বর্ষার মৌসুমে পাহাড়ি অঞ্চলে পাহাড় ধসের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। প্রতি বর্ষায় পাহাড় ধসের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। গত ৫ বছরে বান্দরবানে পাহাড় ধসে ২১ জন নিহত হয়েছে।
এছাড়া ভারি বর্ষণে বৃষ্টির পানির স্রোতে কিছু পাহাড়ি রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় হয়ে ওঠে চলাচলের অনুপযোগী। গত ২ আগস্ট থেকে ভারি বর্ষণে বান্দরবানে দেখা দিয়েছে পাহাড় ধসের আশঙ্কা। এ আশঙ্কায় পৌরসভার মাইকিং করছে।
শুক্রবার (৪ আগস্ট) সকাল থেকে মাইকিং করে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে অনুরোধ করছে বান্দরবান পৌরসভা কতৃপক্ষ।
বান্দরবান আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক শুক্রবার (৪ আগস্ট) দুপুরে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বান্দরবানে ৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার পূর্ভাবাসে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে নিম্নলঘুচাপের কারণে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে কোথাও কোথাও মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বান্দরবানের মৃত্তিকা ও পানি সংরক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহাবুবুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) সকাল ৯টা পর্যন্ত ৩৫ মিলিমিটার এবং শুক্রবার (৪ আগস্ট) সকাল ৯টা পর্যন্ত ৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে। আরও দু-একদিন থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হতে পারে। অতিরিক্ত পাহাড় কাটার ফলে পাহাড়ে মাটির ওপরের রক্ষাস্তর সরে গিয়ে ভেতরের নরম অংশ বেরিয়ে আসে। এ অবস্থায় বর্ষার ভারি বর্ষণে পাহাড়ের ফাটলে পানি ঢুকে পাহাড় ধস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।
তথ্য অফিসের সূত্রে জানা য়ায়, গত ৫ বছরে বান্দরবানে পাহাড় ধসে ২১ জন নিহত হয়েছে তারমধ্যে ২০১৭ সালের বান্দরবান সদর কালাঘাটায় সাত জন, রুমায় পাঁচ জন; ২০১৮ সালের কালাঘাটায় এক জন, লামায় তিন জন; ২০১৯ সালে লামায় এক জন; ২০২০ সালে আলীকদমের মিরিঞ্জা এলাকায় এবং জন ও ২০২১ সালের সাইঙ্গ্যা ঝিরিতে একই পরিবারের তিন জন নিহত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা য়ায়, বান্দরবান সদর উপজেলার কালাঘাটা, কাসেমপাড়া, ইসলামপুর, বনরূপা পাড়া, হাফেজঘোনা, বাসস্টেশন এলাকা, স্টেডিয়াম এলাকা, নোয়াপাড়া, কসাইপাড়া; রুমা উপজেলার হোস্টেলপাড়া, রনিনপাড়া; লামা উপজেলার হরিনমারা, তেলুমিয়া পাড়া, ইসলামপুর, গজালিয়া, মুসলিম পাড়া, চেয়ারম্যানপাড়া, হরিণঝিড়ি, টিঅ্যান্ডটি এলাকা, সরই, রুপসীপাড়া; নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উত্তরপাড়া, বাইশফাঁড়ি, আমতলী, রেজু, তুমব্রু, হেডম্যানপাড়া, মনজয় পাড়া, দৌছড়ি, বাইশারীসহ সাতটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বসতি গড়ে তুলেছে ৩০ হাজারেরও অধিক পরিবার।
স্থানীয়রা বলেছেন, উন্নয়নের নামে শুষ্ক মৌসুমে নির্বিচারে পাহাড় কেটে সড়ক নির্মাণ, ঘর-বাড়ি নির্মাণ, বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ, সড়কে মাটি দেওয়া, নিম্নাঞ্চল ভরাটসহ অপরিকল্পিতভাবে ঝুঁকি নিয়ে গড়ে তোলা হয় বসতবাড়ি। ফলে মাটির রক্ষাস্তর নষ্ট হয়ে বর্ষায় টানা বৃষ্টিতে ধসে পড়ে পাহাড়।
বান্দরবান পৌরসভা বালাঘাটার এজাহার মিয়া, ঘোনা এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী আব্দুর রশিদ বলেন, ‘কম দামে পাহাড় থেকে জায়গা কিনেছি। ঝুঁকি আছে জেনেও পাহাড়ের নিচে একটু জায়গা সমান করে পরিবার নিয়ে কোনোরকমে বসবাস করছি।’
ইসলাম পুর এলাকার পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী ফাহমিদা বলেন, ‘এই ঘর ছাড়া আমাদের অন্য জায়গা নেই। তাই আমরা বাধ্য হয়েই এখানে বসবাস করছি।’
এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া আছে। পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে থাকা সকল বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে ইতোমধ্যে প্রতিটি উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ইউএনওকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করতে অত্র এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে।