সারা বাংলা

হবিগঞ্জে ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ধান উৎপাদনে বিপর্যয়

বোরো জমিতে খরার ক্ষতিকর প্রভাব ও সারের দাম বেড়ে যাওয়ার হতাশা কাটতে না কাটতে এবার ধানের ভেতরে চাল না হওয়ার দুশ্চিন্তায় ভুগছেন কৃষকরা। ব্রি-২৮ ও ২৯ জাত আবাদ করা জমির প্রায় ৪০ শতাংশ ধানের ভেতরে চাল না হওয়ায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন তারা। 

হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলার কয়েকটি হাওরের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এ কথা জানা গেছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় ১ লাখ ২২ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে এ বছর বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমি থেকে ৫ দশমিক ২ মেট্রিক টন হিসাবে এবার ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৩৯০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে কৃষি বিভাগ। তবে ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ধান আবাদ করা প্রান্তিক কৃষকরা জানিয়েছেন, গতবারের তুলনায় এবার বোরোর উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসবে। ফলে জমির বর্গা, সার, কীটনাশক ও অন্যান্য খরচ বাদে মুনাফার আশা ছেড়ে দিয়েছেন তারা। 

আজমিরীগঞ্জ উপজেলার হিলালপুর হাওরে নিজের জমিতে কাজ করছিলেন কৃষক ওয়ারিশ মিয়া। এ কৃষকের চেহারায় হতাশার ছাপ। ফলন কেমন হয়েছে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘গেল চৈত্র মাসে টানা কয়েকদিন তীব্র খরা ও গরম হাওয়া বয়ে গেছে। সে সময় ধান গাছগুলোর তেমন কোনো সমস্যা টের না পাওয়া গেলেও ধান বের হওয়ার পরে দেখা যাচ্ছে- এগুলো পুষ্ট হয়নি, প্রায় ৪০ শতাংশ ধানের ভেতরেই চাল নেই।’

ওয়ারিশ মিয়ার আবাদ করা মোট ৪০ বিঘা জমির অর্ধেকই ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ধান। গত বছর একই পরিমাণ জমি থেকে ৮০০ মণের বেশি ধান উৎপাদন হলেও এবার তা অর্ধেকে নেমে আসবে বলে জানান তিনি। 

আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পিরিজপুর, হিলালপুর, গুচ্ছগ্রাম ও নোয়াগাঁও হাওরে আরও কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা হলে তারাও একই সমস্যার কথা জানন।

বানিয়াচং উপজেলার জাতুকর্ণপাড়া চান্দের মহল্লার কৃষক তৌফিক মিয়া বলেন, এবার বোরো আবাদের শুরুতেই খড়া ও ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ধানে চিটা রোগের দেখা দেয়। সারের দাম বেড়ে যাওয়ার পর এখন ধান কেটে দেখা যাচ্ছে অর্ধেকেই চাল নেই। 

তিনি আরও জানান, এই একই সমস্যার মুখোমুখি জেলার অধিকাংশ কৃষক। ফলে এবার অধিকাংশ কৃষকদের লোকসান গুণতে হবে।

কৃষকরা জানান, বোরোর শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কয়েক দফায় পোকা-মাকড়ের আক্রমণ, তিন দফায় কীটনাশক প্রয়োগ, খরা, গরম হাওয়া এবং সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় ফলনে এমন বিপর্যয় ঘটেছে। একইসঙ্গে এতগুলো সমস্যা আগে কখনও মোকাবেলা করেননি তারা।

হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ধানে এবার ব্লাস্ট রোগসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। এজন্য এ ধান চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের আগাম জাতের অন্য নানা রকম ধান চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে জেলায় এবার কী পরিমাণ জমিতে ব্রি-২৮ ও ২৯ চাষ হয়েছে, তা তিনি বলতে পারেননি।