জাতীয়

নিবন্ধন নেই অনেক নৌযানের, বিভিন্ন সংস্থাকে চিঠি

রাষ্ট্র মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান/সংস্থার নিজস্ব নৌযান রয়েছে। কিন্তু একাধিকবার বলার পরও এসব নৌযানের নিবন্ধন ও সার্ভে (ফিটনেস পরীক্ষা) নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না  প্রতিষ্ঠানগুলো। সম্প্রতি নৌপরিবহন অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন সংস্থার প্রধানকে অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী নৌযানগুলোর নিবন্ধন সনদ নিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

চিঠি দেওয়া হয়েছে পুলিশ মহাপরিদর্শক, মহাপরিচালক বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, মহাপরিচালক বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, মহাপরিচালক র‍্যাব, মহাপরিচালক বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি, চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, চেয়ারম্যান মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, চেয়ারম্যান বিআইডব্লিউটিসি, চেয়ারম্যান বিআইডব্লিউটিএ, মহাপরিচালক ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর, মহাপরিচালক বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, ডিআইজি নৌপুলিশ, প্রধান প্রকৌশলী, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনকে।

চিঠিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী অনিবন্ধিত ও ফিটনেসবিহীন নৌযান চলাচল বন্ধে নৌপরিবহন অধিদপ্তরর দেশব্যাপী অনিবন্ধিত নৌযানগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনার জন্য কাজ করছে। ফলে বেসরকারি অধিকাংশ নৌযান নিবন্ধনের আওতায় আসছে। কিন্তু সম্প্রতি কিছু নৌ-দুর্ঘটনায় কিছু কিছু নৌযানের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এছাড়াও সম্প্রতি পদ্মা সেতুতে নৌযানের ধাক্কা লাগায় ফেরি দুর্ঘটনায় নৌযানের ফিটনেসের বিষয়টি উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করা হয়। এসব সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নৌযানগুলোর নিবন্ধন নিতে অনুরোধ করা হলো।

এতে আরও বলা হয়, অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল অধ্যাদেশ- ১৯৭৬ এর ৩ (১) ধারা অনুযায়ী কেবল সামরিক বাহিনীর নৌযান ছাড়া উপযুক্ত সব নৌযানকে নিবন্ধন ও হালনাগাদ সার্ভে সনদ সহযোগে নৌযান পরিচালনা করতে হবে। ১৬ বিএইচপি ইঞ্জিন ক্ষমতাসম্পন্ন নৌযান, ড্রেজার, স্পিডবোট ইত্যাদিসহ সব নৌযান নিবন্ধনের জন্য বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নিরাপদ নৌপথ নিশ্চিত করা এবং জনস্বার্থ নিশ্চিত করতে আইনানুগ পদ্ধতি ব্যতিরেকে নৌযান পরিচালনার সুযোগ নেই। ফিটনেসবিহীন নৌযান পরিচালনার ফলে দুর্ঘটনায় পতিত হলে উক্ত নৌযানের সংশ্লিষ্ট মালিক, মাস্টার, ড্রাইভারসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল অধ্যাদেশ, ১৯৭৬ এর ধারা ৩৩ অনুযায়ী হালনাগাদ সার্ভে সনদ ব্যতীত নৌযান পরিচালনা শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ। উক্ত আইনের ধারা ৬১ অনুযায়ী সনদ ব্যতীত নৌযান পরিচালনার দায়ে উক্ত নৌযানের মালিক ও মাস্টারকে দোষী সাব্যস্ত করে জেল- জরিমানার বিধান রয়েছে। এছাড়াও আইনি বাধ্যবাধকতার প্রতি অবহেলা প্রদর্শন ও ক্রমাগত আইনভঙ্গ করে নৌযান পরিচালনা অসদাচরণে শামিল যা অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল অধ্যাদেশ, ১৯৭৬ এর ৭০ ধারা মোতাবেক জামিন অযোগ্য অপরাধ।

নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মো. নিজামুল হক বলেন, আমরা অভ্যন্তরীণ নৌযানের সেফটি নিশ্চিতে কাজ করছি। এজন্য দেশে সব সরকারি ও বেসরকারি নৌযানের নিবন্ধন নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছি। এ বিষয়ে সরকারি সংস্থার প্রধানদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।  সামরিক বাহিনীর এবং কমিশন পাওয়া নৌযান ছাড়া সব নৌযানের নিবন্ধন ও সার্ভের জন্য কাজ করছে।

নৌপরিবহন অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন,   সরকারি বিভিন্র সংস্থার নিজস্ব নৌযান থাকলেও নিবন্ধন বা সার্ভে করা হয়নি। তাদের আগ্রহ নেই। এ কারণে নৌযানের সার্ভে সনদ নেওয়ার জন্য সরকারি সংস্থাগুলো চিঠি দিয়েছে নৌপরিবহন অধিদপ্তর।

নাম প্রকাশ না নৌপরিবহন মন্ত্রণালযের একজন কর্মকর্তা বলেন, বারবার চিঠি দেওয়ার পরেও নৌযানের নিবন্ধন নিচ্ছে না বিভিন্ন সরকারি সংস্থা। ফলে বাড়ছে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল। এ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান  বিআইডব্লিউটিএর ২ হাজার নৌযান রয়েছে। যা নিয়মিত সার্ভে করা নেওয়া হয় না।  এছাড়া রয়েছে ড্রেজার, টাগ, ক্রেনবোট, স্পিডবোট, বার্জ, পন্টুনসহ সার্ভে শিপ। এগুলোর করানো হয়নি সার্ভে। তবে পদ্মা সেতুতে ধাক্কা লাগার পরে ফেরিগুলোর সার্ভে করাচ্ছে।

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নৌযানের নিবন্ধন ও সার্ভের বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সরকারি ও বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের জন্য এক আইন। তবে আগের থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানের নৌযান নিবন্ধন ও সার্ভে করার প্রবণতা বাড়ছে। বিভিন্ন সংস্থা প্রধানের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। পাশাপাশি নিবন্ধনের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি দ্রুত সরকারি সংস্থার অনিবন্ধিত নৌযান নিবন্ধন ও নিয়মিত সার্ভে করবে।