ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) সোমবার রাতে মুখোমুখি হয়েছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্ট। ম্যাচে লক্ষ্ণৌকে ১৮ রানে হারায় ব্যাঙ্গালুরু। এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিল। আসল রোমাঞ্চটা তখনো বাকি, সেটা দেখা গেল ম্যাচ শেষে। রোমাঞ্চ ও উত্তেজনার পারদের সবটুকু নিংড়ে দিলেন ভারতের বর্তমান ও সাবেক দুই ক্রিকেটার বিরাট কোহলি ও গৌতম গাম্ভীর।
ঘটনার সূত্রাপাত ম্যাচ শেষে হাত মেলানোর সময়। ম্যাচে লক্ষ্ণৌর আফগান ক্রিকেটার নাভীন উল হকের উইকেট সেলিব্রেশন করতে গিয়ে একটু বেশিই আগ্রাসী উদযাপন করেছেন কোহলি। ম্যাচ শেষে বোধহয় সেটার জের ধরেই নাভিন কোহলিকে কিছু একটা বলতেই কোহলিও পাল্টা জবাব দিলে শুরু হয়ে যায় কথার লড়াই, তুমুল বাকবিতণ্ডা।
ব্যাপারটা দৃষ্টিগোচর হতেই আগুনে ঘি ঢেলে দেন লক্ষ্ণৌর মেন্টর গৌতম গাম্ভীর। কোহলির উদ্দেশ্য চিৎকার করে কিছু একটা বলেন সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার। একপর্যায়ে সেটা রূপ নেয় মুখোমুখি কথার লড়াইয়ে। ব্যস! তাতেই ফিরে আসে এক দশক আগের কোহলি-গাম্ভীর পুরনো লড়াই!
কোহলি-গাম্ভীর দু’জনই দিল্লীর ক্রিকেটার। তবে একই শহর থেকে উঠে আসলেও দু’জনের মাঝে তেমন সখ্যতা কিংবা মেলামেশা নেই বললেই চলে। কোহলি-গাম্ভীরের মাঝে শেষ সখ্যতার উপলক্ষ্য বলতে একটা ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরষ্কার।
ওয়ানডেতে কোহলির অভিষেক সেঞ্চুরির দিনে অপরাজিত ১৫০ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন গাম্ভীর। তবে পুরষ্কারটা নিজে না নিয়ে তরুণ কোহলিকে দিয়ে দেন সাবেক এই ক্রিকেটার। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে শ্রীলঙ্কার ৩১৫ রান তাড়া করতে নেমে ১০৭ রান করেছিলেন কোহলি।
এরপরের গল্পটুকু দা-কুমড়ো কিংবা সাপে-নেউলের সঙ্গেও তুলনা করা যায়। যার শুরুটা ২০১৩ সালের আইপিএলে।
এক দশক আগে ২০১৩ সালে প্রথমবার প্রকাশ্যে এসেছিল দু’জনের দ্বন্দের বিষয়টি। কলকাতা নাইট রাইডার্স ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর মধ্যকার ম্যাচে বেঙ্গালুরুর ইনিংসের সময় প্রচণ্ড বিবাদে জড়িয়ে পড়েন দু’জন, কথা কাটাকাটি হয়। সতীর্থরা এগিয়ে এসে দু’জনকে নিভৃত করেন।
ঘটনা সেখানেই শেষ হলে ব্যাপারটা সাময়িকই ধরে নেয়া যেত। তবে দ্বিতীয়বার যখন একই ঘটনা ঘটলো, তখনই সবাই ধরে নিয়েছিল এই দ্বন্দ্ব থামবার নয়। দ্বিতীয়বার ২০১৬ সালে আবারও দ্বন্দ্বে জড়ান দু’জন। ইডেন গার্ডেনে সেই ম্যাচে ননস্ট্রাইকে থাকা কোহলির দিকে বল ছুঁড়ে মারেন গাম্ভীর। যেটা নিয়ে দু’জনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়।
গাম্ভীর ক্রিকেট ছেড়েছেন বছর সাতেক হলো। গাম্ভীরের ক্রিকেট থেকে অবসরের পেছনেও দু’জনের দ্বন্দ্বের প্রভাব আছে বলে অনেকেরই ধারণা। রঙ্গিন পোশাকে ওপেনিংয়ে শিখর ধাওয়ান এবং রোহিত শর্মার উত্থান গাম্ভীরকে সীমিত সংস্করণ থেকে ছিটকে দিয়েছিল আগেই। বাকি ছিল টেস্ট। কোহলি ভারতীয় টেস্ট দলের অধিনায়ক হওয়ার পরই মূলত সাদা পোশাকেও উপেক্ষিত হতে শুরু করেন গাম্ভীর।
একে তো পুরনো দ্বন্দ্ব, তার উপর গাম্ভীরের ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়া এবং ক্রিকেট থেকেই অবসর; সব মিলিয়ে আর কখনোই এই দুজনের সুসম্পর্কের কথা শোনা যায়নি। খেলা শেষে ধারাভাষ্যকার ও বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করার সময়ও নানাভাবে কোহলির তীব্র সমালোচনা করেন গাম্ভীর।
সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। কেটে গেছে এক দশক। খেলোয়াড়ের পাঠ চুকিয়ে গাম্ভীর কাজ করছেন ধারাভাষ্যকর ও মেন্টর হিসেবে। অন্যদিকে কোহলি খেলা চালিয়ে গেলেও ছেড়েছেন অধিনায়কত্বের ভার। অথচ সম্পর্ক রয়ে গেছে সেই আগের মতোই, দ্বন্দ্বটা রয়ে গেছে চিরকালীন। গ্রীষ্মের উত্তাপে সূর্যের মতো কোহলি-গাম্ভীর দ্বন্দ্বও উত্তাপ ছড়াচ্ছে ক্রিকেটপাড়া ও অলিগলিতে।