রাইজিংবিডি স্পেশাল

তামাক নিয়ন্ত্রণ ঘোষণায় সর্ষের ভূত ‘ডিএসএ’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সুধীসমাজ, তামাকবিরোধী বিভিন্ন সংগঠন ও অধিকাংশ সংসদ সদস্যের প্রচেষ্টা এবং সর্বোপরি ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি হওয়ায় তামাক চাষ ও এর ব্যবহার কিছুটা কমেছে। কিন্তু, প্রতিনিয়ত তামাক কোম্পানিগুলোর চতুরতা এবং নিয়ম-নীতিকে ফাঁকি দেওয়ার মানসিকতার কারণে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম সফল হচ্ছে না। এরকম একটি বিষয় হলো—ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা বা ডেজিগনেটেড স্মোকিং এরিয়া (ডিএসএ)। ‘স্মোকিং জোন’ হিসেবে এটি বহুল পরিচিত। বিষয়টি অনেকটা তামাক নিয়ন্ত্রণ ঘোষণায় সর্ষের ভূতে পরিণত হয়েছে। 

ধূমপায়ীদের কারণে যাতে অধূমপায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন, তাই আইনে ডিএসএ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু, বাস্তবতা হচ্ছে বিধানটি প্রায় শতভাগ অকার্যকর। পরিপূর্ণভাবে আইন মেনে রাজধানীসহ দেশের কোথাও ডিএসএ নেই। এতে ব্যাপকভাবে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন অধূমপায়ীরা। পাশাপাশি ডিএসএ’র অজুহাতে সমান হারেই ধূমপান করা হচ্ছে প্রতিটি জায়গায়। 

এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, ডিএসএ রেখে তামাক নিয়ন্ত্রণ বা তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়া কতটা সম্ভব? 

ডিএসএ’র বাস্তব চিত্র হতাশাজনক: গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপানের নির্ধারিত এলাকাগুলোতে পরিপূর্ণ আইন মানা হয় না। ঢাকা শহরের ১১৮টি আবাসিক হোটেল ও ৩৫৫টি রেস্টুরেন্ট এবং ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ৫৩টি ট্রেনের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, মোট ৫২৬টি গবেষিত ভেন্যুর মধ্যে মাত্র ৪১টিতে (৮ ভাগ) ডিএসএ পাওয়া গেছে, যার একটিতেও পরিপূর্ণভাবে আইন মেনে ডিএসএ রাখা হয়নি। জনস্ হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথ এবং গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) যৌথভাবে ‘প্রিভেলেন্স অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স অব ডেজিগনেটেড স্মোকিং এরিয়াস (ডিএসএ) ইন হসপিটালিটি ভেন্যুস অ্যান্ড ট্রান্সপোর্টেশন ইন ঢাকা, বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ গবেষণা করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ১১৮টি আবাসিক হোটেলের মধ্যে মাত্র ১৮টিতে ডিএসএ পাওয়া গেছে। ৭টি হোটেলের ডিএসএ ধূমপানমুক্ত এলাকা থেকে আলাদা নয় এবং ৭টিতে সেবাদানের জন্য কর্মীদের ডিএসএ অতিক্রম করতে হয়। উল্লেখ্য, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকাকে (ডিএসএ) ধূমপানমুক্ত এলাকা থেকে পৃথক রাখার বিধান আছে। আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও ১৭টি হোটেলের ডিএসএ’তে সতর্কতামূলক নোটিস প্রদর্শন করা হয়নি।

গবেষণায় ৫৩টি ট্রেনের ২১টিতে ডিএসএ পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ৭টিতে বিভিন্ন খাবার ও পানীয় বিক্রি হওয়ায় অধূমপায়ীদের পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হওয়ার সুযোগ আছে। ডিএসএ থাকা ২১টি ট্রেনের কোনোটিতেই ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা বা ডিএসএ সংক্রান্ত কোনো নোটিস দেখা যায়নি। অর্থাৎ ১টি ট্রেনেও পরিপূর্ণভাবে আইন মেনে ডিএসএ রাখা হয়নি। ৩৫৫টি রেস্টুরেন্ট এর মধ্যে মাত্র ২টিতে ডিএসএ পাওয়া গেছে এবং কোনটিতেই এ সংক্রান্ত আইন পরিপূর্ণভাবে মানা হয়নি।

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির হিসাব মতে, বাংলাদেশে প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি রেস্তোরাঁ আছে। আর গ্যাটস ২০১৭ এর তথ্য মতে, ৫০ শতাংশ মানুষ রেস্তোরাঁয় পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়। এছাড়া, হসপিটালিটি সেক্টরের অন্যান্য ক্ষেত্রেও অধূমপায়ীরা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়। অন্যদিকে, তামাক কোম্পানি বিভিন্ন রেস্তোঁরা, হোটেল, রিসোর্টে প্রচার-প্রচারণা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তামাকজাত পণ্য প্রদর্শন করছে। 

আইনে কী আছে: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (এফসিটিসি) ধারা ৮ এর গাইডলাইন অনুযায়ী, পরোক্ষ ধূমপানের শিকার থেকে অধূমপায়ীদের রক্ষায় ‘পূর্ণাঙ্গ ধূমপানমুক্ত নীতিমালা’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা আছে। 

পরোক্ষ ধূমপানজনিত ক্ষতি থেকে অধূমপায়ীদের রক্ষার্থে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩)-এ ‘পাবলিক প্লেস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস, আধা-সরকারি অফিস, স্বায়ত্তশাসিত অফিস ও বেসরকারি অফিস, গ্রন্থাগার, লিফট, আচ্ছাদিত কর্মক্ষেত্র (ইনডোর ওয়ার্ক প্লেস), হাসপাতাল ও ক্লিনিক ভবন, আদালত ভবন, বিমানবন্দর ভবন, সমুদ্রবন্দর ভবন, নৌ-বন্দর ভবন, রেলওয়ে স্টেশন ভবন, বাস টার্নিমাল ভবন, প্রেক্ষাগৃহ, প্রদর্শনী কেন্দ্র, থিয়েটার হল, বিপণী ভবন, চতুর্দিকে দেয়াল দ্বারা আবদ্ধ রেস্টুরেন্ট, পাবলিক টয়লেট, শিশুপার্ক, মেলা বা পাবলিক পরিবহনে আরোহণের জন্য যাত্রীদের অপেক্ষার জন্য নির্দিষ্ট সারি, জনসাধারণ কর্তৃক সম্মিলিতভাবে ব্যবহার্য অন্য কোনো স্থান অথবা সরকার বা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক, সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দ্বারা, সময় সময় ঘোষিত অন্য যেকোনো বা সকল স্থান। এসব স্থানে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এই আইনে পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষিদ্ধ করলেও ওসব এলাকায় ‘ধূমপান এলাকা’ রাখার বিধান করা হয়েছে। ‘ধূমপান এলাকা’ হিসেবে আইনে বলা হয়েছে, কোনো পাবলিক প্লেস বা পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্দিষ্ট করা কোনো এলাকাই হলো ‘ধূমপান এলাকা’।

ডিএসএ কেন অকার্যকর:  বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা (ডিএসএ) কোনোভাবেই অধূমপায়ীদের পরোক্ষ ধূমপানের ছোঁবল থেকে সুরক্ষা দিতে পারে না। বরং বিষয়টি অধূমপায়ীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিরাট হুমকি। এমনকি এই বিধান চালু রেখে ধূমপানমুক্ত আইন বা নীতির সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। 

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ অনুযায়ী চতুর্দিকে দেয়াল দিয়ে আবদ্ধ রেস্টুরেন্টসহ অধিকাংশ আচ্ছাদিত পাবলিক প্লেস এবং কর্মক্ষেত্রে ধূমপান নিষিদ্ধ। তবে, মাত্র কয়েকটি স্থান ছাড়া বেশিরভাগ পাবলিক প্লেস এবং একাধিক কামরাবিশিষ্ট পাবলিক পরিবহনে (ট্রেন, স্টিমার) ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ রাখার সুযোগ আছে। ফলে, অধূমপায়ীদের পাশাপাশি এসব স্থানের সেবাদান করা কর্মীরাও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। তাই, বিদ্যমান আইনটি পরোক্ষ ধূমপান থেকে অধূমপায়ীদের রক্ষায় ভূমিকা রাখছে না। অসংখ্য গবেষণায় এটি স্বীকৃত যে, আচ্ছাদিত ধূমপান এলাকার আশপাশের স্থানসমূহ কখনো ধোঁয়ামুক্ত হয় না। 

সাধারণত, রেস্টুরেন্টের ভেতরেই ধূমপানের জন্য একটি ‘নির্ধারিত স্থান’ হিসেবে একটি আবদ্ধ কক্ষ রাখা হয়। তবে ধূমপানের জন্য স্থানটি নির্ধারিত হলেও ধূমপানের ধোঁয়া ও গন্ধ পুরো রেস্টুরেন্ট জুড়েই পাওয়া যায়। কারণ, যখনই কেউ সেই কক্ষে প্রবেশ করেন বা বের হন, তার সঙ্গে ধূমপানের ধোঁয়া ও গন্ধও বের হয়। আবার, ধূমপান করার জন্য নির্দিষ্ট স্থানটি পুরোপুরি সুরক্ষিতও থাকে না। ফলে, ধূমপানের ধোঁয়া ধূমপান মুক্ত এলাকাতেও চলে যায়। যার ফলে অন্যরাও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। বিষয়টি অধূমপায়ীদের জন্য অস্বস্তিকরও। 

আবার, আইনে থাকা ডিএসএ নিয়েও বিভ্রান্তি এবং ছলচাতুরি আছে। এক কক্ষ বিশিষ্ট ভবন বা রেস্টুরেন্টে ডিএসএ রাখার কোনো নিয়ম নেই। আইনে একাধিক কক্ষের কথা বলা আছে। কিন্তু, অধিকাংশক্ষেত্রে এই নিয়ম সচেতনভাবেই লঙ্ঘন করা হচ্ছে। ২০১৩ সালে সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে রেস্তোরাঁকে পাবলিক প্লেস হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু, এক কক্ষ বিশিষ্ট নয়, এমন রেস্তোঁরাসহ হসপিটালিটি সেক্টরের অন্যান্য ক্ষেত্রে ডিএসএ রাখার বিধান রয়েছে। ফলে, সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছেন। এতে মানুষের বিভ্রান্তির সুযোগ নিয়ে সুযোগ-সন্ধানী রেস্টুরেস্ট মালিকরা তাদের রেস্টুরেন্টে ডিএসএ রাখেন। যা রেস্টুরেন্টে আগত অধূমপায়ীদের পরোক্ষ ক্ষতির মুখে ফেলছে। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব পাবলিক প্লেস ও পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বা ডিএসএ বাতিল করা গেলে পাবলিক প্লেস ও ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারকারীদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ৮৫ শতাংশ কমতে পারে। 

ডিএসএ ঘিরে আছে তামাক কোম্পানিগুলোর কূটকৌশল: তামাক কোম্পানিগুলো নগদ টাকা ও সরঞ্জামাদি দেওয়ার মাধ্যমে রেস্টুরেন্টগুলোতে ডিএসএ স্থাপনে উৎসাহিত করে থাকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ডিএসএ তৈরির জন্য তামাক কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে ডেকোরেশন করে দেওয়াসহ বিভিন্ন রকম অফার দেওয়া হয়। এসব ডেকোরেশনের নামে কৌশলে কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপনও করে থাকেন এসব স্থানে। বিভিন্ন সময়ে এরকম ডিএসএ তৈরি হয়, আবার তামাকবিরোধী সংগঠনগুলোর কারণে এগুলো সরিয়ে নেওয়াও হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বিদ্যমান আইনের দুর্বলতার কারণেই কোম্পানিগুলো এই কূটকৌশল অবলম্বনের সুযোগ পাচ্ছে। 

পরোক্ষ ধূমপানের স্বাস্থ্যগত প্রভাব এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি: গ্লোব্যাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) ২০১৭ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে আচ্ছাদিত কর্মস্থলে কাজ করেন এমন প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর ৪২ দশমিক ৭ শতাংশ (৮১ লাখ) পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়। প্রায় ২৪ শতাংশ (২ কোটি ৫০ লাখ) প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ গণপরিবহনে যাতায়াতের সময়, ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ রেস্তোরাঁয় এবং ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ চা-কফির স্টলে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়। সবচেয়ে ভয়াবহ তথ্য হলো, প্রায় ৩৯ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ (৪ কোটি ৮ লাখ) বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়। প্রতি বছর প্রায় ৬১ হাজার শিশু পরোক্ষ ধূমপানজনিত বিভিন্ন অসুখে ভোগে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, পরোক্ষ ধূমপানের কারণে পৃথিবীতে বছরে ১২ লাখ মানুষ অকালে মারা যান। তামাকের ধোঁয়ায় আছে সাত হাজার রাসায়নিক পদার্থ, যার মধ্যে ৭০টি ক্যান্সার সৃষ্টিকারী। ফুসফুস ক্যানসার, স্ট্রোক ও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ পরোক্ষ ধূমপান।  

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পরোক্ষ ধূমপানের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ মোট তামাকজনিত অর্থনৈতিক ক্ষতির প্রায় ১০ শতাংশ। বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি প্রকাশিত ‘ইকোনমিক কস্ট অব টোব্যাকো ইউজ ইন বাংলাদেশ: এ হেলথ কস্ট অ্যাপ্রোচ’ শীর্ষক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পরোক্ষ ধূমপানের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (এফসিটিসি) ধারা ৮ এর গাইডলাইন অনুযায়ী, পরোক্ষ ধূমপানের শিকার থেকে অধূমপায়ীদের রক্ষায় ‘পূর্ণাঙ্গ ধূমপানমুক্ত নীতিমালা’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা আছে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এফসিটিসির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০১৬ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের নির্দেশনা দিয়েছেন।

ইউএস সার্জন জেনারেল রিপোর্ট ২০১৪ অনুযায়ী, প্রায় ৯০ শতাংশ ধূমপায়ী ১৮ বছর বয়সের মধ্যে প্রথমবার ধূমপান করে এবং অল্প বয়সে তামাকপণ্যে আসক্ত হয়ে পড়লে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, যারা কিশোর বয়সে ধূমপানে আসক্ত হয়, তাদের অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা স্বাভাবিকের তুলনায় তিন গুণ বেশি, গাঁজায় (মারিজুয়ানা) আট গুণ এবং কোকেইনের ক্ষেত্রে ২২ গুণ বেশি।

বিশেষজ্ঞ মতামত: কানাডা, স্পেন, নেপালসহ বিশ্বের ৬৯টি দেশে পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত জায়গা নিষিদ্ধ করে আইন আছে। অথচ আমাদের দেশের আইনে পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা, চার দেয়ালে আবদ্ধ এক কক্ষ বিশিষ্ট নয় এমন রেস্টুরেন্ট, একাধিক কক্ষবিশিষ্ট গণপরিবহনে (ট্রেন, লঞ্চ) ও অযান্ত্রিক পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের স্থান রাখা যাবে। অথচ হওয়া উচিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারা ৭ সংশোধন করে সব ধরনের পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান নিষিদ্ধ করা এবং ধূমপানসহ যেকোনো ধরনের তামাক ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে রেস্টুরেন্টগুলোতে ধূমপানের জন্য নির্দিষ্ট স্থান রাখার বিধান বাতিল করলে জনস্বাস্থ্যর জন্য তা অশেষ উপকারী হবে বলেই সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, পরোক্ষ ধূমপানের অন্যতম কারণ হলো স্মোকিং জোন। এটি সম্পর্কে আমাদের আরও বেশি সচেতনতা জরুরি। কারণ, এতে করে অধূমপায়ীরাও ধূমপায়ীদের মতো ক্ষতির শিকার হয়। শুনেছি, কিছু হাসপাতালেও ধূমপানের জন্য ডিএসএ রাখা হয়েছে। একটি সরকারি হাসপাতালেও আছে, যা সরাসরি আইনের পরিপন্থী।

প্রজ্ঞা’র (প্রগতির জন্য জ্ঞান) নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, অধূমপায়ীদের সুরক্ষায় ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা’ কোনো ভূমিকা রাখছে না। এই বিধান অধূমপায়ীদের পরোক্ষ ধূমপান থেকে সুরক্ষা দিতে পারে না। হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং ট্রেনে ব্যাপকভাবে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন অধূমপায়ীরা। ডিএসএ বিলুপ্ত করার মাধ্যমেই কেবল শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব। 

তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হোসেন আলী খোন্দকার বলেন, যারা ধূমপান করে না, তাদের ক্ষতি করার কোনো অধিকার কারও নেই। ডিএসএ বাতিল করার জন্য বিভিন্ন সচেতন মহলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশেও ইতোমধ্যে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বাতিল করা হয়েছে। কিছু হোটেল মালিকও এটি বাতিল চায়। আইনে ডিএসএ রাখার বিধান থাকায় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আইন সংশোধন হলে এটি যেন বাতিল করা হয়।