পজিটিভ বাংলাদেশ

বিবর্ণ ইটভাটায় এখন ৫৬ হাজার ড্রাগন গাছ

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার মাউলি ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের নবগঙ্গা নদীর পাড়ে রয়েছে ‌‘মকসেদ মোল্যা অ্যান্ড মহুরন নেছা এগ্রো ড্রাগন গার্ডেন’ নামের একটি ইটভাটা। এই ভাটার ২৩ একর জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে একটি ড্রাগনে ফলের বাগান। এখন ১৩ হাজার ৬৫০টি পিলারে শোভা পাচ্ছে ৫৬ হাজার ড্রাগন গাছ।

রোববার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, বাগানটিতে রেড ভেলভেট, আমেরিকান বিউটি, ইসরাইল ইয়োলো, ভিয়েতনাম রেড, ভিয়েতনাম হোয়াইট, পলোরা জাতের ড্রাগন গাছ রয়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ২.৫ একর জমিতে ১৭০০ পিলারে ৭ হাজার চারা দিয়ে শুরু করেন ড্রাগন বাগানটির যাত্রা।

কালিয়া উপজেলার মুন্সী মানিক মিয়া ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মরফুদুল হাসান বলেন, তার দুই ভাইয়ের সহযোগিতায় ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ৭ হাজার চারা দিয়ে শুরু হয় ড্রাগন চাষ। শুরুটা ভালো ছিলো না। গ্রামের লোকজন বলতো কি গাছ লাগাইতেছো এতে কি হবে। এখন তারাই বলে সুন্দর বাগান হয়েছে। ইটভাটায় পরিবেশের ক্ষতি হবে বলে আমরা ছয় ভাই ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ইটভাটা ভেঙে দিয়ে ২৩ একর জমিতে ড্রাগন বাগান পুরোদমে শুরু করি। এই বাগানে বর্তমানে ২০জন শ্রমিক কাজ করছেন। 

বাগান পরিচর্যাকারী শ্রমিক সুমন রহমান রাসেল বলেন, বাগানের শুরু থেকে আমি কাজ করি। খুব সহজ পদ্ধতিতে বাগান তৈরি করা যায়। তবে সবসময় খেয়াল রাখতে হয় যেন পোকামাকড় বা রোগ বালায় গাছের কোনো ক্ষতি করতে না পারে। জেলার সবচেয়ে বড় এই ড্রাগন বাগান দেখতে প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন আসেন। তারা এই ফলটির বাগান করতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। অনেকই চারা কিনে নিচ্ছেন এখান থেকে।   প্রভাষক মরফুদুল হাসান বলেন, ভাটার কারণে পরিবেশের ক্ষতি হবে এটা আমরা মেনে নিতে পারেনি বলে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় গড়ে তুলি ড্রাগন বাগান। এ বছর ১৬ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছি। আগামীতে বিক্রি কয়েকগুণ বাড়বে বলে আশা করি। এলাকার অনেকেই এখান থেকে চারা নিয়ে ছোট ছোট বাগান করছেন। 

তিনি আরও বলেন, প্রাকৃতিকভাবে এ ফলে কোনো ওষুধ বা কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। বছরে ২-৩ বার সার প্রয়োগ করতে হয়। মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ফল সংগ্রহ করা যায়। ফলের আকার ভেদে প্রতি কেজি ১৫০ টাকা থেকে ২৮০ টাকা পর্যন্ত পাইকারি বিক্রি হয়। 

কালিয়া উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফিরোজ মাহামুদ বলেন, স্যারের ড্রাগন বাগানে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে আমরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকি। তাই এটি লাভজনক চাষ। নতুন কেউ করতে চাইলে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করবো।

নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, জেলায় ৩৬ একর জমিতে ছোট-বড় ১৩টি ড্রাগন বাগান রয়েছে। পরিবেশের কথা ভেবে ইট ভাটা ভেঙে কলেজ শিক্ষক যে মহৎ উদ্যোগ নিয়েছেন তা প্রশংসার দাবিদার। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসম্য বজায় থাকবে, তেমনি পুষ্টি, স্বাস্থ্য এবং নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে ভূমিকা রাখছে।  এ ব্যাপারে নড়াইল কৃষি বিভাগের সব রকমের সহযোগিতা করে আসছে। ভবিষ্যতেও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।