গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে কুমার নদে অনুষ্ঠিত হলো জমজমাট নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের হোগলাকান্দি-চকবোনদোলা গ্রামবাসী এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
ঐতিহ্যবাহী এ নৌকাবাইচ দেখতে কুমার নদের দুই পাড়ে ভিড় করেন লক্ষাধিক দর্শনার্থী। এ উপলক্ষে বসে লোকজ মেলা।
শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকালে জমজমাট এই নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন।
আকর্ষনীয় এ নৌকাবাইচে গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, খুলনা, মাদারীপুর, পিরোজপুর, নড়াইল, বরিশাল জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের ২৫টি সরেঙ্গা, ছিপ, কোষা, বাছারী, জয়নাগরি, টালী, ও ছান্দী নৌকা অংশ নেয়।
হোগলাকান্দি-চকবোনদোলা গ্রামের মহেশপুর সেতু থেকে চকবোনদোলা সেতু পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চলে একের পর এক বাইচ। বিকাল ৪টা থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা এ বাইচে ঠিকারি ও কাসার বাদ্যের তালে তালে নেচে “হেঁইও হেঁইও রবে” বৈঠার ছলাৎ-ছলাৎ শব্দে এক অনবদ্য আবহ সৃষ্টি হয় চারিদেকে।
এই নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে বৃষ্টি উপেক্ষা করে দুপুর থেকেই কুমার নদের দুই তীর পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, পিরোজপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, নড়াইলসহ বিভিন্ন জেলার লক্ষাধিক দর্শনার্থী নৌকাবাইচ উপভোগ করেন। আনন্দে মেতে ওঠে এলাকার শিশু নারীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ। বিশেষ করে নৌকায় ও ট্রলারে করে নৌকাবাইচ দেখতে নারীদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মত। হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে উৎসবের আমেজে সন্ধ্যায় এ নৌকা বাইচ শেষ হয়।
নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে হোগলাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বসে লোকজ মেলা। মেলায় শতাধিক দোকানে বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানীরা। কিছু দোকানে বাঁশ-বেত, মৃৎ শিল্প, তৈজসপত্র এবং খেলনা শোভা পায়। নৌকাবাইচ দেখতে আসা দর্শনার্থীরা তাদের পছন্দমত পণ্য কিনে নেন মেলা থেকে।
প্রতিযোগিতায় হোগলাকান্দি গ্রামের ওসমান শেখ ও বরকত মোল্লার নৌকা যৌথভাবে প্রথম, চকবোনদোলা গ্রামের উকিল মিনার নৌকা দ্বিতীয় ও রাব্বি শেখের নৌকা তৃতীয় হয়। পরে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহেশপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. লুৎফর রহামন লুথু মিয়া।
বাইচে প্রথম হওয়া নৌকার মালিক ওসমান শেখ বলেন, আমরা বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হওয়া নৌকাবাইচে অংশগ্রহণ করি। এতে শুধু দর্শক নয় আমরাও আনন্দিত হই। পূর্ব পুরুষের ধরে রাখা এ ঐতিহ্য আমরাও ধরে রেখেছি।
বাইচে দ্বিতীয় হওয়া নৌকার উকিল মিনা (৫৬) বলেন, এখন আর তেমন একটা নৌকাবাইচ হতে দেখা যায় না। তবে যেখানে শুনি নৌকাবাইচ হবে সেখানে আমরা চলে যাই। পুরস্কার পাওয়াটা আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য নয়, মানুষকে আনন্দ দেওয়াটাই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য।
নৌকাবাইচ দেখতে আসা কলেজ শিক্ষার্থী হুমাইয়ারা আক্তার বলেন, এখানে নৌকাবাইচ হবে শুনে দেখতে এসেছি। সাথে আমার বাবা রয়েছে। কয়েকটি নৌকার আগে যাওয়া যে প্রতিযোগিতা তা দেখে অনেক ভাল লাগেছে।”
দর্শনার্থী শরীফুল আলম (৬০) বলেন, “অনেক আগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নৌকাবাইচ হতো। তবে এখন তার তেমন একটা চোখে পড়ে না।
নৌকাবাইচ আয়োজক কমিটির প্রধান গিয়াস উদ্দিন গালিব বলেন, প্রতি বছর আমরা নৌকা বাইচের আয়োজন করে থাকি। এরই ধারাবাহিকতায় এবছরও আয়োজন করেছি। আনন্দমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা।
স্থানীয় মহেশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান মিয়া লুথু বলেন, এখনকার দিনে নৌকাবাইচের তেমন একটা আয়োজন দেখা যায় না। যার কারণে নির্মল বিনোদনেরও উৎস হারিয়ে যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্ম এখন মাদকের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এস এম কামাল হোসেন বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে দেশের সংস্কৃতিকে আবার পুনর্জীবিত করেছে। এখন দেশের প্রতিটি জেলার গ্রামগঞ্জে প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে আগামিতেও এমন খেলা বা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।