সারা বাংলা

ক্ষুরা রোগে মারা যাচ্ছে গরু, দুশ্চিন্তায় খামারিরা

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় হঠাৎ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে গরুর ক্ষুরা রোগ। সম্প্রতি উপজেলার দুই ইউনিয়নে এই রোগে প্রচুর সংখ্যক গরু মারা গেছে বলে অভিযোগ করেছেন খামারি ও কৃষকরা। এছাড়া অসুস্থ হয়ে পড়েছে এলাকার বেশিরভাগ গবাদি পশু।

সংশ্লিষ্টরা জানান, উপজেলার বানা ইউনিয়নের গরানিয়া গ্রামে এক মাস আগে গরুর ক্ষুরা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সম্প্রতি ওই গ্রামে সাদিক ডেইরি ফার্মের তিনটি, সুলতান শেখের তিনটি, আজাদ শেখের চারটি ও কামাল মোল্যার তিনটি গরু ক্ষুরা রোগে মারা গেছে।   

স্থানীয় সাদিক ডেইরি ফার্মের মালিক দুলাল মিয়া বলেন, ‘আমার খামারের তিনটি গরুর বাছুর ক্ষুরা রোগে মারা গেছে। বর্তমানে খামারে থাকা বাকি গরু নিয়ে এখন দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। গরুকে ভ্যাকসিনসহ ওষুধ দিয়েছি। কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি। চোখের সামনে তিনটি গরুর বাছুর হারিয়েছি। অবশিষ্ট গরু বিক্রি করে দেওয়ার কথা ভাবছি।’ 

একই গ্রামের প্রবাসী কামাল মোল্যার স্ত্রী দিদারা জামান পিয়া জানান, তাদের খামারে ১০টি গরু ছিল। গত ১৫ দিনের ব্যবধানে তিনটি গরু ক্ষুরা রোগে মারা গেছে। মারা যাওয়ার এক মাস আগে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে লোক এসে ক্ষুরা রোগের ভ্যাকাসিন দিয়ে যায়। মারা যাওয়া তিনটি গরুর বাজার মূল্যে প্রায় ছয় লাখ টাকা। খামারে একটি গাভি অসুস্থ আছে। 

উপজেলার বুড়াইচ ইউনিয়নের একাধিক খামারি ও কৃষকের অনেক গরু মারা গেছে ক্ষুরা রোগে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

বুড়াইচ ইউনিয়নের শৈলমারী গ্রামের খামারি শরিফুল ইসলাম পলাশ জানান, তার দুইটি গরুসহ শৈলমারী গ্রামে একাধিক ব্যক্তির গরু ক্ষুরা রোগে আক্তান্ত হয়ে মারা গেছে। প্রত্যকটি গরুর খামারে ক্ষুরা রোগের ভ্যাকসিন দেওয়ার পরেও সংক্রমণ রোধ করা যাচ্ছে না। সরকারি ভ্যকাসিনের জন্য অফিসে গেলে আমাদের বলা হচ্ছে কোনো ভ্যাকসিন সরবরাহ নেই। অথচ অফিসের ড্রেসারের কাছে বাড়তি টাকায় মেলে ভ্যাকসিন। 

মিলন ডেইরি ফার্মের মালিক ও বুড়াইচ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মিলন জানান, তার খামারে ১৪টি গরুর মধ্যে গত সপ্তাহে একটি গরু ক্ষুরা রোগে মারা গেছে। বাকি গরুগুলো কয়েক দিন ধরে কোনো খাবার খাচ্ছে না। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের লোকজন এসে দেখে গেছে। সরকারি ভ্যাকসিনের জন্য অনেক বার অফিসে গেছি। কিন্তু কোনো ভ্যাকসিন মেলেনি। পরে বাজার থেকে ভ্যাকসিন কিনে আনতে হয়েছে। এখন গরু নিয়ে আমি মহাবিপদে রয়েছি। 

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, খামারিদের কিছু গরু মারা যাচ্ছে সঠিক চিকিৎসার অভাবে। অনেক খামার মালিক রয়েছেন তারা ভেটেনারি চিকিৎসক থেকে একটু বেশি বোঝেন। তারা নিজেদের অনেক বড় পশু চিকিৎসক ভাবেন। তারা নিজেদের গরুর চিকিৎসার পাশাপাশি অনেক খামার মালিকদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চিকিৎসার পরামর্শ প্রদান করেন। সেসব খামারিদের কথা শুনে অনেকেই ভুল চিকিৎসা দেন গবাদি পশুকে। এজন্য অনেক গবাদিপশু সঠিক চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে। অনেক খামারি গরু যখন মৃত্যুর মখোমুখি হয় তখনই প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। তখন ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত গরুকে ওষুধ ও ভ্যাকসিন দেওয়ার পরেও বাঁচানো সম্ভব হয় না। 

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ভবেন বাইন প্রশিক্ষণে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে ভেটেরিনারি সার্জন ডা. শওকত আলী জানান, এ রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। খামারিদের মধ্যে জনসচেতনা সৃষ্টি, উঠান বৈঠক ও মেডিকেল ক্যাম্প করে রোগ ও প্রতিকার সম্পর্কে অবগত করতে হবে। এ বছর ক্ষুরা রোগে মারা যাওয়া গরুর মধ্যে ৭০ শতাংশই বাছুর গরু।

ভ্যানসিন সরবরাহ সংকট দেখিয়ে বাইরে বাড়তি দামে বিক্রি করার বিষয়ে তিনি বলেন, এসব আমাদের জানা নেই। তথ্য প্রমাণ থাকলে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।