সারা বাংলা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাপের কামড়ে মৃত্যু বাড়লেও নেই অ্যান্টিভেনাম

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর ও নাচোল উপজেলা সাপের কামড়ে মৃত্যু বাড়ছে। তবে দুই উপজেলায় নেই সাপের বিষের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিভেনাম। চাহিদাপত্র পাঠালেও পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিভেনাম পাওয়া যায় না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। 

সোমবার (৮ আগস্ট) গোমস্তাপুরে সাপের কামড়ে দুই শিক্ষকের মৃত্যুর পর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভেনামের মজুত বাড়ানোর দাবি উঠেছে।

বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর বা বিষ নিষ্ক্রিয় করতে পারে এমন উপাদানকে অ্যান্টিভেনাম বলা হয়। সাপের কামড়ের পরে দ্রুত অ্যান্টিভেনাম ইনজেকশন দিলে বিষ নিস্ক্রিয় হয়ে যায়। একজন রোগীকে ১০টি অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন দিতে হয়। ১০টি ভায়াল মিলে একটি ডোজ হয়ে থাকে। কার্যকারিতার উপর ভিত্তি করে অ্যান্টিভেনাম দুই রকমের হয়ে থাকে। একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির সাপের বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর অ্যান্টিভেনামকে মনোভ্যালেন্ট ও একাধিক প্রজাতির সাপের বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর অ্যান্টিভেনামকে পলিভ্যালেন্ট বলা হয়।

সোমবার (৭ আগস্ট) জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার জিনারপুরে সাপের কামড়ে দুই শিক্ষকের মৃত্যু হয়। এরা হলেন- রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বিষুপাড়ার জোবায়ের হোসেন ও নওগাঁর পোরশা উপজেলার কাশিদাঁড়ার রাশেদুল ইসলাম। রাতে ওই দুই শিক্ষককে সাপে কামড়ালে সকালে তাদের নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছানোর আগে মারা যান রাশেদুল। অপর শিক্ষককে দেওয়া হয় অ্যান্টিভেনাম।

নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুলতানা পাপিয়া জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি মাত্র অ্যান্টিভেনামের ডোজ ছিল। সাপে কাটা দুই রোগীর একজন আগেই মারা যান। তিনি জীবিত হাসপাতালে আসলে যে কোনো একজনকে অ্যান্টিভেনাম দেওয়া যেত। 

গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে অ্যান্টিভেনাম নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ জানান, জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভেনাম নেই। সোমবার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসনারা বেগম নামে সাপে কাটা রোগী আসেন। কিন্তু সরবরাহ না থাকায় তাকে অ্যান্টিভেনাম দেওয়া যায়নি। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

তিনি বলেন, ‘বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। আশা করছি খুব শিগগির অ্যান্টিভেনাম পাওয়া যাবে।’ 

দুই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, চাহিদাপত্র পাঠালেও পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিভেনাম পাওয়া যায় না। 

নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলায় সম্প্রতি সাপের উপদ্রব বেড়েছে। গত এক মাসের ব্যবধানে গোমস্তাপুরে সাপের কামড়ে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। এরপরই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভেনাম পর্যাপ্ত মজুতের দাবি উঠেছে।

বাংলাদেশ স্নেক রেসকিউ সেন্টারের কর্মী বোরহানুল ইসলাম রমন জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বরেন্দ্র অঞ্চলে সবচেয়ে উপদ্রব থাকে কমন ক্রেইট বা কালাচ সাপের। এরপর রয়েছে খৈয়া গোখরা এবং রাসেলস ভাইপার। বর্ষা মৌসুমে এ প্রজাতির সাপের উপদ্রব বেড়ে যায়। সাপে কামড়ালে ওঝা ও কবিরাজ না দেখিয়ে দ্রুত সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. এসএম মাহমুদুর রশিদ জানান, জেলার গোমস্তাপুর, নাচোল ও ভোলাহাট উপজেলায় অ্যান্টিভেনাম নেই। জেলা হাসপাতালে চার ও শিবগঞ্জে মাত্র এক ডোজ অ্যান্টিভেনাম আছে। ঢাকায় যোগাযোগ করা হয়েছে, আগামী ১২ তারিখের মধ্যে অ্যান্টিভেনাম সরবরাহ বাড়তে পারে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি জেলায় সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় অ্যান্টিভেনামের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অ্যান্টিভেনাম মজুদ কম রয়েছে। অ্যান্টিভেনামগুলো বিদেশ থেকে আসে, ফলে আসতেও দেরি হয়। আশা করা হচ্ছে, আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহের শুরুর দিকে জেলার উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরবরাহ করা হবে।

এই কয়েক দিনের মধ্যে হাসপাতালে যদি সাপে কাটা কোনো রোগী আসে, তাদের যেন খুব দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের ব্যবস্থ্যা করা হয়, সেজন্য সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে।