জাতীয়

‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’র কবি জাহিদুল হক আর নেই 

‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়, তবু কেন ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়?’– কালজয়ী এই গানের লেখক ও কবি জাহিদুল হক আর নেই। সোমবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে চিকিসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

তার ভগ্নীপতি কাজী জাহিদ হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, গত ১ জানুয়ারি তার শরীর বেশ খারাপ হয়ে যাওয়ায় তাকে আমরা প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাই। ডাক্তার জানান তিনি স্ট্রোক করেছেন। সেখানে দুইদিন থেকে তারপর ঢাকা মিডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা চলছিল। সেখানেই আজ দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে চিকিসাধীন অবস্থায় মারা যান।

জাহিদুল হক একাধারে কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক ও গীতিকার ছিলেন। তার জন্ম ১৯৪৯ সালের ১১ আগস্ট ভারতের আসামের বদরপুর রেলওয়ে হাসপাতালে চিকিৎসক পিতার কর্মস্থলে। পৈতৃক নিবাস কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী ইউনিয়নের আকদিয়া গ্রামের ভূঞা বাড়ি। বসবাস করতেন ঢাকার বনশ্রীতে।

কবি জাহিদুল হক চট্টগ্রামের নগেন্দ্র্রচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৩ সালে মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৬৬ সালে ফেনী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

তিনি বাংলা একাডেমির একজন ফেলাে ও রেডিও ডয়েচে-ভেলের সিনিয়র এডিটর ও ব্রডকাস্টার হিসেবে কাজ করেছেন। দৈনিক সংবাদের সিনিয়র সহকারী সম্পাদক ছিলেন। বাংলাদেশ বেতারে তিনি উপ-মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

জাহিদুল হকের কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প গান মিলিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৮টি। তার প্রথম কবিতার বই প্রকাশ হয় ১৯৮২ সালে ‘পকেট ভর্তি মেঘ’ শিরোনামে। তার উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে তোমার হোমার, নীল দুতাবাস ও এ উৎসবে আমি একা।

ফেসবুকে শোক এদিকে জাহিদুল হকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন অনেকেই। কবি, গল্পকার ও সংগঠক ফখরুল হাসান তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন,‌ ‘কিছুক্ষণ আগে জানতে পারলাম প্রিয় কবি জাহিদুল হক চিরতরে বিদায় নিয়েছেন। আর কোনদিন কথা হবে না। বুকটা কেমন জানি মোচড় দিয়ে গেল!’

কবি ও কথাসাহিত্যিক আশরাফ জুয়েল তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘নিজেকে ক্ষমা করা কঠিন হবে আমার জন্য। কবি জাহিদুল হক ভাই আর নেই! একি শুনলাম! উনি কয়েকদিন আগেই আমাকে কল দিয়েছিলেন, এটেন করতে পারি নাই! কল ব্যাক করতেও ভুলে গেছিলাম। বাংলাদেশের সাহিত্যজগতে এত সজ্জন মানুষ আমি কম দেখেছি। এত স্নেহ করতেন আমাকে। সিনিয়র লেখকদের মধ্যে বোধ করি তার সাথেই আমার সবচেয়ে বেশি যোগাযোগ হতো, কথাও হতো। আল্লাহ উনাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের সর্বোচ্চ স্থানে জায়গা দিন।’

গল্পকার ও কবি রিপন আহসান রিতু তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, আমার এ দু'টি চোখ পাথরতো নয়... অনবদ্য এমন সব গানের গীতিকার বীরমুক্তিযোদ্ধা কবি জাহিদুল হক ভাই আর নেই!।’

কবি ও বাংলা একাডেমি কর্মকর্তা সরকার আমিন তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‌‘তবু কিছু মায়া রহিয়া গেল! জাহিদ ভাই, শুভবিদায়! কবি জাহিদুল হক মারা গেছেন। স্মৃতিগুচ্ছ মনে রয়ে গেল। সুন্দর সময় কেটেছে মনজুরে মওলার বাসার আড্ডায়! দেখা হলেই সেসব বলতাম! একজন কমলো।’

কবি জুনান নাশিত লিখেছেন, ‘অনন্তলোকে ভালো থাকুন কবি জাহিদুল হক’।