সারা বাংলা

রং তুলির আঁচড়ে সাজছে দেবী দুর্গা

দরজায় কড়া নাড়ছে সনাতন ধর্মাবম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এই উৎসবকে ঘিরে সিরাজগঞ্জের পাল পাড়ায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রতিমা শিল্পীরা। মণ্ডপগুলোতে শুরু হয়েছে উৎসবের প্রস্তুতি। বাপের বাড়ি যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা দেবী দুর্গাকে সুন্দর রূপ দিতে দিন-রাত রং তুলির মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবার সিরাজগঞ্জ শহরের মণ্ডপগুলোতে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা না থাকলেও আয়োজনের কোনো কমতি নেই। জেলার ৯টি উপজেলার ৫১৬টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর জেলায় ৫৩৭টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এবছর ২১টি কম মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সন্তোষ কুমার কানু।

রোববার (৮ অক্টোবর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভদ্রঘাটের পালপাড়ায় প্রতিটি প্রতিমাকে রঙ-তুলির নিপুণ আঁচড়ে রাঙাতে ব্যস্ত শিল্পীরা। চলছে সাজ-সজ্জার কাজও। দেবী দুর্গার সঙ্গে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী আর সরস্বতী দেবীকেও। মৃৎশিল্পীদের কাজে সাহায্য করছেন বাড়ির নারীরাও। তবে দেবী দুর্গাকে নানা রঙে রাঙালেও প্রতিমা তৈরির উপকরণ ও রঙের দাম বেড়ে যাওয়ায় ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন প্রতিমা কারিগররা। 

পঞ্জিকা মতে আগামী ২০ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজা। আগামী ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই উৎসব। এবার দেবীর আগমন ও গমন হবে ঘোটকে (ঘোড়ায়)। যার কারণে পৃথিবী এবার অনেকটা অস্থির ও বিশৃঙ্খল থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা।

কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট পাল পাড়ার প্রতিমা তৈরির কারিগর গুপিনাথ পাল বলেন, বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রায় ৪২ বছর ধরে এই পেশায় জড়িত রয়েছি। প্রতিমা তৈরির উপকরণ ও রঙের দাম বেড়ে যাওয়ায় ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।

প্রতিমার মূল্য জানতে চাইলে গুপিনাথ পাল বলেন, প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম বেড়েছে। তবে, চলতি বছর প্রতিমার চাহিদা গত বছরের তুলনায় বেশি। গতবারের মূল্যতেই বিক্রি হচ্ছে প্রতিমা। ১৫ হাজার থেকে প্রায় ৮০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে প্রতিমা।

প্রতিমা তৈরীর অপর কারিগর রণজিত পাল ও সুভাষ পাল বলেন, প্রতিমা তৈরির উপকরণ মাটি, খড় ও সুতলি-রঙের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো প্রতিমা তৈরি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এবার পূজা মণ্ডপের সংখ্যাও কমে যাওয়ায় প্রতিমা বিক্রিও কমে গেছে।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সন্তোষ কুমার কানু বলেন, আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। আগামী ২০ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজা। ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এই উৎসব। দেবীর এবার আগমন ও গমন ঘোটকে (ঘোড়ায়) যার ফল অশুভ।

তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসনের দিক থেকে আমাদের সার্বিক সহযোগীতা করা হচ্ছে। তাছাড়া উপজেলার প্রত্যেকটি মণ্ডপে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আমাদের উপজেলা কমিটিও কাজ করবে। এবার জেলায় ৫১৬টি পূজা মণ্ডপে আনন্দ উৎসবে পালিত হবে শারদীয় দুর্গাপূজা।

সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম জানান, পূজা উদযাপন কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে মণ্ডপগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থির সৃষ্টি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। শারদীয় দুর্গোৎসব এবার সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল জানান, পূজায় যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি পূজা মণ্ডপে পুলিশ সদস্যরা মোতায়েন থাকবে। এছাড়াও আনসার বাহিনীর সঙ্গে মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক মণ্ডপগুলো নজরদারিতে রাখবে। পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে।