সারা বাংলা

প্রকৃতির চোখ রাঙানি না থাকায় কৃষকের মুখে হাসি

প্রতিবারই হাওরে বৈরি আবহাওয়া আর পাহাড়ি ঢলে স্বপ্ন ভেঙ্গে যায় কৃষকের। কিন্তু এবার প্রকৃতির চোখ রাঙানি নেই। ফলে বোরো ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কিশোরগঞ্জের হাওরসহ পুরো জেলার কৃষক। এদিকে, ব্লাস্ট রোগ আর চিটা দেখা দেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ করা কৃষকরা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে হাওরে এ পর্যন্ত ৮০ ভাগ আর পুরো জেলায় ৬৫ ভাগ ধান কাটা শেষ করেছেন চাষিরা।

রোববার (৩০ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাওরে বুকে তীব্র রোদের মধ্যেই ফসল গোলায় তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। বৈশাখের তপ্তরোদ আর প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করেই বোরো ধান কাটছেন তারা। একই সঙ্গে ধান মাড়াই আর রোদে শুকানোর কাজও চলছে পুরো দমে। 

মিঠামইন উপজেলার কৃষক চাঁন মিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আবহাওয়া এখনো ভালো। ঈদের পরে বাইরে থেইক্কা কামলা না পাইয়া পরিশ্রমডা একটু বেশি হইতাছে। এমনে আর কয়ডা দিন যদি ভালা থাহে, তাইলে আশাকরি সব ধান কাইট্টা ঘরে তুলবাম। আল্লাহ এইবার আমরার দিকে চোখ তুইল্লা চাইছে।’ 

আগাম বন্যার শঙ্কা না থাকায় এবার খানিকটা গুছিয়ে নিয়েই ধান কাটছেন চাষিরা। ধান পুরোপুরি পাকলে, তবেই ধান কাটতে মাঠে যাচ্ছেন তারা। তাই আরো কিছুদিন ধানকাটা চলবে হাওরে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। হাওরাঞ্চলে ছয় শতাধিক হারভেস্টার মেশিন যুক্ত করায় ধানকাটার কাজে দুশ্চিন্তা কম কৃষকদের। কৃষকদের এসব যন্ত্র নামমাত্র দামে ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে কৃষিবিভাগ।

করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের নাহিরাজপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল কালাম বলেন, এবার আগাম জাতের ব্রি-২৮ ধান চাষ করে শতভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তিনি। ৩০ কাঠা জমিতে এ ধান চাষ করে কোনো ফসল ঘরে তুলতে পারেননি বলেও অভিযোগ করেন তিনি। ব্লাস্ট রোগ আর চিটায় জমির সব ধান নষ্ট হয়েছে তার। 

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আবুল কালাম বলেন, ‘অহন পুলাপাইনে কি খাওয়াইবাম, জমি বেঁচা ছাড়া আমার আর কিছু করার নাই। আমার সব ধান নষ্ট হইয়া গেছে।’ তার মতো এমন অনেক কৃষক ব্রি-২৮ ধান চাষ করে এবছর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

কৃষি বিভাগ বলছে, সার্বিকভাবে উৎপাদন ভালো হওয়ায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন চাষিরা। বাজারে ধানের দাম কম থাকায় অনেক কৃষকের মধ্যে হতাশা রয়েছে। বাজারে চালের দাম বেশি থাকলেও সেই অনুপাতে বাড়েনি ধানের দাম। বর্তমানে কাঁচাধান বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা মণ দরে। ডিজেল-সারসহ কৃষি উপকরণের দামবেশি থাকায়, ধানচাষে খরচ হয়েছে বেশি। ন্যায্যমূল্য না পেলে ধান চাষে আগ্রহ হারাবে চাষিরা। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুস সাত্তার বলেন, এবার পুরো জেলায় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। এর মধ্যে হাওরেই ধান চাষ হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৭১৫ হেক্টর জমিতে। যা থেকে উৎপাদন হবে ১৪ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি চাল। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৬৫ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। এবার মাঠে মাঠে ধানকাটার যন্ত্র থাকায় শ্রমিকের অভাব অনেকটাই বুঝতে পারেনি কৃষক। কম খরচ ও সময়ে কৃষকরা তাদের ধান ঘরে তুলতে পারছেন।

ব্রি-২৮ ধানের ক্ষতির বিষয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, কৃষকদের আমরা এ ধান চাষে নিরুৎসাহিত করছি। কারণ এ ধানটিতে রোগ আক্রান্ত হওয়ার প্রবনতা বেশি দেখা দেয়। তবে এ বছর যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আমরা তাদের একটা তালিকা তৈরি করে পাঠাচ্ছি। যদি সরকারিভাবে কোন প্রণোদনা দেয়, তাহলে হয়তো তারা কিছুটা হলেও ক্ষতি পোষাতে পারবেন।