সাতসতেরো

বাংলাদেশ এখনও যেভাবে টাঙ্গাইল শাড়ির ‘জিআই’ স্বীকৃতি পেতে পারে

টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতি এখন ভারতের। কিন্তু এই শাড়ির জিআই স্বীকৃতি এখনও বাংলাদেশ পেতে পারে।

ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের জানিয়েছে, ‘জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন রেজিস্ট্রি’র তথ্য, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হস্তশিল্প বিভাগ এ শাড়ির জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করে ২০২০-র সেপ্টেম্বরে। টাঙ্গাইল শাড়িকে ধরা হয়েছে নদিয়া ও পূর্ব বর্ধমানের পণ্য হিসেবে।

ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়ির ‘জিআই’স্বীকৃতির জন্য জেনেভায় ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন (উইপো)-এর কাছে আবেদন করে সম্প্রতি তা পেয়েছে ভারত। ঢাকার দাবি, ভারত নয়, টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশের পণ্য। কারণ, টাঙ্গাইলের ভৌগোলিক অবস্থান বাংলাদেশে। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, দেরিতে হলেও এ নিয়ে তৎপর হয়েছে বাংলাদেশ। তারা এই বিষয়ে উইপো-র সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে টাঙ্গাইলের স্বত্বের জন্য আবেদন করেছে।

নিয়ম অনুসারে, একাধিক দেশ একই স্বত্বাধিকারের জন্য উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণসহ উইপোয় আবেদন করতে পারে। এমনকি, প্রথমে অন্য দেশ করলে তারপর আর এক দেশও তা করতে পারে। এসব ক্ষেত্রে উইপো-র নির্দিষ্ট কমিটি খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেয়।

এর আগে, ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের অধীন পেটেন্ট, ডিজ়াইন অ্যান্ড ট্রেড মার্কস বিভাগের পক্ষে জানানো হয় টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতি তাদের। এর আগে সুন্দরবনের মধুও ভারতের নিজস্ব পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

এ শাড়ির উৎপত্তিস্থল হিসেবে উঠে আসছে পাথরাইল, নলশোধা, ঘারিন্দা-সহ টাঙ্গাইলের এমন বাইশ-তেইশটি গ্রামের নাম। এগুলোকে একসঙ্গে বাইশগ্রাম বলা হত। এ সব গ্রামেই বসবাস করতো তাঁতিরা। যাদের পদবি ছিল ‘বসাক’। স্বাধীনতার পরে বসাক সম্প্রদায়ের বড় অংশ ভারতে চলে যায়। তাদের বসতি নদিয়ার ফুলিয়া গ্রাম এবং পূর্ব বর্ধমানের ধাত্রী গ্রাম ও সমুদ্রগড়ে। এই বসাকদের জন্যই সেখানে টাঙ্গাইল শাড়ি শিল্পের পরিচিতি লাভ করে

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মোট জিআই পণ্যের সংখ্যা এখন ১৭। ২০২৩ সালে নিবন্ধিত জিআই পণ্য হচ্ছে— নাটোরের কাঁচাগোল্লা। বাংলাদেশের শীতলপাটি, রাজশাহী সিল্ক, রংপুরের শতরঞ্জি, কালিজিরা চাল, দিনাজপুরের কাটারীভোগ চাল এবং নেত্রকোনার সাদামাটি এই তালিকায় রয়েছে। এ ছাড়া বাগদা চিংড়ি, বগুড়ার দই, নবাবগঞ্জের ল্যাংড়া ও আশ্বিনা আমও রয়েছে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জিআই পণ্য হিসেবে ২০১৬-এ স্বীকৃতি পায় জামদানি। এরপরে ২০১৭ সালে ইলিশ, ২০১৯ সালে খিরসাপাতি আম, ২০২০ সালে ঢাকাই মসলিনকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এরপর থেকে এই পণ্যগুলো বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি পাচ্ছে।

আরেকটি প্রশ্ন উত্থাপন করে এই আর্টিকেল শেষ করা যায়। টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতির জন্য তৎপর হয়েছে বাংলাদেশ। এজন্য অভিবাদন। নিয়ম অনুযায়ী সব তথ্য উত্থাপন ও সরবরাহ করে স্বীকৃতির অংশীদারিত্ব ভাগ করে নেবে বলেই বিশ্বাস। কিন্তু সুন্দরবনের মধু- এ নিয়ে আমাদের কোনো প্রশ্ন নেই? সুন্দরবনের মধুর জিআই স্বীকৃতি কী শুধুই ভারতের থেকে যাবে?