সারা বাংলা

নিধেষাজ্ঞার মধ্যেও ইলিশ শিকার, পাড়ায়-পাড়ায় বেচাকেনা

ইলিশ মাছের প্রজনন বৃদ্ধির জন্য সারা দেশে ইলিশ ধরার ওপরে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর-শিবালয়-দৌলতপুরে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকার করছে জেলেরা। পেশাদার জেলেদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মৌসুমি জেলেরাও। প্রশাসনের নজরদারিতে হাট-বাজারে ইলিশ বিক্রি করতে না পেরে চরাঞ্চল ও নদীর তীরের এলাকার বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী হাট বসিয়েছে তারা। ভ্রাম্যমাণ এ সব হাটে ইলিশ বেচাকেনা করছে জেলে ও ক্রেতারা।

১১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই নিষেধাজ্ঞা চলবে ২ নভেম্বর পর্যন্ত। এ সময় দেশের বেশ কিছু নদী ও বঙ্গোপসাগরে সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার।

পদ্মা-যমুনায় ইলিশ শিকার হলেও স্থানীয় প্রশাসন নামমাত্র অভিযান পরিচালনা করছে বলে জানায় স্থানীয়রা। মাঝে মাঝে অভিযান চললেও ইলিশ শিকার চলে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা।

সরেজমিন হরিরামপুর উপজেলার সুতালড়ি ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামে; লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের পাটগ্রাম চর, ভগবান চর, নটাখোলা চরসহ আজিনগরের হাতিঘাটা এলাকায় পদ্মা নদীতে জেলেদের ইলিশ মাছ ধরতে দেখা যায়।

সোমবার (২৩ অক্টোবর) সকালে দৌলতপুরের বাচামারা, বাঘুটিয়া ও চরকাটারী এলাকায় এবং দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিবালয় উপজেলার আলোকদিয়া চর, তেওতা, দক্ষিণ তেওতা, গান্ধাইল, সাতুইরে ও জাফরগঞ্জ এলাকার যমুনা নদীতে জেলেদের ইলিশ শিকার করতে দেখা যায়। এ ছাড়া নদীর তীরবর্তী এলাকায় অস্থায়ী হাট বসিয়ে ইলিশ বিক্রির দৃশ্যও চোখে পড়ে। দাম কমের আশায় দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারাও এসে ভিড় করছেন এসব অস্থায়ী হাটে।

শিবালয়ের তেওতা এলাকায় ইলিশ মাছ শিকারি ইসরাফিল হোসেন বলেন, ‘রোববার (২২ অক্টোবর) সারা দিনে আধামণের মতো মাছ ধরেছিলাম। আজকেও (সোমবার) আধামণের কাছাকাছি ইলিশ ধরেছি। তবে আজকেরগুলো সাইজে একটু ছোট। ছোটগুলো ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি এবং এক কেজি সাইজেরগুলো ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি।’ 

একই এলাকার রুবেল নামের আরেক ইলিশ শিকারি বলেন, ‘এই বছর প্রশাসনের অভিযান তুলনামূলক অনেক কম, তাই অনেকটা আরামে ইলিশ মাছ ধরছি। তবে পুলিশ এসে মাঝে মাঝে ডিস্টার্ব করে। পুলিশ এসে মাছ পেলে সব মাছ নিয়ে যায়, আর লোক ধরলে কিছু টাকা দিলে ছেড়ে দেয়।’

সোমবার সন্ধ্যার পর ক্রেতা সেজে দক্ষিণ তেওতা এলাকায় মাছের খোঁজ করলে স্থানীয় জাহাঙ্গীর নামের এক ব্যক্তি বলেন, তার বাড়িতে ১০-১২ কেজি মাছ আছে, লাগলে নিতে পারেন। পরে জাহাঙ্গীরের বাড়িতে ঘরের ভেতরে গেলে নদী থেকে কিছুক্ষণ আগে শিকার করা ইলিশ মাছ দেখান তিনি। এ সময় দামে পোষায় না বলে মাছ কিনতে না চাইলে আশপাশের আরও কয়েকজন এগিয়ে এসে তাদের বাড়িতেও মাছ আছে বলে জানান।

হরিরামপুর উপজেলার হরিণাঘাট এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, বর্তমানে পদ্মায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। ভালো দাম পাওয়ার আশায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কিছু জেলে মাছ ধরে। প্রশাসনের অভিযান ও তৎপরতা কম থাকায় জেলেরা অনেকটা অবাধে ইলিশ মাছ শিকার করছে।

শিবালয় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জসিম উদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় যোগাযোগ করা করা সম্ভব হয়নি। হরিরামপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. নুরুল ইকরাম বলেন, ‘আমরা মা ইলিশ রক্ষায় তৎপর রয়েছি। নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।’

মা ইলিশ রক্ষায় প্রশাসনের গাফলতি নেই উল্লেখ করে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদুর রহমান বলেন, ‘আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করি, সকলে মিলে সফলভাবে ইলিশ নিধন বন্ধ করেছি।’