বিনোদন

ক্ষমা প্রার্থনার চিঠি প্রত্যাখ্যান করলেন কাজী নজরুল ইসলামের নাতি-নাতনি

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা গান ‘কারার ওই লৌহ-কপাট’। বলিউড নির্মাতা রাজা কৃষ্ণা মেনন তার ‘পিপ্পা’ সিনেমায় ব্যবহার করেছেন এটি। নতুন করে এ গানের সুর করেছেন এ আর রহমান। গানটির সুর বিকৃতি করায় দারুণ তোপের মুখে পড়েছেন এই গায়ক।

গত কয়েক দিন ধরে বিষয়টি নিয়ে কড়া সমালোচনা করছেন দুই বাংলা সংগীত ব্যক্তিত্বরা। ক্ষুব্ধ দুই বাংলা গানের শ্রোতারাও। বাংলাদেশ ও ভারতে দাবি ওঠেছে, অবিলম্বে চলচ্চিত্র থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে বিকৃত করে সুর দেওয়া ‘কারার ওই লৌহ-কপাট’ গানটি। কিন্তু এখনো নীরব এ আর রহমান। তবে গতকাল রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (টুইটার) পোস্ট করা এক বিবৃতিতে ক্ষমা চেয়েছেন সিনেমাটির নির্মাতারা। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করেছেন কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি অনিন্দিতা কাজী ও নাতি অনির্বাণ কাজী।

‘পিপ্পা’ সিনেমার নির্মাতাদের চিঠিটি শেয়ার করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন অনিন্দিতা কাজী। লেখার শুরুতে তিনি বলেন, ‘‘এ ধরনের ক্ষমা প্রার্থনা ও চিঠি গ্রহণযোগ্য নয়। মিডিয়ার এক বন্ধুর কাছ থেকে এটি পেয়েছি। কিন্তু এর সত্যতা কি? এ চিঠিতে ‘লেটার হেড’ নেই, কারো কোনো স্বাক্ষর নেই। আমি মনে করি, এই চিঠি বিশ্বাস করার আগে সেই প্রশ্নের উত্তর জানা প্রয়োজন। আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আমি এটি শেয়ার করছি। তাদের কি ‘লেটার হেড’ নেই? এটি আশ্চর্যজনক বিষয়! এই চিঠি মূল্যহীন।’’

‘পিপ্পা’ সিনেমার নির্মাতাদের চিঠিটি প্রত্যাখ্যান করার কথা উল্লেখ করে অনিন্দিতা কাজী বলেন, ‘যে চিঠি সাদা একটি কাগজে লেখা, সত্যতা ছাড়া সেই চিঠি আমরা গ্রহণ করব না। এটি কোনোভাবেই অফিশিয়াল চিঠি বা বিবৃতি হতে পারে না। টিমের সদস্যদের স্বাক্ষর সমেত আমরা অথেনটিক চিঠি এবং মূল চুক্তিপত্র চাই।’

গতকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা চিঠিতে ‘পিপ্পা’ সিনেমার নির্মাতারা বলেছেন, ‘এই গানকে ঘিরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেখানে প্রযোজক, পরিচালক ও সংগীত পরিচালক হিসেবে আমরা নজরুল পরিবারের থেকে প্রয়োজনীয় স্বত্ব নেওয়ার পরই শিল্পের খাতিরে গানটি তৈরি করেছি। প্রয়াত কাজী নজরুল ইসলাম ও তার সৃষ্টির প্রতি আমাদের মনে গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে।’

ক্ষমা প্রার্থনা করে নির্মাতারা বলেন, ‘আমরা মূল গানটিকে ঘিরে শ্রোতাদের আবেগকে সম্মান করি। শিল্প যেহেতু ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভরশীল, সেখানে আমাদের পদক্ষেপ যদি কারো আবেগে আঘাত করে থাকে, তার জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।’

কাজী নজরুল ইসলামের পুত্রবধূ কল্যাণী কাজী ও তার পুত্র কাজী অনির্বাণের কাছ থেকে যাবতীয় নিয়ম মেনে এই গানের স্বত্ব নেওয়া হয়েছে। গানের কথা ব্যবহার ও সুরের পরিবর্তন চুক্তি অনুযায়ী করা হয়েছে বলেও এ চিঠিতে জানানো হয়েছে।

কাজী নজরুল ইসলামের নাতি ও কল্যাণী কাজীর পুত্র অনির্বাণ কাজী সুর পরিবর্তনের অনুমতির কথা অস্বীকার করেছেন। টাইমস অব ইন্ডিয়াকে অনির্বাণ কাজী বলেন, ‘এ গানের সুর বদলানোর অনুমতি আমার মা কখনো দেননি। এ ধরনের অসম্মানজনক ঘটনার পর এক্সে (টুইটার) পোস্ট করে ক্ষমা চাওয়া যথেষ্ট নয়। তারা এখন সিনেমাটি থেকে গানটি সরিয়ে ফেলতে পারে। পাশাপাশি ক্রেডিট লাইন থেকে আমার ও আমার মায়ের নাম মুছে ফেলতে পারে।’