উদ্যোক্তা/ই-কমার্স

ফেনীতে নারী উদ্যোক্তাদের মেলা, দর্শনার্থীদের ভিড়

ফেনীতে শনিবার (৪ নভেম্বর ) থেকে শুরু হয়েছে নারী উদ্যোক্তাদের দুই দিনব্যাপী ফফে বিজনেস ফেয়ার। ফেনী অনলাইন ফিমেল এন্টারপ্রেনার (ফফে) এর আয়োজনে এ মেলার উদ্বোধন করেন ফেনী পুলিশ সুপার জাকির হাসান ও ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী। মেলায় স্টল দিয়েছেন ৫০ জনের বেশি নারী উদ্যোক্তা।

মেলায় অংশ নেওয়া অধিকাংশ নারী উদ্যোক্তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে নিজেদের ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে তারা নিজেদের তৈরি পণ্য বিদেশেও রপ্তানি করছেন। এদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের তৈরীকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে পেয়েছেন আলাদা পরিচিতি। ২-৩ বছরের ব্যবধানে অনেকেই করেছেন নিজের প্রতিষ্ঠানের নামে শো রুম। সৃষ্টি করেছেন কাজের ক্ষেত্র। রাখছেন দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। নারী উদ্যোক্তারা যেমন নিজেদের বেকারত্ব দূর করেছেন পাশাপাশি তারা পরিবারকেও আর্থিকভাবে করছেন সাবলম্বী।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেলায় গ্রাহকদের জন্য রয়েছে কাপড়, গহনা, পিঠাপুলি, কেক, জুতা, হিজাব ও প্রসাধনীসহ বিভিন্ন রকমের পণ্য। সব স্টলেই ছিল দর্শনার্থীদের ভিড়। মেলায় ঘুরাঘুরির পাশাপাশি পণ্য কিনতে পারায় খুশি ছিলেন গ্রাহকরা। 

বিজনেস ফেয়ারে কথা হয় আতিকা বিনতে রফিকের সঙ্গে। তিনি নিজের বাসার ছাদ থেকে ২৬০০ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করে বর্তমানে দেশের বাইরে নিজের পণ্য রপ্তানি করছেন। বিভিন্ন জায়গায় দিয়েছেন আউটলেট। বর্তমানে তার আয় লাখ টাকার উপরে। ‘হামান দিস্তা’ নামের অর্গানিক পণ্য বিক্রির প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি। তিনি মূলত মেয়েদের স্কিন কেয়ার সামগ্রী বিক্রি করেন।

নিজের কাজের সম্পর্কে আতিকা জানান, হারবাল উপাদান দিয়ে তিনি পণ্য তৈরী করেন। তার তৈরিকৃত পণ্যে কোনো সাইড ইফেক্ট নেই। তিনিবডি কেয়ার, ফেইস কেয়ার, স্কিন কেয়ার ও স্কিন ব্রাইটিং প্রোডাক্টসহ বিভিন্ন ধরনের অর্গানিক পণ্য তৈরি করে থাকেন।

তিনি বলেন, ‘চার বছর ধরে ব্যবসা করছি। শুরুর দিকে ২৬০০ টাকা দিয়ে বাসার ছাদে ব্ল্যান্ডার মেশিন দিয়ে পণ্য তৈরি শুরু করেছিলাম। বর্তমানে আমার দেশ ও দেশের বাইরে ১ লাখের উপর গ্রাহক রয়েছে। বছরব্যাপী বিক্রি চলে। এ মেলাতেও ভালো বিক্রির প্রত্যাশা করছি।’

নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এসব মেলার আয়োজনের গুরুত্ব উল্লেখ করে শাহনাজ নামের অপর এক উদ্যোক্তা বলেন, ‘নারীরা যেভাবে ব্যবসার দিকে ঝুঁকছেন তাদের জন্য এসব মেলা খুবই কার্যকর। একজন মেয়েকে উঠে আসতে হলে প্লাটফর্ম প্রয়োজন, যেটা তাদের এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করবে। এখানে নারীদের আয়োজনে যে পরিবেশে মেলা হচ্ছে সেটি আসলেই প্রসংশনীয়।’

মেলায় অংশ নেওয়া গোল্ড এন্ড গ্লিটারের মালিক আল ইশরা বলেন, অনলাইনে যারা পণ্য বিক্রি করে তাদের সঙ্গে ক্রেতাদের সরাসরি দেখা হওয়ার খুব বেশি সুযোগ হয় না। মেলার মাধ্যমে অনলাইনে পরিচয় হওয়া মানুষদের মধ্যে দেখা হয়। এতে ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের মধ্যে একে অন্যের প্রতি আস্থার জন্ম হয়।

নিজের ব্যবসার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেয়েদের যাবতীয় সব ধরনের পোশাক সামগ্রী নিয়ে মেলায় এসেছেন তিনি। যেখান সব ধরনের কোয়ালিটির কাপড় পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, আমি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা বিক্রির লক্ষ্যে নিয়ে এসেছি। রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো না থাকলেও ক্রেতাদের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।

আর কে ফ্যাশনের মালিক তাজিন সুলতানা কুমকুম বলেন, আমার মূল আকর্ষণ হলো জামদানি শাড়ি। পাশাপাশি থ্রি পিচ, কসমেটিকস ও জুয়েলারি আইটেম রয়েছে। দিনব্যাপী অনেক গ্রাহক এসেছেন।

তিনি বলেন, মেয়েরা অনলাইনে নানা পণ্য নিয়ে কাজ করছেন। তারা এখন ঘরে বেকার বসে নেই। আমাদের কাজের স্বচ্ছতা ও নিজেদের পরিচয় সরাসরি তুলে ধরতে এমন মেলার বিকল্প নেই। রাজনৈতিক বিরূপ পরিস্থিতি থাকলেও ভালোই সাড়া পেয়েছি এখন পর্যন্ত।

হালাল হলিডেস ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস-এর মালিক তাসনিয়া রুবাইয়াত বলেন, ২ দিনের মেলায় একসঙ্গে সব কিছুই পাওয়া যাচ্ছে। আমর এখানে ওমরা প্যাকেজ, ভিসা প্রসেসিংয়ের কাজ করছি। আমাদের ফেনী ও ঢাকাতে অফিস আছে। প্রচারণার অংশ হিসেবে আমরা মেলায় অংশ নিয়েছি।

একে করপোরেশনের ফরিদা ইয়াসমিন রিমি বলেন, আমি হ্যান্ডমেড জুতা, ব্যাগ নিয়ে কাজ করছি। পাশাপাশি দেশের বাইরে থেকেও পণ্য আমদানি করে বিক্রি করি। মেলায় অনেক মানুষ আসছে, আমরা আমাদের পণ্যগুলো প্রদর্শন করছি।

মেলার বিষয়ে তিনি বলেন, এমন মেলার মাধ্যমে তরুণ উদ্যোক্তারা অনেক বেশি উপকৃত হবেন। অনেকে অনলাইনে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করেন, এতে অন্যদের সুনাম নষ্ট হয়। মেলায় ক্রেতা-বিক্রেতারা একে অপরকে চিনতে পারে, এরফলে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করা সম্ভব হয়।

নারীদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য এমন আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, নারীরা সমাজে এগিয়ে  যাচ্ছে। কিন্তু, অনেকেই অনেক বিরূপ কথাও বলেন। বাস্তবতা হচ্ছে নারীরা নিজেদের পণ্যে গুলো তুলে ধরছেন। নিজের ব্যবসাকে অন্যদের কাছে জানাচ্ছেন। মেলার মাধ্যমে নিজেকে পরিচিতি করার সুযোগ থাকে। অনলাইনে অনেক ধোঁকাবাজি হয়ে থাকে কিন্তু আমাদের পণ্যগুলোতে যে কোনো ভেজাল নেই তা জানানোর জন্যও খুব কার্যকর।

মেলায় অংশ নেয়া নিহারিকা সুমনা ও নূরা ক্রাফট অ্যান্ড জুয়েলারির মালিক নিহারিকা ও ফজিলাতুন নুর তাসমি বলেন, মেলায় জুয়েলারি আইটেমের মধ্যে নেকলেস, লিপিস্টিক, মেহেদী রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে হোম মেইড কেক। এমন আয়োজনে অংশ নিতে পেরে আমরা খুশি।