সারা বাংলা

বুড়িমারী স্থলবন্দরে ৫ দিন ধরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ 

লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে গত ৫ দিন ধরে ট্রাক থেকে পণ্য লোড-আনলোড বন্ধ রয়েছে। এর ফলে বন্দরে পণ্য খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে শত শত ট্রাক। এমনকি ভারতের সঙ্গে এই বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানিও বন্ধ হয়ে গেছে। এ ঘটনায় লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।

সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বুড়িমারী স্থলবন্দরে শত শত ট্রাক খালাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এতে স্থলবন্দরের ইয়ার্ড এবং মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে।

শ্রমিক লীগ বুড়িমারী স্থলবন্দর শাখার সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন বলেন, সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বুড়িমারী স্থলবন্দরের সব শ্রমিক ট্রাক থেকে পণ্য খালাস করবে না। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ রাখায় স্থলবন্দরের শেড, মাঠ ও সড়ক জুড়ে পণ্যবাহী গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। বন্দরের লোড-আনলোড শ্রমিকদের সারাদিন দলে বেধে বসে থাকতে দেখা যায়। 

শ্রমিকদের দাবি, মজুরির টাকা সর্দারের মাধ্যমে দিলে নেবেন না তারা। লেবার হ্যান্ডেলিং ঠিকাদার বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের অর্থ পরিশোধ করতে হবে। আর তা না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ট্রাক থেকে পণ্য লোড-আনলোড বন্ধ রাখবেন তারা। এরআগেও, সঠিক মজুরি না দেওয়া, পারিশ্রমিকের কেটে নেওয়া টাকার হিসাব না দেওয়া, নির্বাচনের মাধ্যমে শ্রমিক সংগঠনের কমিটি গঠন না করে স্বজনপ্রীতিসহ নানা বৈষম্যের অভিযোগে শ্রমিক সর্দারদের বিচার ও পদত্যাগের দাবিতে একাধিকবার লোড-আনলোড বন্ধ রেখে মহাসড়ক অবরোধ ও ধর্মঘট করেন সাধারণ শ্রমিকরা। 

এর আগে, গত মঙ্গলবার দুপুরে মজুরির টাকা না দেওয়া ও সাধারণ শ্রমিকদের কাজের সিরিয়াল দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শ্রমিক ও সর্দার গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। ওই ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে শ্রমিকদের হামলায় দুই সাংবাদিকসহ ১৫ জন আহত হন। ওই সময় পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুল ইসলামকে প্রায় ৬ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন শ্রমিকরা। 

শ্রমিক অসন্তোষ ও স্থলবন্দরের কার্যক্রমে ব্যাঘাতের ঘটনায় গত শনিবার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এ টিমের আহবায়ক করা হয় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমানকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- লালমনিরহাট সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (বি-সার্কেল) ফরহাদ ইমরুল কায়েস, পাটগ্রাম উপজেলা নির্বহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম, পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ, বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) গিয়াস উদ্দিন। 

গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সাধারণ শ্রমিকদের ১০ জনের প্রতিনিধি দল ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুজ্জামান সায়েদকে নিয়ে বৈঠক করেন তদন্ত কমিটি। শ্রমিকদের প্রতিনিধিদলের নের্তৃত্ব দেন বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগ বুড়িমারী স্থলবন্দর শাখার সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন। 

বৈঠক সূত্র জানা গেছে, সমস্যা নিরসনে সর্দারকুজিওমিনের পক্ষ, ঠিকাদার ও শ্রমিকপক্ষের মাধ্যমে লোড-আনলোড, মজুরি পরিশোধের কাজ করার প্রস্তাব করা হলে শ্রমিকেরা তাতে রাজি হননি। ফলে কোনো প্রকার সুরাহা ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়।

পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুল ইসলাম বলেন, রোববার সন্ধায় গঠিত কমিটি এবং  শ্রমিক ও সর্দার প্রতিনিধিদেরকে নিয়ে বৈঠক হয়েছে। তদন্ত কমিটির আহবায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান স্যার বৈঠকের বিভিন্ন বিষয় নোট করে নিয়ে গেছেন। এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ফাইনাল সিদ্ধান্ত আসলে আমরা সেভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

বুড়িমারী বন্দরের কাস্টমসের ডিপুটি কমিশনার আব্দুল আলিম বলেন, শ্রমিক অসন্তোষের কারণে গতকাল ভারত থেকে ১১টি ট্রাক বাংলাদেশের প্রবেশ করলেও আজকে একটি ট্রাকও প্রবেশ করেনি। বিষয়টি সমাধানের জন্য জেলা প্রশাসক ও ইউএনও কাজ করছেন। আশা করি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।