রাজনীতি

ডেঙ্গু নিয়ে কথা বললে নাকি রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ: জিএম কাদের

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলে‌ছেন, প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবে আর এর মধ্য থেকে কিছুসংখ্যক মারা যাবে, এটাই যেনো স্বাভাবিক। আর আমরা ডেঙ্গু নিয়ে কথা বললে নাকি দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। তাই এটাকে তারা রাষ্ট্রদ্রোহ বিবেচনা করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বানাতে চাচ্ছে।  ডেঙ্গুর ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণে কারো যেনো দায় নেই।

বুধবার জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আ‌য়োজ‌নে এক যোগদান অনুষ্ঠা‌নে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ‌তি‌নি  এ কথা বলেন।

গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। একই সাথে বাড়ছে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা। গেলো তিন দিনে প্রতিদিন তিন হাজারের চেয়ে বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বাসা-বাড়িতে কতসংখ্যক মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন তার কোনো হিসাব নেই। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যাবে এটা স্বাভাভিক ঘটনা হতে পারে না। ডেঙ্গুর ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণে কারো যেনো দায় নেই। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে জাপা চেয়ারম‌্যান বলেন, এ মাসের ১৯ দিনেই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। এ বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৮৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে, সাধারণ মানুষের ধারণা এই মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি। এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৯৫ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ডেঙ্গুর লার্ভা কমছে না, তাই আক্রান্তের সংখ্যাও কমছে না। ডেঙ্গু বিষয়ে সাধারণ মানুষ অধিক শোকে পাথর হয়ে গেছে। তারা আর এই বিষয়ে কথা বলতে চায় না। হাসপাতালে জায়গা দেওয়ার ক্ষমতা নেই।

রাজধানীতে ডেঙ্গু নিধনে দুই সিটি কর্পোরেশন নাটক করছে মন্তব‌্য ক‌রে গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দেখলেই বোঝা যায়, তাদের কোনো সফলতা নেই। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, রাজধানীর বাইরেও ডেঙ্গু নিধনে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। আবার, ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য পর্যাপ্ত স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না।

‘প্রভাবশালী একটি গোষ্ঠী জীবন রক্ষাকারী স্যালাইন কালোবাজারে নিয়ে কয়েকগুণ  মুনাফা করছে, সরকারের যেনো কিছুই করার নেই। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ, আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা ও স্যালাইন সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান।

গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান কাজ হচ্ছে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা। মশা-মাছি নিয়ন্ত্রণ করতে তাদের ভূমিকাই বেশি। এখন আমদের দেশের শহরগুলো আফ্রিকার অনেক শহরের চেয়েও নোংরা। পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের কাজ এখন বড় বড় ভবন করা ও ঠিকাদারের সাথে কমিশন ম্যনেজমেন্ট করা। সেখানে এই লীগ, সেই লীগসহ বিভিন্ন লীগকে চাঁদা দিতে হচ্ছে। আবার, সিঙ্গাপুরের নাম করে মশা নিধনে একটি ভেজাল ওষুধ আমদানি করা হয়েছে। পরে সিঙ্গাপুর বলেছে, ঐ ওষুধ সিঙ্গাপুরের নয় বা তারা ঐ ওষুধ বাংলাদেশে দেয়নি। মশা নিধনের চেয়ে তারা এমন কাজ-কর্মে বেশি ব্যস্ত। আসল কাজ থেকে পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন অনেক দূরে চলে গেছে।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার সভাপতিত্বে, দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবু রহমান খসরুর প‌রিচালনায় এই যোগদান অনুষ্ঠানে নিউ সুপার মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হাজী মোহাম্মদ হোসেন, বিশিষ্ট সাউন্ড সিস্টেম ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল মামুন, বলাকা শপিং কমপ্লেক্স ব্যবসায়ী সমিতির সহ সভাপতি মো. আব্দুর রহিম অপু, আনিছুর রহমানসহ শতাধিক ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপির হাতে ফুল দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন।

এ সময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, জাতীয় পার্টির  চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপির নেতৃত্বে পল্লীবন্ধুর সৈনিকেরা ঐক্যবদ্ধ আছে। কোনো ষড়যন্ত্রে জাতীয় পার্টির ঐক্যে ফাটল ধরানো যাবে না। যারা জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ষড়ন্ত্র করবে তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে যাবে।

পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেন, দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের মাঝে হাহাকার উঠেছে। ক্ষত দরিদ্রের আর্তনাদ যেন শোনার কেউ নেই। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকার পুরো ব্যর্থ হয়েছে। সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান মৃত্যুদণ্ড রেখে সিন্ডিকেট ভাঙতে একটি আইন করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া এবং পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল আলম রুবেল।

অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো.  গোলাম মোস্তফা, ভাইস চেয়ারম্যান তারেক মো. আদেল, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, বেলাল হোসেন, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার এলাহান উদ্দিন, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাদুর ইসলাম ইমতিয়াজ, আখতার হোসেন দেওয়ান, এমএ সুবহান, শারফুদ্দিন শিপু, যুগ্ম প্রচার সম্পাদক মাসুকুর রহমান, যুগ্ম দফতর সম্পাদক মাহমুদ আলম, সমরেশ মন্ডল মানিক, যুগ্ম শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ইব্রাহীম আজাদ, কেন্দ্রীয় সদস্য মাহবুবুর রহমান খশরু, হাজী মো. শাহজাহান, মহানগর দক্ষিণের নেতা হুমায়ুন কবির মজুমদার, মাসুম আহমেদ, মো. শাহজাহান, হুমায়ুন কবির কালা প্রমুখ।