সারা বাংলা

উত্তরের আকাশে সপ্তাহ ধরে দেখা নেই সূর্যের 

উত্তরাঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশায় আছন্ন জনপদ। গত এক সপ্তাহ ধরে উত্তরের আকাশে দেখা মিলছে না সূর্যের। হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। রাতভর টিপ টিপ করে বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। টানা শৈত্যপ্রবাহে শীতজনিত রোগির সংখ্যা বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে।

রংপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রোববার (১৪ জানুয়ারি) সকাল ১০টা পর্যন্ত রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিভাগের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে। এ জেলায় তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এবার শীতের আগমনে বিলম্বে হলেও গত কয়েকদিন ধরে উত্তর জনপদে সূর্যের দেখা মিলছে না। দিন-রাত কুয়াশায় ঢেকে থাকছে পুরো এলাকা। কুয়াশার সঙ্গে মাঝে মধ্যে বইছে শীতল বাতাস। এমন অবস্থায় খেটে খাওয়া মানুষেরা রোজগারের জন্য ঘরের বাইরে যেতে পারছে না। অনেক জায়গায় এই শীত নিবারণে খরকুটো জ্বালিয়ে উষ্ণতা নিতে চেষ্টা চালাচ্ছে মানুষ।

রংপুর নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কনকনে শীত আর হিমেল হাওয়ায় দাপটে মাঠ-ঘাট অনেকটাই ফাঁকা হয়ে পড়েছে। শহরে একটু ভিড় থাকলেও গ্রামের হাট-বাজারে নেই তেমন চাপ। দোকান খোলা থাকলেও মিলছে না ক্রেতার দেখা। ফলে বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মূলধন খরচ করেই সংসার চালাতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রচণ্ড শীতে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন।

কথা হয় সদর মর্ডান মোড় এলাকার মুদি ব্যবসায়ী রবিউল মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, শীতের সময় ব্যবসা হয় না। কয়েকদিন ধরে হাজার টাকার জিনিসপত্রও বিক্রি করতে পারিনি। এবার শীত মনে হয় কাস্টমারকে (ক্রেতা) ধরছে। এভাবে শীতের তীব্রতা বাড়তে থাকলে দোকান বন্ধ করে ঘরে থাকতে হবে।

দুপুর দেড়টার দিকে কথা হয় হাজীপাড়া গ্রামের অটোচালক জহুরুল ইসলামের সঙ্গে। মোটা গরম কাপড়ে পুরো শরীর ঢাকা থাকার পরও তিনি হাড়কাঁপানো শীত অনুভব করছেন জানিয়ে বলেন, ‘কয়দিন থাকি যাত্রী খুব কম। তেমোন কামাইও হয় না। আগোত দিনে ৮০০ টাকার উপরে কামাই করছি। আর এ্যলা জাড়োতে কামাই নাই। গাড়িটাও ঠিকমতো চালবারো পাংচোল না। হাত-পাও কোঁকড়া নাগি যাওচোল। গাড়িত চাজও ফুরি যায়চোল। এই টাকা দিয়া কি কিনিম, চিন্তায় মাতা কুলায়চোল না।’

এদিকে রংপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রোববার সকাল ৯টায় রংপুরে দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিনও তাপমাত্রা একই ছিলো। বর্তমানে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। একই সঙ্গে স্থানভেদে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা বিরাজমান রয়েছে। চলমান পরিস্থিতি কিছুটা কমে আরও কমপক্ষে ২ দিন এমন তাপমাত্রা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ১৬ জানুয়ারি থেকে মেঘের আনাগোনা শুরু হতে পারে।

অন্যদিকে তীব্র শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আলেয়া বেগম (৬৫) নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ৩০ জন অগ্নিদগ্ধ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের বেশিরভাগই শীত থেকে বাঁচতে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। আবার কেউ কেউ শীত নিবারণে গরম পানি ব্যবহার করতে গিয়েও দগ্ধ হয়েছেন।

সেখানকার চিকিৎসক ফারুক আলম, অল্প কয়েক দিন হলো রংপুর অঞ্চলে তীব্র শীত পড়েছে। শীত থেকে বাঁচতে গ্রামের মানুষ খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করেন। সেই সঙ্গে গরম পানির ব্যবহারও বেড়ে যায়। অসাবধানতার কারণে দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের তারা সাধ্যমতো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

অগ্নিদগ্ধ রোগী ছাড়াও রমেক হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীতের প্রকোপে বেড়েছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত রোগীদের ভর্তির চাপ। গত কয়েক দিনের তুলনায় হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।