সারা বাংলা

দেশ-বিদেশে ভ্রমণের গল্প শোনালেন দেশবরেণ্য অভিযাত্রীরা

বরেন্দ্রভূমি রাজশাহীর এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে দেশ-বিদেশে ভ্রমণ আর পাহাড়-পর্বতে দুঃসাহসিক অভিযানের গল্প শুনিয়েছেন দেশবরেণ্য অভিযাত্রীরা। শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহীর পর্যটকদের সংগঠন ‘ট্যুর মুরল্যান্ড’-এর একযুগ পূর্তি অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে তারা নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানান।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ডা. কাইছার রহমান মিলনায়তনে এ আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ব্যাকপ্যাক’। অনুষ্ঠানের শুরুতেই সঞ্চালক চক্ষু বিশেষজ্ঞ ইউসুফ আলী বলেন, ‘যারা ভ্রমণ করেন তাদের মধ্যে সিনিয়র-জুনিয়র বলে কোনো কথা নেই। সবাই বন্ধু। তাই অনুষ্ঠানে সবাই অতিথি। কে আগে, কে পরে বক্তব্য দেবেন- এমন কোনো বিষয় নেই।’ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অতিথিদের অভিজ্ঞতা বিনিময় চলে সেভাবেই।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমানের হাত ধরে ২০১১ সালে কীভাবে ট্যুর মুরল্যান্ড প্রতিষ্ঠা হলো এবং এরপর দেশ-বিদেশে এর সদস্যরা কতগুলো অভিযান করলেন তার সবই অনুষ্ঠানের শুরুতে দেখানো হয় এক প্রামাণ্যচিত্রে। এরপর বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক এবং সুমেরু ও অ্যান্টার্কটিকা অভিযাত্রী ইনাম আল হক। 

ইনাম আল হক বলেন, ‘ভ্রমণের বড় অসুবিধে হলো- যে এলাকায় বেশি ভ্রমণ হয় সেই এলাকার সবকিছু নষ্ট হয়। স্থাপনা, প্রাণী, উদ্ভিদ, মানুষও কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটা শূন্যে নামানো যাবে না। কিন্তু, যারা ভ্রমণে যাবেন তারা যেন এটা মনে করে যান যে, ক্ষতিগুলো সেগুলো সবচেয়ে কমিয়ে রাখবেন।’

বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মামুন হুসাইন, দুইবার এভারেস্ট আরোহনকারী একমাত্র বাংলাদেশী এম এ মুহিত, পর্বতারোহী, আলোকচিত্রী ও চলচ্চিত্র গবেষক মীর শামসুল আলম বাবু, বিশ্ব পরিব্রাজক ও সুমেরু অভিযাত্রী তারেক অণু, সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে বড় অবদান রাখা সাংবাদিক মোহসীন-উল হাকিম, মোটর সাইক্লিস্ট ও প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে খারদুংলা জয়ী বাইকার আবদুল মোমেন রোহিত, বাংলা চ্যানেল বিজয়ী সাঁতারু ডা. সাকলায়েন রাসেল, ভ্রমণ কন্যা’র সভাপতি ডা. সাকিরা হক এবং তার সঙ্গে আসা আইরিশ অভিযাত্রী মিস জেসিকা।

অনুষ্ঠানে আরও কথা বলেন, পায়ে হেঁটে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা ভ্রমণ করা ডা. বাবর আলী, ভ্রমণলেখক কালপুরুষ অপু কথা, পর্বতারোহী কাওছার রূপক, সালেহীন আরশাদী, ইকরামুল হাসান শাকিল, আ.ন.ম জাফর সাদেক, মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, ট্রেকার মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন, বাংলা চ্যানেল বিজয়ী আরেক সাঁতারু ডা. জ্যানজিবুল তারেকসহ আরও অনেকে।

এর আগে ট্যুর মুরল্যান্ডের একযুগ পূর্তি উপলক্ষে সকাল সাড়ে ১০টায় মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাস থেকে একটি বর্নাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রা শেষে মিলনায়তনের সামনের শহিদ মিনার চত্বরে বেলুন, ফেস্টুন ও পায়রা উড়িয়ে আয়োজনের উদ্বোধন করেন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী। পরে সংগঠনের একযুগ পূর্তি উপলক্ষে কেক কাটা হয়। এরপরই সকালের মিষ্টি রোদে দাঁড়িয়ে দেশবরেণ্য অভিযাত্রীরা একে-অপরের সঙ্গে আলাপচারিতায় মেতে ওঠেন। ছবি তোলেন। বিকেলে অভিযাত্রীদের রাজশাহীর পদ্মা নদীতে নৌ-ভ্রমণ এবং রাতে শহরের আলোকায়ন ঘুরে দেখার কথা ছিল।