সারা বাংলা

কাপ্তাইয়ে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর উদ্বোধন

কাপ্তাই উপজেলা সদর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলায় গড়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর।

রোববার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান কাপ্তাইয়ে এই বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর উদ্বোধন করেন। এসময় তিনি এই স্মৃতি জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু কর্ণার এবং মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার ঘুরে দেখেন।

বাঙালির জাতীয় ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম অধ্যায় হলো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। এই মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্মলাভ করেছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’র নেতৃত্বে একটি লাল সবুজের পতাকা অর্জনে আত্মাহুতি দিয়েছেন অনেক মুক্তিযোদ্ধা। এখনও আহত হয়ে বেঁচে আছেন একাত্তরের রণাঙ্গনের অকুতোভয় অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা।

আগামী প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা এবং জাতির পিতাসহ সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানকে তুলে ধরার লক্ষ্যে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান’র পরিকল্পনায় এবং কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন’র সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই জাদুঘর স্থাপন করা হলো।

যেখানে কাপ্তাই উপজেলার সকল মুক্তিযোদ্ধাদের বিশদ জীবনীসহ দেওয়ালে ছবি টাঙানো আছে। এছাড়া জীবিত মুক্তিযোদ্ধার হাতের ছাপ, তাদের নিজের হাতের লেখা চিঠি, তাদের ব্যবহৃত চশমা, ঘড়ি, সানগ্লাস, পোশাকসহ যাবতীয় স্মৃতি চিহ্ন একটি কাঁচের তৈরি টেবিলে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

আর এই স্মৃতি জাদুঘরে রয়েছে একটি বঙ্গবন্ধু কর্ণার। যেখানে বঙ্গবন্ধুর জন্ম ১৯২০ সাল হতে জন্মপরবর্তী তার রাজনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিকসহ নানা আন্দোলনের দুর্লভ ছবি ফ্রেমে বন্দী করা হয়েছে। যাতে করে আগামী প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর জীবন-দর্শন সম্পর্কে অবহিত হতে পারে।

এছাড়া জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার স্থাপন করা হয়েছে, যাতে ২৫ মার্চের কালো রাতের গণহত্যার ছবি, রেসকোর্স ময়দানে বিজয় অর্জনের ছবি, জাতীয় চার নেতার ছবিসহ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসকে তুলে ধরা হয়েছে। সাথে একটি প্রজেক্টর স্থাপন করা হয়েছে, যাতে করে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা তথ্যচিত্রের মাধ্যমে স্বাধীনতা ও বিজয়’র ইতিহাস জানতে পারে। এছাড়াও রয়েছে একটি লাইব্রেরি।

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘পরবর্তী প্রজন্ম যখন মুক্তিযোদ্ধাদের দেখবেন না, তখন তাদের আফসোস থাকবে মুক্তিযোদ্ধারা কেমন ছিল, তাদের ব্যবহৃত জিনিস কি ছিল। এই স্মৃতি জাদুঘর স্থাপনের ফলে পরবর্তী প্রজন্ম মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত জিনিস দেখে, মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস দেখে সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে এবং হৃদয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করতে পারবেন।’

এর আগে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এসময় রাঙামাটি জেলা পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ, কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন, কাপ্তাই সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মু. সাইফুল ইসলাম, কাপ্তাই সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ ফারহানা পৃথা, রাঙামাটি জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড’র জেলা কমান্ডার ইকবাল হোসেন চৌধুরী, চন্দ্রঘোনা থানার ওসি আনছারুল হক, কাপ্তাই থানার ওসি মো. আবুল কালাম, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ’র সাবেক কমান্ডার শাহাদাত হোসেন চৌধুরীসহ মুক্তিযোদ্ধা, সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি এবং সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘বাঙালি জাতির গৌরবের ইতিহাস মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ। আর এই স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কাপ্তাই উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সকল মুক্তিযোদ্ধাদের হাতের ছাপসহ নানা স্মৃতি চিহ্ন এই জাদুঘরে রয়েছে। রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান স্যারের পরিকল্পনায় আমরা এই জাদুঘরটি করেছি।’

কাপ্তাই উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর সাবেক কমান্ডার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গর্ববোধ করছি। এটা একটি অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’