সারা বাংলা

কক্সবাজারে বাজার রাঙিয়েছে ‘রাজা’

কক্সবাজারে কোরবানি পশুরহাট দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ‘রাজা।’ এর চাল-চলন, আচরণ ও বেশভূষায় যেন রাজকীয় ভাব। আকর্ষণ বাড়াতে এর গলায় পরিয়ে রাখা রয়েছে স্বর্ণের মতো লেইছ ফিতা। খামারের অন্যান্য বাছুরের চেয়ে ‘রাজার’ চলন আর অঙ্গভঙ্গি হলো অভিজাত্যের। তাই এর নাম ‘রাজা’ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মালিক তারেকুর রহমান।

কক্সবাজার সদর উপজেলার খরুলিয়া বাজার সংলগ্ন এলাকার ‘আরসিজি এগ্রো’ খামার। শফিকুর রহমান ও তারেকুর রহমান নামের দুই ভাই মিলে গড়ে তোলেন বিভিন্ন গৃহপালিত পশুর এ খামার। ৩ বছর আগে খামারে জন্ম নেয় ‘অস্ট্রেলিয়ার প্রিজিয়ান’ প্রজাতির ‘রাজা’। সারা বছরই বিক্রিযোগ্য পশু হাটে তোলা হলেও এবার কোরবানি ঈদ উপলক্ষে তাদের প্রধান আকর্ষণ ‘রাজা’।

রোববার (২৫ জুন) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিশাল আকার ও ওজনের রাজাকে দেখতে ভিড় করছেন ক্রেতাদের পাশাপাশি অনেক দর্শনার্থী। আসন্ন কোরবানি ঈদ উপলক্ষে বিক্রি করতে রাজার দাম হাঁকা হয়েছে ১২ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে কয়েকজন ক্রেতা ৮ লাখ টাকায় কিনতে রাজি হলেও তা ভরণ-পোষণ আর লালন-পালনের ব্যয়ের সঙ্গে সন্তোষজনক নয় বলে দাবি মালিকের। তবে সর্বশেষ ৯ লাখ টাকায় গরুটি বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছে মালিকপক্ষ।

খামার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জন্মের পর থেকে মালিক ও খামারের কর্মীদের বিশেষ আদর-যত্ন পেতে থাকে ‘রাজা’। গরম থেকে রেহায় পেতে এর জন্য ব্যবস্থা করা হয় বৈদ্যুতিক পাখার। প্রতিদিন সাবান ও স্যাম্পু দিয়ে নিয়মিত গোসল করা হয়। আর খারার হিসেবে প্রতিদিন ৫ বেলা দেওয়া হয় সবুজ ঘাস, খৈল, খুঁড়া ও বিশেষ ধরণের ভূষি। এতে খাবার ও বিশেষ আদর-যত্ন বাবদ প্রতিদিন খরচ পড়ে ১ হাজার ২০০ টাকার বেশি। পাশাপাশি নিয়মিত নজর রাখা হয় রাজার শারীরিক অবস্থার প্রতি। এতে জন্মের তিন বছরে রাজার আকার হয় সাড়ে ৮ ফুট লম্বা ও সাড়ে ৫ ফুট উচ্চতা। এছাড়া ওজনে অন্তত ২৫ মণের বেশি।

এদিকে রাজাকে একনজর দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন ক্রেতাদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরাও। 

খুরুলিয়া বাজারপাড়া থেকে রাজাকে দেখতে আসা দর্শনার্থী জাহাঙ্গীর আলম শামস্ বলেন, ‘আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিশাল আকারের গরু বাজারে তুলছে এমন খবরে একনজরে দেখতে ছুটে আসি। এখানে এসে জানতে পারলাম গরুটির নাম ‘রাজা’ রাখা হয়েছে। আকার, ওজন ও চলনে গরুটিকে দেখতে রাজার মতোই লাগছে।’

দীর্ঘদিন ধরে পরম আদর-যত্নে লালিত পালিত রাজাকে এবারের কোরবানিতে বিক্রির কথা ভেবে আবেগ-আপ্লুত খামার মালিক ও কর্মীরা।

রাজার পরিচর্যাকারী মোহাম্মদ সালাম বলেন, ‘রাজার ছোট বয়স থেকে ওর সঙ্গে বন্ধুর মতো লেগে থাকতাম। অনেক আদর যত্নে ওকে বড় করেছি। রাজাকে সাবান দিয়ে গোসল করানো, গামছা দিয়ে গা মুছে দেওয়া, খাদ্য পরিবেশন করা থেকে শুরু করে সারাক্ষণ এর দেখভাল করতাম। টাকার প্রয়োজন হয়েছে বলে একে বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। রাজাকে বিদায় দেওয়ার ব্যাপারটা আমার কাছে অনেক কষ্টের।’

স্বত্ত্বাধিকারী তারেকুর রহমান বলেন, ‘গত ৩ বছরে রাজা লালন-পালন করতে যে ব্যয় হয়েছে, তাতে ক্রেতাদের হাকানো দামে বিক্রি সম্ভব নয়। ন্যূনতম ৯ লাখ টাকা পেলে বিক্রি করবো।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যমতে, এবারে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে কক্সবাজার জেলার বাইর থেকে পশু আনার প্রয়োজন নেই। জেলার খামার ও বিভিন্ন কৃষকের ঘরে কোরবানিযোগ্য পশু মজুদ রয়েছে ১ লাখ ৫১ হাজার ৬২২টি এবং চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার ৯২৩টি।