সারা বাংলা

সিরাজগঞ্জে ২ হাজার পরিবার পানিবন্দি

আসামে ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জের যমুনা, করতোয়া, ইছামতি, বড়াল, ফুলজোড়, হুড়াসাগর নদী ও চলনবিলাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রযেছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। জেলার সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুরের বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়া এসব এলাকার দুই হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

এদিকে, সিরাজগঞ্জ পয়েন্টের পর কাজিপুর পয়েন্টেও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে যমুনার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্লাবিত হয়েছে সিরাজগঞ্জের প্রায় ৪২টি ইউনিয়নের চরাঞ্চল। একই সঙ্গে তলিয়ে গেছে এসব অঞ্চলের আবাদি জমিও। বন্যা কবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট।

রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জে শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যমুনার পানি। একই সময় কাজীপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এই নদীটির পানি। নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে। তবে পরবর্তীতে উন্নতি লাভ করবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। এর ফলে ঘর-বাড়ি, কবরস্থান ও ফসলি জমিসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদীপাড়ের ভাঙন কবলিত মানুষ। এছাড়াও ইতোমধ্যে নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশের ফলে রোপণকৃত ধানের চারা ও বীজতলা তলিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলাউদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, যমুনায় পানি বৃদ্ধির কারণে কাজিপুর ও সদর উপজেলার ৪৪৫ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে রোপা আমন ২৮৫ হেক্টর, সবজি ৪৩ হেক্টর, আউশ ৪০ হেক্টর, বীজতলা ৩২ হেক্টর, কলা ৫ হেক্টর ও আখ ২৫ হেক্টর।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান বলেন, শনিবার পর্যন্ত জেলার ৪২টি ইউনিয়নে প্রায় ১ হাজার ৬৫৭টি পরিবার পানিবন্দি হওয়ার তথ্য ছিল। সেটা আজ বেঁড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজারে। প্রতিদিন পানিবন্দির সংখ্যা বাড়ছে। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৭৪০ মেট্রিক টন জি.আর চাল, ১৭ লাখ নগদ টাকা, দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, গো-খাদ্যের জন্য পাঁচ লাখ ও শিশু খাদ্যের জন্য দুই লাখ টাকা মজুত রয়েছে।

তিনি আরও জানান, পানিবন্দি পরিবারের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তালিকা অনুযায়ী বরাদ্দ পাওয়া সব কিছু বিতরণ করা হবে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রঞ্জিত কুমার সরকার বলেন, যমুনা নদীসহ জেলার ছোটবড় সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ধারণা করছি, পানি বৃদ্ধি পেলেও বড় ধরনের বন্যার সম্ভাবনা নেই। তবে আরও কয়েক দিন যমুনাসহ জেলার অন্যান্য নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহতের আশঙ্কা করছি।