ষেত্রে পাকস্থলী ব্যথা পাকস্থলী ক্যানসারের উপসর্গ। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে আপনার ব্যথা অন্যান্য অন্ত্র বা পেটের অসুস্থতার কারণে হতে পারে, ক্যানসারের জন্য নয়। পাকস্থলী ক্যানসার সম্পর্কিত ব্যথার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- ব্যথা অনবরত হবে এবং ব্যথা হবে ‘কামড় খাওয়া’ প্রকৃতির। চিকিৎসকদের মতে, ‘এটি এমন কিছু নয় যে আপনি শুধু একদিনের জন্য অনুভব করবেন, এটি দুই সপ্তাহ পর্যন্ত হতে পারে এবং আবারো ফিরে আসতে পারে।’

অপ্রত্যাশিতভাবে ওজন কমে যাওয়া: অনেক শারীরিক অবস্থা, যেমন- টাইপ-১ ডায়াবেটিস, অ্যাডিসন’স ডিজিজ এবং ক্রোন’স ডিজিজ অপ্রত্যাশিতভাবে ওজন কমাতে পারে। এ তালিকায় পাকস্থলী ক্যানসারও রয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, ‘যদি আপনি ওজন হারাতে থাকেন এবং ডায়েটিং না করেন, তাহলে তা এমন কিছু যাতে আপনার মনোযোগ দেওয়া উচিত।’ এরকম ওজন হ্রাসের ব্যাপারে সচেতন থাকুন, কারণ এই ওজন হ্রাস ধীরে ধীরে হতে পারে। হঠাৎ ওজন হ্রাসের বিষয়টি আপনার লক্ষ্যে নাও আসতে পারে। এজন্য নির্দিষ্ট সময় পরপর আপনি ওজন মাপতে পারেন। ওজন কমানোর কোনো রকম প্রচেষ্টা ছাড়াই উল্লেখযোগ্যভাবে আপনার ওজন হ্রাস পেয়ে থাকলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন।

বুকজ্বালা হওয়া: বুকজ্বালা, বদহজম, খাবার ওপরে উঠে আসা, বমিভাব বা বমি হওয়া- এসব উপসর্গও হতে পারে পাকস্থলী ক্যানসারের প্রাথমিক সতর্কীকরণ উপসর্গ। এরকম উপসর্গগুলো ক্যানসারের তুলনায় অন্যান্য অসুখের লক্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে উপসর্গ যেটারই হোক না কেন, আপনার উচিত হবে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া।

পেটফোলা, ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া: আপনার পাকস্থলীতে ক্যানসার বিকশিত হলে আপনার পেটফোলা, ডায়রিয়া/কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা বাওয়েল মুভমেন্ট বা মলত্যাগে বিশৃঙ্খলা হতে পারে। এসব উপসর্গের প্রত্যেকটা এককভাবে ক্যানসারের লক্ষণ না হলেও এদের সঙ্গে এ প্রতিবেদনের অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।

প্রতিরোধের উপায়

পাকস্থলীর ক্যানসার প্রতিরোধে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি। নিয়মিত তাজা ও অর্গানিক শাকসবজি–ফল খেতে হবে। প্রক্রিয়াজাত খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। এ ছাড়া ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত ব্যায়াম করা, ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করলে পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটা কমবে। দীর্ঘদিন পেটের কোনো সমস্যা পুষে রাখা উচিত নয়। পেটের নানা সমস্যায় ভুগলে নিজে নিজে দিনের পর দিন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ না খেয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

তথ্যসূত্র : ম্যানস হেলথ