ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে ট্রেনের কামরায় অসুস্থ হয়ে পড়া সেই গৃহবধূ এখন অনেকটাই সুস্থ আছেন। ট্রেন থেকে নামার পর তাকে স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি করার পর সেখান থেকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, ঠিকমতো খাবার গ্রহণ আর বিশ্রাম নিলে কিছু দিনের মধ্যে তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবেন। আর তার বিপদে পাশে দাঁড়ানো সেই চিকিৎসক ও নার্সদের নিজের বাড়িতে নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন ওই গৃহবধূ।
ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূর নাম মৌসুমী আক্তার (২৭)। তার স্বামীর নাম রবিউল আউয়াল। তিনি জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে ঢাকার মগবাজারে কর্মরত। রবিউল আউয়ালের বাড়ি দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার বেদবিঘী ইউনিয়নের শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামে। আর তার স্ত্রীর বাড়ি একই উপজেলার কাজীহাল ইউনিয়নের পুকুরী তালপাড়া গ্রামে।
রবিউল আউয়াল জানান, ২০২১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তারা ঢাকাতে থাকেন। তার স্ত্রী মৌসুমী চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। এটি ছিল তাদের প্রথম সন্তান। গত রোববার (০৩ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকার নয়াটোলা মাতৃসদন কেন্দ্রে গাইনী চিকিৎসককে দেখানোর পর আলট্রাসনোগ্রাফীতে পেটের বাচ্চা মৃত বলে জানতে পারেন তারা। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় দিনাজপুরে নিজ এলাকায় গিয়ে মৃত বাচ্চা প্রসব করানো হবে। সেইজন্য ওই দিন সন্ধ্যায় আন্তঃনগর চিলাহাটী এক্সপ্রেস ট্রেনে রওনা হন স্বামী-স্ত্রী।
আরও পড়ুন: মানবতার দৃষ্টান্ত গড়লেন ট্রেনের চিকিৎসক-যাত্রীরা
তারপর ট্রেনের মধ্যে ঘটে সেই অভূতপূর্ব ঘটনা। ট্রেনে মৌসুমীর রক্তপাত শুরু হয়। পরে ট্রেনে থাকা চিকিৎসক, নার্সের চেষ্টায় সেখানে মৃত সন্তান প্রসব করানো হয়। সকলের চেষ্টায় বেঁচে যান মৌসুমী। রবিউল আউয়াল বলেন, ফুলবাড়ী স্টেশনে নামার পর তার স্ত্রী মৌসুমীকে নিয়ে দিনাজপুর শহরের সিটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে সোমবার (০৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তাকে তার বাবার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে রয়েছেন। চিকিৎসক বলছেন, ঠিকমতো খাবার গ্রহণ ও কিছু দিন পরিপূর্ণ বিশ্রাম নিলে তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবেন। ভয়ের কিছু নেই।
পুরো ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে রবিউল আউয়াল বলেন, ‘আমি ওই সময় হতভম্ব হয়ে যায়। ট্রেন কর্তৃপক্ষ, ট্রেনের পুলিশ, বিশেষ করে ওই ডাক্তার সাহেব ও নার্সরা যেভাবে আমাদের পাশে দাঁড়ালেন, তা বলে শেষ করা যাবে না। তারা আমাকে সাহস দিয়েছেন। পাশে থেকে সহযোগিতা করেছেন। এ ঘটনা আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ডাক্তার, নার্সসহ সবার ঋণ শোধ হবার নয়। মানবিকতা বেঁচে থাক সবার মাঝে।’
জানতে চাইলে মৌসুমী আক্তার বলেন, ‘ওই সময় যে কী পরিস্থিতি হয়েছিল তা বলে বোঝানো যাবে না। ট্রেনের মধ্যে যখন আমার মৃত বাচ্চাটা প্রসব হলো, তখন মনে হলো নতুন করে জীবন পেলাম। আমি ডাক্তার, নার্সদের হাত ধরে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি। আল্লাহ মনে হয়, আমার জন্যই তাদের পাঠিয়েছিলেন।’
‘ডাক্তার, নার্স যারা ছিলেন, তাদের আমি আমার বাসায় একদিন নিমন্ত্রণ জানিয়েছি। তারা কখনও আসলে আমি খুব খুশি হবো।’— বলেন মৌসুমী।