সারা বাংলা

বেলাই বিল হতে পারে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র

আজ ২৭ সেপ্টেম্বর। বিশ্ব পর্যটন দিবস। আজকের এই দিনে সারা বিশ্বব্যাপী পালিত হবে দিবসটি। জাতিসংঘের অধীনস্থ বিশ্ব পর্যটন সংস্থার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধায়নে ১৯৮০ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে দিবসে। এই দিবসের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও পর্যটন কেন্দ্রের সঙ্গে সেতুবন্ধন গড়ে তোলা। এছাড়াও পর্যটনের ভূমিকা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উপযোগিতাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া এ দিবসের অন্যতম লক্ষ্য। দিবসটি উপলক্ষে বেলাই বিল নিয়ে রাইজিংবিডির বিশেষ আয়োজন।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ। এখানে দেখার মত রয়েছে অনেক কিছুই। ঐতিহাসিক নাগরী সেন্ট নিকোলাস টলেন্টিনো চার্চ ও সাধু আন্তুনীর গীর্জা, উত্তর রূপগঞ্জ পানি সংরক্ষণ প্রকল্পের রেস্ট হাউস, হযরত নবী শাহ (র.) এর দরগা, বক্তারপুর ঈশা খাঁর সমাধী, শাহ কারফরমা আউলিয়ার মাজার ও দীঘি, শাহ পালোয়ান গাজীর মাজার, ধনপুর বনভূমি, রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ পাইলট স্কুল, রাজ কাচারী, কালীমন্দির এবং মাঠ। তবে এগুলোর পাশাপাশি এই উপজেলায় আরও একটি মনোমুগ্ধকর স্থান রয়েছে। আর ওই স্থানটির নাম বেলাই বিল।

ব্যস্ত শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে এবং গাছ-গাছালি ঘেরা স্বচ্ছ পানির আকর্ষণে বর্তমানে অনেক দর্শনার্থী ছুটে যাচ্ছেন বেলাই বিলে। বিশেষ করে বর্ষা এলে নৌ ভ্রমণ প্রেমিরা প্রথমেই বেছে নিচ্ছেন বেলাই বিলকে। এই বিলের আসল রূপসৌন্দর্য প্রকাশ পাই বর্ষা মৌসুমে। সেই রূপ উপভোগ করতে বেড়ে যায় প্রকৃতি প্রেমিদের আনাগোনা।

বেলাই বিলে গাজীপুর জেলার কয়েকটি পয়েন্ট থেকে আসা যায়। তবে শীতলক্ষা নদী হয়ে ভাদার্ত্তী খাল দিয়ে বেলাই বিলে প্রবেশ করলে খালের দুই পাশের সৌন্দর্য মনে হবে এ যেন সিলেটের রাতারগুল। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বহু মানুষ প্রশান্তির জন্য বর্ষাকালে বা পিকনিক করতে সেখানে ছুটে যান। নয়ন জুড়ানো এই বেলাই বিলে বর্ষার সময় দর্শনার্থীদের আগমন লক্ষ্য করা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুর জেলা সদর, কালীগঞ্জ, কাপাসিয়া ও শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা জুড়ে বয়ে গেছে প্রায় ৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বেলাই বিল। বর্ষায় বন্যা ও জলাবদ্ধতা ঠেকাতে শত শত বছর ধরে চার উপজেলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে দেশি মাছের ভান্ডার খ্যাত এই বিল। বেলাই বিল থেকে পাওয়া এক তৃতীয়াংশ মাছের চাহিদা মেটায় পুরো জেলার মানুষের। বেলাই বিলকে ঘিরে চার উপজেলার শত শত মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন। বিশেষ করে বর্ষাকালে বিল পাড়ের মানুষের কর্মসংস্থান হয় মাছ ধরে ও শাপলা তুলে। আবার বর্ষা মৌসুমে এই বেলাই বিলে প্রকৃতিপ্রেমিদের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে ওঠে ৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের পুরো বিল। বেলাই বিলকে ঘিরে এখানে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন হোটেল রেস্তেুারাঁ। এগুলোতে বসে পর্যটকরা বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামের বেলাই বিল পাড়ের বাসিন্দা রানা সরকার বলেন, গাজীপুর তথা দেশের পর্যটন শিল্পের অপার এক সম্ভাবনার নাম বেলাই বিল। সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ ও প্রচেষ্টাই পারে বিশ্বের দরবারে এই বিলকে আধুনিক পর্যটন এলাকা হিসেবে তুলে ধরতে।

বেলাই বিলের নিয়মিত একজন পর্যটক নুরুল ইসলাম বলেন, বিল বেলাইয়ের সৌন্দর্য যে কোনো পর্যটককে বিমোহিত করবেই। যথাযথ ব্যবস্থাপনায় এ বিল হতে পারে পর্যটন শিল্পের অনেক বড় একটি খাত। তবে পর্যটকরা যেন প্লাস্টিক সামগ্রী বা পলিথিন যেখানে সেখানে ফেলে পরিবেশ নষ্ট না করে সেদিকটাও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে বিলে আসা পর্যটকদের। পাশাপাশি বিলে প্রবেশের জন্য রাস্তাগুলোকে আরো প্রশস্থ করা দরকার। 

কালীগঞ্জ পৌর এলাকার বালীগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের বিশেষায়িত জেলা গাজীপুরের কালীগঞ্জে একটি বেলাই বিল রয়েছে। সরকারি অথবা বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে এই বিলটিকে সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। স্থানীয় এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পর্যটকরা এখানে এসে সুন্দর কিছু মুহূর্ত কাটাতে পারবেন। বেলাই বিল হতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আজিজুর রহমান বলেন, বেলাই বিলটি কালীগঞ্জ উপজেলার একটি অন্যতম সম্পদ এবং পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে আমরা এটিকে বিবেচনা করি। কিন্তু সত্যিকার অর্থে একটি পর্যটন কেন্দ্র করার জন্য যে ধরণের সুযোগ সুবিধা থাকা উচিত, সেটির কিছু ঘটতি রয়েছে এখানে। আমরা সরকারি-বেসরকারি যৌথভাবে কাজ করি তাহলে উল্লেখ্যযোগ্য পর্যটন দেশ এবং দেশের বাহিরে থেকে এখানে আনা সম্ভব।    

তিনি আরও বলেন, অনেক সম্ভাবনার নাম বেলাই বিল। আমরা ইতোমধ্যে এ বিলের বেশ কিছু প্রামান্য চিত্র তৈরি করে সামাজিক মাধ্যমের বিভিন্ন প্লাটফর্মে দিয়েছি। এছাড়াও হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভূমিদস্যূ কোম্পানি বিলটিতে বালু ভরাট করা শুরু করে। পরে আমরা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে কঠিনভাবে প্রতিহত করেছি তাদের। বেলাই বিলটি এত সুন্দর তার প্রচার প্রসারে যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসা উচিত। সেটা আমার ঘর বা প্রশাসন থেকেও হতে পারে।