পজিটিভ বাংলাদেশ

স্মার্ট ইউনিয়ন গোপালগঞ্জের ননীক্ষীর

গোপালগঞ্জের প্রথম স্মার্ট ইউনিয়ন গড়ে তোলা হয়েছে মুকসুদপুর উপজেলার ননীক্ষীর ইউনিয়নকে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে একটি ওয়েবসাইট ও অ্যাপ। যা দিয়ে ঘরে বসেই ল্যাপটপ অথবা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইউনিয়নবাসী নিতে পারছেন ৩৬ ধরনের নাগরিক সেবা। এছাড়া, বেকারদের দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ। পাশাপাশি ইউনিয়নের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। 

সমাজসেবীরা বলছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরিতে এমন উদ্যোগ দেশের অন্য চেয়ারম্যানদের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। উপজেলা প্রশাসন বলছে, শুধু ননীক্ষীর ইউনিয়ন পরিষদই নয় সাফল্য পেলে বাকি ইউনিয়নও স্মার্ট ইউনিয়নের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের পর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে স্মার্ট হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। যার ভিত্তি থাকবে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজ। এ পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে মুকসুদপুর উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কাজ করে যাচ্ছে ননীক্ষীর ইউনিয়ন পরিষদ।

বেকার তরুণ-তরুণীদের জন্য করা হয়েছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা

স্মার্ট ইউনিয়ন গড়তে ননীক্ষীর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের শেখ রনি আহমেদের উদ্যোগে ইউনিয়নের জন্য তৈরি করা হয়েছে ননীক্ষীর স্মার্ট ইউনিয়ন পরিষদ নামে একটি ওয়েবসাইট ও অ্যাপ। যেখানে ওই ইউনিয়নের প্রতিটি পরিবারের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক তথ্য, ছবি, মোবাইল নম্বর, পরিবারের সদস্য সংখ্যা, আয় ব্যয়ের তথ্য, ভাতা সুবিধা, হোল্ডিং ট্যাক্স, আয়কর, কৃষি-অকৃষি জমিসহ ৩৬ ধরনের ডাটা রয়েছে। পাশাপাশি একই অ্যাপস এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ভোগান্তি ছাড়া ঘরে বসেই মোবাইল অথবা ল্যাপটপ দিয়ে জন্ম ও মৃত্যু সনদ ও বিভিন্ন ধরনের ভাতার জন্য আবেদন করতে পারছেন। ফলে কমে আসছে ভোগান্তি।

এদিকে, ইউনিয়নের প্রতিটি পরিবারের বেকার তরুণ-তরুণীদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে গড়ে তোলা হয়েছে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার নামে একটি ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সেখানে বিনামূল্যে ৭২ জনকে দুই মাসব্যাপী কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এর আগের ব্যাচে ৭৫ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ নিয়ে চাকরির পেছনে না ঘুরে নিজেদেরকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন বেকার যুবক-যুবতীরা এমনটাই প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

ইউনিয়নবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সড়কে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা

এছাড়া, ইউনিয়নের প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক, স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে বসানো হয়েছে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন। ইউনিয়নটির সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। যার সরাসরি মনিটরিং করা হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে। ক্যামেরা স্থাপনের পর থেকে ইউনিয়নে কমেছে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।

কম্পিউটার প্রশিক্ষণার্থী আশিক সরদার জানান, ননীক্ষীর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ রনি আহমেদের উদ্যোগে বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। আমরা যারা বেকার যুবক-যুবতীরা রয়েছি তারা এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারছি। প্রশিক্ষণ নিয়ে ফ্রিল্যার্সিংয়ের মাধ্যমে বেকারত্ব ঘুচিয়ে স্বাবলম্বী হতে পারছি।

অপর কম্পিউটার প্রশিক্ষণার্থী রিমি আক্তার বলেন, বাংলাদেশের এখন চাকরির বাজার খুব স্বল্প। তারপরেও চাকরি পেতে গেলে কম্পিউটার শেখাটা জরুরি। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমরা নিজেদের তৈরি করতে পারছি।

কম্পিউটার প্রশিক্ষক দিদারুল ইসলাম রাজীব ও রাব্বি হোসেন বলেন, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার নামে একটি ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিনামূল্যে ৭২ জনকে দুই মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এর আগের ব্যাচে ৭৫ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ নিয়ে চাকরির পেছনে না ছুটে বেকার যুবক-যুবতীরা যাতে নিজেদের গড়ে তুলতে পারেন সে চেষ্টাই করা হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত হোসেন বলেন, ইউনিয়নের ওয়েবসাইটে আমাদের তথ্য থাকায় আমরা অনেক সুবিধা পাচ্ছি। সহজেই আমরা জন্ম ও মৃত্যু সনদ পাচ্ছি কোন ভোগান্তি ছাড়াই। সরকারি ভাতা দেওয়ায় ক্ষেত্রেও সমন্বয় এসেছে। যারা যোগ্য তারাই ভাতা পাচ্ছেন। এতে সরকারি সুযোগ সুবিধা সুষম বন্টন হচ্ছে। সহজেই ঘরে বসে আমরা ৩৬ ধরনের সুবিধা পাচ্ছি।

ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে সিসিটিভিতে নজরদারি করার ফলে কমেছে চুরি ও বিভিন্ন অপরাধ

ননীক্ষীর বাজারের ব্যবসায়ী আকিদুল ইসলাম বলেন, ননীক্ষীর ইউনিয়নের পুরো এলাকা জুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এতে আমাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। এখন রাতে দোকানে থাকতে হয় না। আমরা নিশ্চিন্তে দোকান রেখে বাড়িতে যেতে পারি। এতে এলাকায় চুরি ডাকাতিসহ অপরাধমূলক কর্মতাণ্ড কমে গেছে।

ননীক্ষীর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ রনি আহমেদ বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার এটি তারই এক অংশ বিশেষ। এখান থেকে মানুষ ৩৬ ধরনের সুবিধা পচ্ছেন। এতে ইউনিয়নবাসীর ভোগান্তি কমেছে। এছাড়া, যারা যে ভাতা পাওয়ার যোগ্য তারা সেই ভাতা পাচ্ছেন। শুধু ননীক্ষীর নয় সব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের উচিত নাগরিক সুবিধা নিশ্চেত করতে এমন উদ্যোগ নেওয়া।

একটি সড়কে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরা 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সভাপতি ড. মো. আবু সালেহ বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এমন উদ্যোগ বড় ভূমিকা রাখার পাশাপাশি দেশের অন্যসব ইউনিয়নের জন্য এটি অনুকরণীয় হতে পারে। এমন ব্যবস্থা সব ইউনিয়নে করা গেলে নাগরিক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। কমে আসবে ভোগান্তি।

মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম ইমাম রাজী টুলু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে মুকসুদপুর উপজেলার ননীক্ষীন ইউনিয়নকে স্মার্ট ইউনিয়ন হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। একটি ওয়েবসাইট ও একটি অ্যাপের মাধ্যেমে এ ইউনিয়েনের সাধারণ মানুষ ঘরে বসেই ৩৬ ধরনের সেবা পাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, ননীক্ষীর ইউনিয়ন পরিষদই নয় সাফল্য পেলে বাকি ইউনিয়নও স্মার্ট ইউনিয়নের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এমন উদ্যোগে সাধারণ মানুষের নাগরিক সেবা গ্রহণে যেমন ভোগান্তি কমাবে, তেমনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বড় ভূমিকা রাখবে।