সারা বাংলা

খুলনার ডিসির সই জাল করে ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ, তদন্ত কমিটি গঠন 

খুলনা জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সই জাল করে সৈয়দপুর ট্রাস্ট এস্টেটের প্রায় ৪০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজস্ব বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সোহাইল আরমান (সোহেল আরমান) দুটি ব্যাংক থেকে ১১টি চেকে এ টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় শোকজের পরই আত্মগোপন করেন সোহেল। 

এদিকে, গত ৪ সেপ্টেম্বর বিষয়টি ধরা পড়লে ৫, ৯ ও ১১ সেপ্টেম্বর খুলনা সদর থানায় তিনটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। 

খুলনা জেলা প্রশাসন থেকে জানা গেছে, দানবীর হাজী মুহম্মদ মুহসীনের সব সম্পদ দিয়ে সৈয়দপুর ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক পদাধিকার বলে স্টেটের প্রধান। রাজস্ব বিভাগ ট্রাস্টের সম্পদ দেখাশোনা করে। এর অর্থ দিয়ে গরিব শিক্ষার্থীদের বৃত্তি, দুস্থদের সহযোগিতাসহ সেবামূলক কাজ করা হয়।

সূত্র জানায়, নগরীর এনআরবিসি ও ইসলামী ব্যাংকে ট্রাস্টের দুটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর ট্রাস্টের ব্যাংক হিসাব পরীক্ষণের সময় অসংগতি ধরা পড়ে। যাচাইয়ের পর সই জাল করে প্রায় ৪০ লাখ টাকা উত্তোলনের বিষয়টি ধরা পড়ে। ২০২২ সালের ৭ এপ্রিল থেকে গত ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১১টি চেকে এ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় সাধারণ ডায়েরির পাশাপাশি স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ইউসুফ আলীকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে এক সপ্তাহের মধ্যে।

খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুন বলেন, সরকারি অর্থ আত্মসাতের মামলা দুদকে করতে হয়। জেলা প্রশাসনের অভিযোগ, জিডি হিসেবে গ্রহণ করে দুদকে পাঠানো হয়েছে। 

দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, মামলা গ্রহণের জন্য প্রধান কার্যালয়ের অনুমতি নিতে হয়। খুব শিগগির অনুমতি চেয়ে চিঠি পাঠানো হবে।

জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসিন আরেফীন বলেন, শুধু তাঁর নয়, আগে যারা জেলা প্রশাসক ছিলেন তাদের সইও জাল করা হয়েছে। এ ঘটনায় আর কে বা কারা জড়িত, তদন্তে বেরিয়ে আসবে। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগের সংশ্লিষ্ট বিভাগের (ট্রেসার) দায়িত্বে রয়েছেন নাজির শাকুর। এ বিভাগের চেক বইসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ফাইলপত্র সংরক্ষণের দায়িত্ব তার। কিন্তু তিনি দায়িত্ব অবহেলা করে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি অফিস সহায়ক সোহেল আরমানকে দিয়েই সব কাজ করাতেন। আর এ সুযোগে সোহেল চেক নিয়ে জেলা প্রশাসকের সই জাল করে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেন। এমনকি ব্যাংক হিসেবেও তার নিজের মোবাইল নম্বর দেন তিনি।  এমনকি শাকুর ও সোহেল যোগসাজস করে সৈয়দপুর ট্রাস্ট এবং খান-এ-সবুর ট্রাস্ট্রের সম্পত্তি তদন্তের নামে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেন। 

এদিকে, ঘটনা ফাঁস হলে শোকজ করা হয় সোহেল ও শাকুরকে। কিন্তু সোহেল আত্মগোপন করেন। এমনকি তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে অফিস না করেই বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।