শিল্প ও সাহিত্য

রক্ত ও পোড়ামাটির গন্ধ

একাত্তর সালের মে মাস। সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। মানুষ দলে দলে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে প্রবেশ করছে। গ্রামের যুবক ছেলেরা যারা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে তারাও গ্রামে এসে দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে পালিয়ে যাবার নাম করে ভারতে প্রবেশ করছে। 

গ্রামের রইচ উদ্দিন মাতুব্বার ইদানিং পাড়ায় পাড়ায় খোঁজখবর রাখছে। মুসলমানরা সব ভাই ভাই বলে গণ্ডগোল না করার তাগিদ দিচ্ছে। তারসাথে যোগ দিয়েছে গ্রামের হারুমিয়াসহ আরও দুতিনজন। 

রফিক বাড়িতে আছে। জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে তার বিয়ে। পাত্রীর বাড়িও একই গ্রামের পশ্চিম পাড়ার বদর মাস্টারের কলেজ পড়ুয়া হাবিবার সাথে। দেশের পরিস্থিতি ভালো না। চারদিক থেকে খবর আসছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিভিন্ন এলাকায় ক্যাম্প করে নির্বিচারে সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে। 

যারা স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিচ্ছে। পাশের গ্রামের নগড়হাট মোড়ে ক্যাম্প করে ঘাঁটি গেড়েছে পাকিস্তানি আর্মিরা। 

রইচ উদ্দিন মাতুব্বর ইতোমধ্যে তার সহযোগিদের সাথে করে ক্যাম্পে দেখা করে পাকিস্তানি বাহিনীদের সাথে কুশল বিনিময় করে এসেছে। এলাকায় এখন তিনি দাপট দেখাচ্ছেন। পাকিস্তান মুসলিম রাষ্ট্র। মুসলমানরা সব ভাই ভাই। তাই তাদের সাথে কোনো গণ্ডগোল নেই। 

হঠাৎ বদর মাস্টের এসে একদিন সকালে বাড়িতে হাজির। রফিককে ডেকে বলছে বাবা দেশের পরিস্থিতি ভালো না। তোমাকে নিয়ে তো চিন্তায় আছি। তুমি নাকি মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিতে ভারতে যাবা।

রফিকের বাবা নেই। বাড়িতে একমাত্র মা সজ্জিনা বেগমের বয়স ষাটের কাছাকাছি। রফিক কুষ্টিয়া কলেজ থেকে এবার ডিগ্রি ফাইনাল পরীক্ষা দেবে। পাকিস্তানি শাসকচক্রের বিরুদ্ধে কলেজের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের সাথে রফিক জড়িত। 

রফিকের মা,  এবার বাধ সাধে, তোর বাবা নেই, আমি একা মানুষ। বউমারে দ্রুত বাড়ি নিয়ে আই। আমাদের কোন ঝামেলা দরকার নেই। রফিক বলে- মা তুমি চিন্তা করো না। দেখি দেশের পরিস্থিতি কি হয়! বাংলাদেশ যদি স্বাধীন না হয় তাহলে আমরা কোনদিন মুক্তি পাবো না। দেশের এই পরিস্থিতিতে তো আর আমি ঘরে বসে থাকতে পারি না। বদর মাস্টেরকে বলে আংকেল আপনি বাসায় যান, আমি আপনাকে জানাবো। 

বদর মাস্টার শিক্ষিত মানুষ। সে বোঝে দেশের অবস্থা। নিমের ডাল দিয়ে দাত মাজতে মাজতে সে এসেছে রফিকের বাড়িতে।  নিমের ডাল কামড়াতে কামড়াতে সে বলে দেখো বাবা ভেবে চিন্তে, আমি তো আর তোমাকে জোর করতে পারিনে।  তুমি একসময় গিয়ে তোমার চাচি আর হাবিবার সাথে দেখা কইরে এসো। 

রফিকের বন্ধু রাহাত ইতোমধ্যে গত পরশু রাতে গ্রাম থেকে খালাবাড়ি যাওয়ার কথা বলে এলাকার কয়েকজন মিলে ভারতে পাড়ি জমিয়েছে ট্রেনিং নিতে। 

রফিকের জন্য অপেক্ষা করছে গ্রামের খবির ও সলিম। সলিম মেট্টিক ফেল করে আর পড়ালেখা না করলেও দেশের খোঁজখবর রাখে। খবির রফিকের সাথে কুষ্টিয়া কলেজে পড়ে। এলাকায় রইচ উদ্দিন মাতুব্বর দলে লোক ভারি করছে। সকাল বিকাল এ পাড়ায় ও পাড়ায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে।  বিভিন্ন কথাবার্তায় পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন দেওয়ার কথা জানান দিচ্ছে। তা না হলে গ্রামের পরিস্থিতি খারাপ হবে। তখন তার কিছু করার থাকবে না বলেও কৌশলে হুশিয়ারি দিচ্ছে।

জুন মাসের ৯ তারিখে রফিক, সলিম ও খবির তিন বন্ধু সিদ্ধান্ত নেয় আর তারা বসে থাকবে না। ভারতে গিয়ে ট্রেনিং শেষে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করবে। কিন্তু গ্রামের রইচ উদ্দিন মাতুব্বরের কাজকর্ম তাদের একদমই ভালো লাগছে না। 

খবির আজ দেখেছে রইচ চাচা পাকিস্তানি ক্যাম্প থেকে এসেছে। ক্যাম্প থেকে নাকি তাকে এলাকার দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছে। রফিক বলে উঠলো চল, আগে রইচ চাচাকে সাবধান করে দিয়ে আসি। সে যদি কথা না শোনে তাকেও কিন্তু আমরা ছাড়বো না। 

বিকেলে রইচ উদ্দিনের সাথে দেখা করে সালাম দিয়ে রফিক বলে, চাচা আপনি নাকি পাকিস্তানি আর্মিদের সাথে হাত মেলাইছেন?

মিষ্টি হাসি দিয়ে রইচ উদ্দিন বলে গ্রামের মাতুব্বর হিসেবে তো আমার একটা সম্মান আছে নাকি, দায়দায়িত্বও আছে, তাই আর কি। তাছাড়া আমরা মুসলমান। মুসলমান হয়ে পাকিস্তান কেন ভাঙবো?  

এবার সলিম রেগে গিয়ে বলে চাচা আপনি ঠিক করতেছেন না। আপনি এখনো সময় আছে ফিরে আসেন। এদেশ স্বাধীন হবেই। তাছাড়া ভোটে তো আমরাই জিতেছি। আমাদের নেতা শেখ মুজিব সাত মার্চের ভাষণে স্পষ্ট সব বলে দিয়েছে। ইতোমধ্যে মুজিব নগর সরকারের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ চলছে। এ যুদ্ধে আমরা জয়ী হবোই। 

দেখো বাবা, তোমরা ছেলে মানুুষ, রক্ত গরম। মাথা গরম করলিতো আর চলে না। ঠান্ডা মাথায় ভেবে চিন্তে চলতি হয়। তোমার হবু শ্বশুড় বদর মাস্টেরকেও বলেছি তোমাকে বোঝানোর জন্য। তাছাড়া সে মাস্টের মানুষ। আমার পাশে থাকলে তো আমার পক্ষে ভালো হয়। 

আমি বলি কি তোমরা ওসব বাদ দিয়ে আমার সাথে চলি আসো। আমি তোমাদের টাকা পয়সা দিবো। অস্ত্র লাগলে অস্ত্র দিবো। তোমরা মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্দো করবা। 

রফিক এবার নিজেরে আর ধরে রাখতে পারে না। চাচা আপনাকে মুরব্বি হিসেবে সম্মান করি কিন্তু আপনি একথা ভাবলেন কি করে যে আমরা আপনার দলে যোগ দিয়ে দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবো? আপনাকে আমরা সতর্ক করতে আসলাম। আপনি ভেবে চিন্তে দেখেন কি করবেন। 

রফিক,সলিম ও খবির তিনবন্ধুই বুঝে গিয়েছে রইচ উদ্দিন মাতুব্বর কোনমতেই তাদের কথা শুনবে না। সুতরাং তাদেরও সেইভাবে মোকাবেলা করতে হবে। আজ রাতেই তারা ভারতের করিমপুর ইয়ুথ ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। 

সন্ধ্যার পর রফিক দেখা করার জন্য বদর মাস্টারের বাড়িতে যায়। বদর মাস্টের বারান্দায় রেডিও সামনে নিয়ে চেয়ারে বসে বসে সিগারেট টানছে। রফিককে দেখে বলে বাবা এসো। ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে বদর মাস্টেরের স্ত্রী রাবেয়া বেগম। দরজার চৌকাঠ ধরে দাঁড়িয়ে আছে কলেজ পড়ুয়া হাবিবা। 

রাবেয়া বেগম রফিকের মাথায় হাতে রেখে বলে আর মাত্র কয়ডা দিন, মায়েডারে তোমার হাতে তুলে দিতি পারলিই বাঁচি। দ্যাশের অবস্তা তো ভালো ঠ্যাকতিছি না। তোমার চিন্তায় মায়াডা মুখভার করে থায়ে। 

রউচ উদ্দিন মাতুব্বর এসে তোমার যুদ্দে যাতি নিষেদ করে গ্যাছে তোমার আংকেলের কাছে। আমার ভালো ঠ্যাকতিছে না সবকিছু। 

চাচি আপনি ভিতরে যান, আমি চাচার সাথে কথা বলি একটু।  চাচা আপনি কি বলেন, দেশের এই পরিস্থিতিতে কি ঘরে বসে থাকতে পারি? তাছাড়া গ্রামের রইচ উদ্দিন মাতুব্বরের কাজকর্ম তো মেনে নেওয়া যায় না। 

বদর মাস্টার এবার চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে বলে,  দেখো বাবা তোমার যা ভালো মনে হয় তাই করো। আমার যদি বয়স থাকতো তাহলে তোমার সাথে যুদ্ধে যেতাম। কিন্তু তা তো আর পারতেছি না। সরকারি চাকুরি করি, তাছাড়া মেয়েটারে নিয়ে তো চিন্তায় আছি। রইচ উদ্দিন মাতু্ব্বর এসে আমাকে ধমক দিয়ে গেছে যেন আমি তোমারে বোঝায় আর পাকিস্তানি আর্মি ক্যাম্পে গিয়ে দেখা করে আসি। 

আপনি কি বলেছেন চাচা?

আমি তাকে পরিষ্কার বলে দিয়েছি। আমি ক্যাস্পে যেতে পারবো না। তুমি মুক্তিযুদ্ধে গেলে আমি বাধা দিতেও পারবো না। তাছাড়া আমাদের দেশকে স্বাধীন করতে হবে, তোমাদের আমাদের কতো দায়িত্ব। বয়স থাকলে আমিও তোমার সাথে মুক্তিযুদ্ধে যেতাম। আমি চিন্তা করেছি, রইচ উদ্দিন মাতুব্বরের বিরুদ্ধে আমরাও এলাকায় প্রতিরোধ গড়ে তুলবো। কিন্তু শক্ত মানুষ পাচ্ছি না। দেখি কি হয়। যাক বাবা এসব কথা। তুমি হাবিবার সাথে কথা বলে দেখো কি বলে।

রফিক এবার হাবির সামনে গিয়ে বলে তুমি কি চাও না আমি দেশের জন্য যুদ্ধ করি? হাবিবা মাথা নেড়ে নিচু স্বরে বলে চাই কিন্তু আমার কি হবে? আপনি কবে ফিরবেন? দেশ যদি স্বাধীন না হয়! আপনি আমারে সাথে নিয়া যান। 

শোন হাবিবা, আমরা ট্রেনিং নিতে যাচ্ছি ভারতে। আজ রাতে রওনা হবো। ট্রেনিং শেষ করেই এলাকায় ফিরে আসবো। তুমি চিন্তা করে না, কিচ্ছু হবে না। তাছাড়া আমরা হেঁটে যাবো। তোমাকে নিয়ে তো এতো পথ যাওয়া যাবে না। যাওয়াও ঠিক হবে না। তুমি বাড়িতে থাকো। দেশ স্বাধীন করেই তোমাকে ঘরে নিবো। 

হাবিবা এবার জাপ্টে ধরে রফিকের বুকে মাথা রেখে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। আমার কোনো কিছু ভালো মনে হচ্ছে না। রফিক হাবিবার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে তুমি শক্ত থাকো, জয় আমাদের হবেই। আমি চলি। 

রফিকরা তিনদিন ধরে পায়ে হেঁটে ভারতের করিমপুর ইয়ুথ ক্যাম্পে গিয়ে ওঠে। তারপর মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে। প্রশিক্ষণকালীন কেটে যায় দেড় মাস। 

প্রশিক্ষণ শেষে ২১ সদস্যের একটি বাহিনীর কমান্ডারের দায়িত্ব পাই রফিক। কিন্তু সঙ্গের বন্ধু খবির ভাগ হয়ে যায় অন্য গ্রুপে। সলিমকে সঙ্গে পায়। রফিকের যুদ্ধ এলাকা চুয়াডাঙ্গা অঞ্চল। এলাকায় মুভ করার জন্য মনটা ছটফট করে ওঠে।

বাবা হারা মায়ের মুখ ভেসে আসে। হাবিবাকে যে কথা দিয়ে আসছে সে কথা মনে পড়ে তার। বদর আংকলের জন্য চিন্তা হয়। কেমন আছেন তারা।

রফিক মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে। দেশ স্বাধীন করতে হবে। এভাবে আর কতোদিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতন জুলুম? এদেশ আমাদের, এদেশের মাটিকে শত্রু মুক্ত করতে হবে। 

রফিক যুদ্ধে যাবার পরের সপ্তাহে রইচ উদ্দিন মাতুব্বরের নেতৃত্বে পাকিস্তানি আর্মিরা বাড়িতে এসে বাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে গেছে। বাড়ির ষাড় গরুটা পাকিস্তানি আর্মিদের খাদ্য হিসেবে ক্যাম্পে দিয়ে এসেছে রইচ উদ্দিন মাতুব্বর। এলাকার পরিস্থিতি আচ করতে পেরেই রফিকের মাকে নিজ বাড়িতে স্থান দিয়েছে বদর মাস্টের। 

সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি একদিন সকালে রইচ উদ্দিন মাতুবব্বরের নেতৃত্বে কয়েকজন আর্মি দিয়ে পাকিন্তানি ক্যাম্পে নিয়ে গেছে বদর মাস্টারকে। এলাকায় রইচ উদ্দিন মাতুব্বর ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। বিভিন্ন বাড়ি থেকে যুবতী মেয়ে ধরে ক্যাম্পে দিয়ে আসে। বাড়ি ঘর পোড়ায়ে দেই। মানুষেদর পুকুর থেকে জোর করে মাছ ধরে ক্যাম্পে পাঠায়। তার পিস কমিটিতে যোগ দিয়েছে আশেপাশের গ্রাম থেকে অনেকেই। রইচ উদ্দিন মাতুব্বর এলাকার পিস কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছে। পাকস্তানি আর্মিদের কাছ থেকে অস্ত্র পেয়েছেন। 

সন্ধ্যায় পিস কমিটির রইচ উদ্দিন মাতুব্বরের কয়েকজন লোকের সাথে পাকিস্তানি আর্মিদের একটি গাড়িতে  করে এসে বদর মাস্টেরের কলেজ পুড়য়া মেয়েকে ধরে নিয়ে গেছে ক্যাম্পে। সে সময় রফিকের মা ও বদর মাস্টারের স্ত্রীর কান্নাকাটি চিৎকার চেচামেচিতে ক্ষিপ্ত হয়ে গামছা দিয়ে হাত মুখ বেঁধে ঘরে আটকায়ে আগুন ধরিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ধুলিসাৎ করে দিয়ে গেছে। গ্রাম মানুষ শূন্য। বেশির ভাগ বাড়িতে লুট করেছে পিস কমিটির সদস্যরা। 

রফিক ইতোমধ্যে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে ছোটবড় চারটি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে হানাদার মুক্ত করেছে কিন্তু হারাতে হয়েছে তিন সহযোদ্ধাকে। পাকস্তানিদের গুলিতে আহত হয়েছে সলিম। সলিমের ভাগ্য ভালো না হলে গুলিটা বুকের মধ্য দিয়েই ঢুকে যেতো। অল্পের জন্য বাম হাতের উপর দিয়ে গেছে। পুরো সুস্থ এখনো হতে পারেনি। 

এদিকে মিত্র বাহিনী গঠিত হয়েছে। ভারতের বিমান আকাশে দেখা যাচ্ছে।  চারিদিক থেকে বিভিন্ন এলাকা মুক্ত হওয়ার সংবাদ আসছে। ১০ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার চৌড়হাস এলাকায় মিত্রবাহিনীর সাথে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বৃহৎ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। এ যুদ্ধে মিত্র বাহিনীর অনেক সদস্য মৃত্যুবরণ করেছে।  পাকস্তানি বাহিনী পালিয়ে পাবনার দিকে পালিয়েছে। ১১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া মুক্ত হয়। 

১২ ডিসেম্বর দুপুরে বিজয়ের পতাকা মাথায় বেঁধে  বাড়ি ফেরে রফিক ও সলিম। পুরো গ্রাম লন্ডভন্ড। মানুষজন চারদিক থেকে আসা শুরু করেছে। বাড়িতে আগুনে পোড়া পোড়ামাটির গন্ধ। মায়ের কোন দেখা নেই। রফিকের এবার বুঝতে পারে সবই রউচ উদ্দিন মাতুব্বর ও পাকিস্তানি আর্মিদের কাজ। বাবা হারা রফিকের মায়ের মুখ ভেসে আসে। চোখ দিয়ে জল আসে। দুচোখ অন্ধকার হয়ে আসে রফিকের।

রফিক এবার হাবিবার সন্ধানে বদর মাস্টারের বাড়ির দিকে হাঁটে আর ভাবে চাচা-চাচী আর হাবিবা! হাবিবার সাথে সেই রাতের কথা তার মনে পড়ে। মুখখানি ভেসে আসে। ফিরে আসবো কথা দিয়েছিলাম তো!

হঠাৎ সলিম পেছন থেকে ডাকে, রফিক ক্যাম্পে নাকি বহু মানুষের লাশ আর থোক থোক রক্ত পড়ে আছে!