সারা বাংলা

পঞ্চগড় থেকে খালি চোখে দেখা যাচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা

দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও খালি চোখে দেখা যাচ্ছে নেপাল এবং ভারতের সিকিম সীমান্তে অবস্থিত বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার নৈসর্গিক রূপ। গত কয়েক দিন ধরে মাঝে মধ্যে দৃশ্যমান হচ্ছে এটি। ফলে খালি চোখে হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘার নানান রূপ দেখছে পর্যটকরাসহ এখানকার মানুষ।

বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) সকালে সূর্য ওঠার পর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা দিয়েছে। সূর্যকিরণের তেজ বৃদ্ধির সঙ্গে এটি স্পষ্ট চোখে পড়েছে। এদিন সকালে বেশ ভালোভাবেই দৃশ্যমান ছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা। এর আগে, গত বুধবারও বেশ স্পষ্ট হয়ে দেখা দেয় পর্বতশৃঙ্গটি। এ ছাড়া মাসের শুরুর দিকেও মাঝে মাঝে দেখা মিলেছে কিছু সময়ের জন্য।

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে প্রতিবছর শীতের আগে আগে মেঘমুক্ত নীলাকাশের নিচে দেখা যায় তুষারাচ্ছাদিত শ্বেতশুভ্র হিমালয় পর্বত ও কাঞ্চনজঙ্ঘা। মেঘ আর কুয়াশামুক্ত উত্তর-পশ্চিম আকাশে তাকালে মনে হবে চোখের সামনেই সাদা পাহাড়। বিশেষ করে ভোরের আকাশে বরফ আচ্ছাদিত নয়নাভিরাম পর্বতটি দেখা বেশ উপভোগ্য। কখনও তা রুপালি চকচকে রূপ ধারণ করে।

মোহনীয় রূপে আচ্ছাদিত এই কাঞ্চনজঙ্ঘা ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলায়। ভোরে সূর্যোদয়ের সময় মনে হয় যেন কাঞ্চনজঙ্ঘার সাদা বরফ সোনায় ছেয়ে গেছে। দিনের প্রথম সূর্যকিরণ বরফে এমনভাবে প্রতিফলিত হয় তা দেখতে যেন সোনার পাহাড়। বেলা বাড়লে আবার সেই রূপ বদলায়। দিনের মধ্যভাগে মনে হয় প্রকান্ড মেঘ উত্তরের আকাশটা দখল করে দাঁড়িয়ে আছে। বিকেলের ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ যেন লজ্জারাঙা।

কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পর্যটকরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং শহরের টাইগার হিলে ভিড় করেন। পর্বতটির চূড়া দেখার সবচেয়ে জুতসই জায়গা এটাই। কেউ কেউ সান্দাকপু বা ফালুট যান। অনেকে সরাসরি নেপালে গিয়ে এটি উপভোগ করেন। তবে দেশের ভূখণ্ড থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা অবলোকনের উত্তম জায়গা হলো তেঁতুলিয়ার মহানন্দা নদীর পাড়ের ডাকবাংলো ও পিকনিক কর্ণার। ফলে আশেপাশের জেলা ও দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা আসছেন এখানে। তেঁতুলিয়া থেকে চোখের সামনে এই অপরূপ দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন তারা।

এদিকে, কাঞ্চনজঙ্ঘা ঘিরে পর্যটক সমাগম বেড়েছে উত্তরের এ জেলায়। ফলে পর্যটকদের নির্বিঘ্নে ভ্রমণের জন্য নিরাপত্তাসহ যাবতীয় সেবা দিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন, থানা পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশ। তেঁতুলিয়ায় স্থাপিত হওয়া ট্যুরিস্ট পুলিশ পঞ্চগড় জোন পর্যটকদের নিরাপত্তাসহ তাদের সমস্যা নিরসনে কাজ করছে।

স্থানীয়রা জানান, নভেম্বরের শুরু থেকে মাঝে মধ্যেই দৃশ্যমান হচ্ছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা, তবে আকাশে মেঘ থাকায় দিনভর ছিল না। ফলে অনেক পর্যটক কাঞ্চনজঙ্ঘার সাক্ষাত না পেয়ে ফিরে গেছেন।

কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে আসা গাজীপুরের পর্যটক ফেরদৌস রহমান বলেন, ‘খালি চোখে এই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে সুদুর গাজীপুর থেকে এসেছি। আমার আসা সার্থক হয়েছে। এত সুন্দর কাঞ্চনজঙ্ঘা, এ অনুভূতি প্রকাশ করার মতো নয়। দেশের মাটি থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।’

বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে আসছেন ফারহান ইসতিয়াক। তিনি বলেন, ‘আমরা ভোরে কাঞ্চনজঙ্ঘা উপভোগ করেছি। খুব ভালো লেগেছে। অনেক আনন্দ পেয়েছি। আসা সার্থক হয়েছে। সময় পেলে আবারও আসবো। কারন দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া পর্যটন এলাকা হিসেবে এখানে অনেক কিছুই দেখার মতো রয়েছে। যা আমাদের মুগ্ধ করছে।’

স্থানীয় আলোকচিত্রী ফিরোজ আল সাবাহ বলেন, শ্বেত শুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করার মোক্ষম সময় ভোর ও বিকেল বেলা। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানান রঙ নিয়ে হাজির হয় বরফে আচ্ছাদিত এ পর্বতচূড়া। কখনো শুভ্র, কখনো গোলাপি, আবার কখনো লাল রঙ। ভোরের আলো ফুটতেই তা গিয়ে পড়ে ঠিক কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়ায়। চারপাশে আবছা অন্ধকার থাকলেও চকচক করে চূড়াটি। ভোরের আলোয় এবং বিকেল পর্বত চূড়াটি পোড়া মাটির রঙ নেয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু ঝাপসা হয়ে আসে। তখন রং হয় সাদা। দূর থেকে মনে হয় এ যেন আকাশের গায়ে খন্ড বরফ।

পঞ্চগড় ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের অফিসার ইনচার্জ মো. সাজেদুর রহমান বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যেসব পর্যটক আমাদের এখানে আসেন তাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত পর্যটনস্পট ডাকবাংলো পিকনিক কর্ণারে ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন করা থাকে। আমরা নতুনভাবে উদ্যোগ নিয়েছি কোন পর্যটক যেন স্থানীয় কিংবা দুস্কৃতিকারী দ্বারা হয়রানির শিকার না হন, এ জন্য আমরা হেল্প ডেস্ক তৈরি করেছি।’