সারা বাংলা

কেসিসির প্যানেল মেয়র হচ্ছেন কারা?

খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) মেয়র প্যানেলের নির্বাচন আগামী ৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য বুধবার (২৫ অক্টোবর) ৫ সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করেছে কেসিসি। এ ছাড়া মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, জমা, বাছাই ও প্রত্যাহারের সময়সূচি প্রকাশ করা হয়েছে। নির্বাচনের সময়সূচি জানিয়ে কাউন্সিলরদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

কেসিসিতে মেয়র প্যানেলের সদস্যদের ‘প্যানেল মেয়র’ হিসেবে সম্মোধন করা হয়। মেয়রের অনুপস্থিতি তারা ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন, কেসিসিতে মেয়রের পরে মর্যাদা প্রদানসহ নানা কারণে প্যানেল মেয়র পদটি সম্মানজনক পদ হিসেবে বিবেচনা করেন কাউন্সিলররা। এ জন্য বিগত দুটি পরিষদে ভোটের মাধ্যমে প্যানেল মেয়র নির্বাচন হয়েছে। ২০১৮ সালের পরিষদে প্যানেল মেয়রের ৩টি পদে অংশ নিয়েছিলেন ১০ জন কাউন্সিলর। এবার ভোট হলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কাউন্সিলর ভোটে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।

নির্বাচন সূচি ও পরিচালনা কমিটি  প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর করা সময়সূচি অনুযায়ী আগামী ৯ নভেম্বর সকাল ১০ থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত নগর ভবনের শহীদ আলতাফ মিলনায়তনে মেয়র প্যানেল নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য ৩০ অক্টোবর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, ৩১ অক্টোবর মনোনয়নপত্র জমা, ১ নভেম্বর বাছাই ও ২ নভেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।

নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কার তাজুল ইসলাম নির্বাচন কমিশনার, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সানজিদা বেগম রিটার্নিং অফিসার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জান্নাতুল আফরোজ স্বর্ণা সহকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান প্রিজাইডিং অফিসার এবং প্রধান পরিকল্পনা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবির উল জব্বার সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কার তাজুল ইসলাম জানান, সিটি করপোরেশন আইনের ২০ ধারা মতে প্রথম সভার ৩০ দিনের মধ্যে মেয়র প্যানেল নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কেসিসির সাধারণ ওয়ার্ডের ৩১ জন কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ১০ জন কাউন্সিলর তাদের মধ্যে থেকে ৩ জনকে মেয়র প্যানেলের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করবেন। এর মধ্যে একজন অবশ্যই সংরক্ষিত ওয়ার্ড থেকে হতে হবে। আইন অনুযায়ী নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়েছে।

প্যানেল মেয়র হতে আগ্রহী যারা  খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্যানেল মেয়রের দৌড়ে একাধিকবার নির্বাচিত সিনিয়র কাউন্সিলরদের আগ্রহ বেশি। এর বাইরে এবারই প্রথম কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে প্যানেল হিসেবে দায়িত্ব পালনে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন নগরীর ২৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এস এম রফিউদ্দিন আহমেদ রফিক। তিনি বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের বড় ভাই।

কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শপথ গ্রহণের পর থেকে মেয়র প্যানেল নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ইতোমধ্যে প্যানেল মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় এসেছেন কেসিসির ১৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম মুন্না, ১৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ হাফিজুর রহমান হাফিজ, ২৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলী আকবর টিপু, ১৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এস এম খুরশিদ আহম্মেদ টোনা, ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ আলী। এর মধ্যে আমিনুল ইসলাম মুন্না, আলী আকবর টিপু ও হাফিজুর রহমান বিগত দিনে প্যানেল মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বিগত দিনে প্যানেল মেয়র পদে নির্বাচন করলেও এবার আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছেন সিনিয়র কাউন্সিলর ২০নং ওয়ার্ডের শেখ মো. গাউসুল আজম এবং ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জেড এ মাহমুদ ডন।

প্রার্থিতার বিষয়ে ২৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এস এম রফিউদ্দিন আহমেদ রফিক বলেন, ‘প্যানেল মেয়র-১ এর যে কাজ রয়েছে, আমি সেগুলো সঠিকভাবে পালন করতে পারব। এছাড়া কাউন্সিলররাই আমাকে প্রার্থী হতে বলছেন। এজন্য প্যানেল মেয়র-১ পদে প্রার্থী হবো।’

আমিনুল ইসলাম মুন্না বলেন, ‘আমি কখনো ব্যক্তিগত ইচ্ছায় নির্বাচন করিনি। গত পরিষদে দলের নেতাদের নির্দেশে প্যানেল মেয়র-১ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেই এবং দায়িত্ব পালন করেছি। নেতারা চাইলে এবারও প্রার্থী হবো।’ 

আলী আকবর টিপু বলেন, ‘গত পরিষদে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছি। ভোট হলে প্যানেল মেয়র-১ পদে নির্বাচন করবো। আলোচনার মাধ্যমে প্রার্থিতা চূড়ান্ত হলে নেতাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ নেব।’

শেখ হাফিজুর রহমান হাফিজ বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে প্রবীণ কাউন্সিলর আমি। টানা ৬ বার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছি। একবার প্যানেল মেয়র-২ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এখন একটি দল করি। মেয়র, সংসদ সদস্য যদি চায় প্রার্থী হবো। তারা নিষেধ করলে হবো না।’ 

খুরশিদ আহম্মেদ টোনা বলেন, ‘বিগত দিনে বিপুল ভোটে এবং এবার বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছি। এলাকার ভোটাররা আমাকে প্যানেল মেয়র হিসেবে দেখতে চায়, এজন্য প্রার্থী হবো।’ 

শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘প্যানেল নির্বাচনের তফসিল পেয়েছি। প্যানেল মেয়র নির্বাচনে অংশ নেব।’ 

প্যানেল মেয়র নির্বাচনে একজন অবশ্য সংরিক্ষত ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত হন। গত পরিষদে সংরক্ষিত ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মেমরী সুফিয়া রহমান শুনু প্যানেল মেয়র-৩ নির্বাচিত হন। এ বছর সংরিক্ষত ১০টি ওয়ার্ডের মধ্যে নতুন-পুরাতন মিলিয়ে ৬ জনই প্রার্থী হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।