সারা বাংলা

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন চলছে এক ডাক্তারে

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন। দেশের সর্ববৃহৎ এই সিটি কর্পোরেশনটি চলছে মাত্র একজন ডাক্তার দিয়ে। ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি ৩২৯ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে সিটি কর্পোরেশনটি গঠিত হয়।

সিটির ৫৭টি ওয়ার্ডের ৮টি জোন এলাকায় বসবাস করেন প্রায় ৬৫ লাখ মানুষ। বিপুল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য বিভাগের জন্য রয়েছে মাত্র একজন ডাক্তার। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫৭টি ওয়ার্ডে প্রথম থেকেই ডাক্তার শূন্য রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নেই সিটি কর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠার পর থেকে। ১ জন মাত্র স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দিয়ে চলছে সিটি কর্পোরেশন। প্রতিদিন বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে শতশত নাগরিক আসেন স্বাস্থ্যসেবা নিতে। তবে কাঙ্ক্ষিত জনবলের অভাবে অনেক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নাগরিকরা।

সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, স্বাস্থ্য বিভাগে ১ জন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ১ জন ফুড এন্ড স্যানিটেশন অফিসার, ১ জন স্যানিটারি ইন্সপেক্টর অ্যান্ড প্রসিকিউটিং অফিসার ও সাবেক পৌরসভার কয়েকজন কর্মরত রয়েছে। এছাড়া জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সহকারী, টিকাদানকারী, অফিওস সহায়ক পদে কিছু সংখ্যক মাস্টাররোলে নিয়োগকৃত কর্মীরা কাজ করছেন।

এছাড়া, স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল অফিসারের ব্যক্তিগত সহকারী, স্বাস্থ্য সহকারী, ভেকসিনেটর সুপারভাইজার ও তার ব্যক্তিগত সহকারী, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক ও অফিস সহকারী, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা শাখারসহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা/ মেডিকেল অফিসার, ফুড এন্ড স্যানিটেশন কর্মকর্তা, স্যানেটারী ইন্সপেক্টর, ৮টি জোনের স্বাস্থ্য সহকারী, ইপিআই সুপারভাইজার, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা কর্মী পদে একজনও জনবল নেই। এসব কাজ সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন শাখা থেকে ধারদেনা করে চালিয়ে যাচ্ছে। সূত্র বলছে এসব পদে জনবল চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে কর্তৃপক্ষ।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, অর্গানোগ্রাম না থাকার ফলে সেই পুরনো আমলের পৌরসভার লোক দিয়ে চলছে সিটি করপোরেশন । এছাড়াও এদের অনেকেই চলে যাচ্ছে, ফলে ভোগান্তি আরও বেড়ে গেছে।  জন্মনিবন্ধনের কাজ অন্য বিভাগের লোক দিয়ে করাতে হচ্ছে। প্রাণী চিকিৎসক না থাকায় কোনরকম দাসারাভাবে চলছে কার্যক্রম। গবাদি পশু জবাইয়ের জন্য ২টি জবাইখানা আছে কিন্তু নেই প্রাণী চিকিৎসক। ফলে এক্ষেত্রে এটিও সঠিক বাস্তবায়ন হচ্ছে না৷ বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে সিটি করপোরেশন থেকে বিভিন্ন স্টল করা হয়ে থাকে। এসব স্টলে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে নার্স ও ডাক্তারের সহযোগীতা নেওয়া হয়। লোকবল না থাকায় এক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে থাকেন জেলা সিভিল সার্জন অফিসের ডাক্তার ও নার্স। ইজতেমায় মশক নিধন কন্ট্রোল রুম পরিচালনা ও দেখভালের কাজ স্বাস্থ্য বিভাগের হলেও জনবল না থাকায় বর্জ্য শাখাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাদেরকে সহযোগিতা করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এছাড়া নিরাপদ খাদ্যের জন্য মোবাইল কোর্ড পরিচালনায় সহযোগিতা নেওয়া হয় জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে থেকে। তবে মাস্টার রোলে অনন্য বিভাগে জনবল নিতে পারলেও স্বাস্থ্য শাখায় এটি পাওয়া যায়না। কেননা একজন ডাক্তার বা নার্স ১৫ হাজার টাকায় কাজ করবে এমন লোক পাওয়া সম্ভব হয়না। ফলে এই ঘাটতি কোনভাবেই কমছে না স্বাস্থ্য বিভাগের।

নগরীতে সেবা নিতে আসা একাধিক মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেবা নিতে এসে অধিকাংশ সময় আমাদের শুনতে হয় জনবল নেই। ফলে যে সেবা অল্প সময়ে পাওয়ার কথা সেটি সময়সাপেক্ষ হয়ে উঠে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বয়স ১১ বছর কিন্তু এখনো যদি পরিপূর্ণ স্বাস্থ্য সেবা না পাওয়া যায়, তবে এটি দুঃখজনক।

সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের একমাত্র স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মাদ রহমত উল্লাহ বলেন, আমাকে কর্তৃপক্ষ মৌখিকভাবে স্বাস্থ্য বিভাগের পালন দায়িত্ব করছি। এখনো অর্গানোগ্রাম হয়নি। বিধিমালা এখনো চুড়ান্ত হয়নি। পদ সৃষ্টি করে আমরা প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি, কয়টা পাশ হবে এটা আমরা জানতে পারিনি। আমাদের লোকবল কম, একজনের কাজ ৩ জন করতে হয়। ডাক্তার যেহেতু আমি একা এজন্য একটু কষ্ট হয়। তবে কাজ কোন পেন্ডিং থাকে না। স্যানিটারি ইন্সপেক্টর প্রতি জোনে ১ জন থাকার কথা কিন্তু মাত্র ২ জন সবগুলো জোন দেখছে। প্রস্তাবিত আছে ৮ জন মেডিকেল অফিসার, ২ জন হেল্থ অফিসার, ১ জন চীফ হেল্থ অফিসার, প্রতি জোনে ১ জন প্রাণী চিকিৎসক। এগুলো পলে আমরা স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারবো, পাশাপাশি নগরবাসীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে পারবো।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম সফিউল আজম বলেন, সিটি কর্পোরেশনে জনবল সমস্যা আছে। মন্ত্রণালয়ে লোকবল চাহিদা দেওয়া হয়েছে। বিধিমালা পাস হলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।