ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার দত্তনগর কৃষি খামারে উৎপাদিত ২ কোটি ৬৮ লাখ ৩১ হাজার ৭৭৫ টাকার ধান ও গমবীজ আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) আট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুনীতি দমন কমিশনের যশোর অফিসের উপপরিচালক মো. আল আমিন বাদী হয়ে মামলাগুলো করেন। মামলা নং ৭, ৮ ও ৯।
মামলার আসামিরা হলেন, মহেশপুরের দত্তনগর কৃষি খামারের সাবেক ও বর্তমান মুন্সিগঞ্জ বিএডিসির উপ-পরিচালক ইন্দ্রজিত চন্দ্র শীল, যশোরের সাবেক ও বর্তমান গাজিপুর বিএডসির আমিন উল্যা, মহেশপুরের গোকুলনগর কৃষি খামারের সাবেক ও বর্তমান দিনাজপুর বিএডিসির যুগ্ম পরিচালক তপন কুমার সাহা, মহেশপুরের পাথিলা খামারের সাবেক উপ-পরিচালক ও বর্তমানে কিশোরগঞ্জ বিএডিসির উপ-পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান তালুকদার, যশোর বিএডিসির সাবেক ও বর্তমান ফরিদপুরের তাম্বুলখানা খামারের সহকারী পরিচালক মো. আলী হোসেন, মহেশপুরের করিঞ্চা খামারের সাবেক ও বর্তমান ফরিদপুরের তাম্বুলখানার গুদাম রক্ষক মো রেজাউল কবির, গোকুলনগরের সাবেক গুদামরক্ষক অবসরপ্রাপ্ত মো. লিয়াকত আলী ও মহেশপুরের পাথিলা খামারের ভারপ্রাপ্ত গুদাম রক্ষক কামরুল আহসান।
প্রথম মামলার এজাহারে আসামিদের বিরুদ্ধে ৪৭ লাখ ৬২ হাজার ৯৮৪ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মামলায় ১ কোটি ৫২ লাখ ৭৩ হাজার ৪৪১ টাকা ও তৃতীয় মামলায় ৬৭ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি ইন্দ্রজিত চন্দ্র শীল ঝিনাইদহে ২০১৮-১৯ উৎপাদন বর্ষে উপপরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী একটি খামারে ৪০ হেক্টর (৯৮.৮ একর) জমিতে ৮০ টন এসএল এইট-এইচ জাতের হাইব্রিড ধানবীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়। ওই বীজ উৎপাদনের জন্য বীজ, সার, কীটনাশক, শ্রমিক, জিএ-৩ চাষাবাদ ও অন্যান্য খরচ বাবদ মোট ১ কোটি ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার।
আসামিরা যোগসাজশে ঝিনাইদহের দত্তনগর খামারে উৎপাদিত ২২.০৩৫ টন বোরো এসএল এইট-এইচ জাতের বীজ ধান ও ৯৩৬৮ কেজি কেজি বারি ৩০ জাতের ধানবীজ আত্মসাৎ করেন।
দ্বিতীয় মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা একই খামারে উৎপাদিত ৭৫.০৭৫ টন বোরো এসএল এইট-এইচ জাতের বীজ ধান, ৪.০৬৯ টন ব্রি-২৮ জাতের ধানবীজ ও ২৬২৫ কেজি বারি ৩০ জাতের ধানবীজ আত্মসাৎ করেন। এই আত্মসাতের ঘটনা ধামাচাপা দিতে আসামিরা গাড়ির লগ বই ও সৃজিত চালান ঘষামাজা করে জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাক ডেট বসিয়ে দেন, যা তদন্তে ধরা পড়ে।
এ বিষয়টি দুদক ছাড়াও বিএডিসির গঠিত তদন্ত কমিটির নজরে আসে এবং তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে অবহিত করেন। জালিয়াতির মাধ্যমে বীজ আত্মসাতের প্রায় সাড়ে ৩ বছর পর দুর্নীতি দমন কমিশন তথ্য ও সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এই মামলা করল।