সারা বাংলা

কেসিসি নির্বাচন: দল নেই, মাঠে আছেন ‘ওরা ১২ জন’

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। কিন্তু দল না থাকলেও এ দুটি দলের ১২ জন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন। চালাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা। তবে দলীয় নয়, স্বতন্ত্র পরিচয়ে আছেন তারা। এর মধ্যে বর্তমান ও সাবেক কাউন্সিলরও রয়েছেন কয়েকজন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির সাবেক ও বর্তমান কাউন্সিলরদের মধ্যে ৭ জন নির্বাচন করছেন। তারা হলেন ৫নং ওয়ার্ডে মহানগর বিএনপির সদস্য সাজ্জাদ আহসান তোতন, ৯নং ওয়ার্ডে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা কাজী ফজলুল কবির টিটো, ১৯নং ওয়ার্ডে ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক আশফাকুর রহমান কাকন, ২২নং ওয়ার্ডে মাহাবুব কায়সার, ২৪নং ওয়ার্ডে ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি শমসের আলী মিন্টু, ৩০নং ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর আমান উল্লাহ আমান এবং সংরক্ষিত ৯নং ওয়ার্ডের মাজেদা বেগম। দলের মধ্যে পদ-পদবী না থাকার কারণে অনেকের বহিষ্কার নিয়ে দোটানায় পড়েছে দলটির নেতারা।

তবে শমসের আলী মিন্টু প্রার্থিতা অবৈধ ঘোষণা করেছেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী। বাতিল হওয়া প্রার্থিতা ফিরে পেতে উচ্চ আদালতে গিয়েছেন মো. শমশের আলী মিন্টু।

সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিএনপির প্রার্থীদের সরানো যাচ্ছে না। কেন্দ্র থেকেও অনেকটা এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে৷ 

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না, এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের এই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কেসিসি নির্বাচনে বিএনপির যারা কাউন্সিলর পদে অংশ নিচ্ছেন, তাদের সবাইকে আজীবন বহিষ্কারের সুপারিশ করে কেন্দ্রে তালিকা ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে। 

অপরদিকে, নগরীর ১নম্বর ওয়ার্ডে দৌলতপুর থানা জামায়াতের নায়েবে আমির আজিজুর রহমান স্বপন, ১২নম্বরে মহানগর জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমির মাস্টার শফিকুল আলম, ১৮নম্বরে ওয়ার্ড আমির মশিউর রহমান রমজান, ১৯নম্বরে সোনাডাঙ্গা থানা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম পান্না এবং ৩১নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে মশিউর রহমান রমজান বাদে অন্য চারজন ২০১৩ ও ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল ২০১৩ সালে ৩১নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। আর ২০০৮ সালের নির্বাচনে নগরীর ৪ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জামায়াতের দুই নেতা কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল বলেন, ‘দলীয় ব্যানারে বা দলীয় পরিচয় নির্বাচন করছি না। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছি। এর আগে আমি ৩১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলাম। এলাকাবাসীর চাহিদা অনুযায়ী এবারও প্রার্থী হয়েছি। আমি ছাড়াও  ১, ১২, ১৮, ১৯ চারটি ওয়ার্ডে দলের নেতারা স্বতন্ত্র পরিচয় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। যেখানে দলীয় কোনো সাপোর্ট নেই।’ 

বিএনপি-জামায়াত নেতাদের ভোটে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের কেসিসি মেয়র নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির আহবায়ক মফিদুল ইসলাম টুটুল বলেন, বিএনপি-জামায়াতের মুখের ও মনের কথা এক নয়। খুলনায় ঘোমটা পরে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তাদের অনেক নেতাকর্মী। গণতন্ত্রের স্বার্থে তাদের প্রকাশ্যে দলীয় ব্যানারে এসে নির্বাচন করা উচিত।

কেসিসি নির্বাচনের মেয়র পদে চার জন প্রার্থী হয়েছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক (নৌকা), জাপার শফিকুল ইসলাম মধু (লাঙল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আব্দুল আউয়াল (হাতপাখা) ও জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন (গোলাপ ফুল) প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।

এবারের সিটি নির্বাচনে ৩১টি ওয়ার্ডের ১৩৬ সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডে ৩৯ জন প্রার্থী হয়েছেন। আগামী ১২ জুন ৩১টি ওয়ার্ডে ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬ জন ও পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ জন। ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে ২৮৯টি কেন্দ্র ও ১ হাজার ৭৩২টি ভোটকক্ষের সামনে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।