সাক্ষাৎকার

পাটের বহুমাত্রিক ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে

পলিথিনের বিকল্পসহ সমাজে পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত এবং এ খাতকে প্রধান রপ্তানিযোগ্য পণ্যে রূপ দিতে নিরবচ্ছিন্ন কাজ করার কথা জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী অ্যাড. জাহাঙ্গীর কবির নানক। একই সঙ্গে পাটের উৎপাদন নিশ্চিত করতে কৃষকের কাছে ভালো বীজ পৌঁছে দেওয়া, পাটচাষে কৃষককে উৎসাহিত করা, পাট থেকে উৎপাদিত পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহারে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

সম্প্রতি তার মন্ত্রণালয়ে রাইজিংবিডি-কে দেওয়া সাক্ষাতকারে এসব কথা জানান মন্ত্রী। এ সময় পাট নিয়ে তার ভাবনা, গবেষণা, বাস্তবতা এবং সম্ভাবনার বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ। মন্ত্রী প্রত্যয় ব্যক্ত করেন, একদিন পাটশিল্প দেশের প্রধান রপ্তানিযোগ্য পণ্য হবে, যেটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখতেন।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্র হিসেবে পাঠ ও চামড়াজাত পণ্যকে প্রাধান্য দিচ্ছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, পাট আমাদের সোনালী আঁশ, আমাদের গর্ব। জাতির পিতা পাটকে প্রধান রপ্তানিকারক পণ্য হিসেবে স্বপ্ন দেখতেন।

পুরো বিশ্বকে এখন পরিবেশ রক্ষা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে উল্লেখ করে নানক বলেন, সারা পৃথিবী এখন পরিবেশবান্ধব ও পরিবেশ রক্ষায় আন্দোলনে লিপ্ত। বাংলাদেশ এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় পরিবেশ বিষয়ে ভাবতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাটশিল্পকে বহুমাত্রিক ব্যবহারের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। এর আগেও যখন তিনি সরকারের ছিলেন, একইভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন।

‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা সফল হয়েছি। কিছু ক্ষেত্রে কাজ করার আছে। আমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে চেষ্টা করছি। পাট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে স্বপ্ন, সেটি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছি। এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে সময়কাল কয়েকটা দিন মাত্র। আমি চেষ্টা করছি, পাটকে বহুমাত্রিক ব্যবহারের জন্য। কীভাবে পাটকে পলিথিন বা প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে আনা যায়। এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছি। আমার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নিরবচ্ছিন্ন কাজ করছে।

সম্প্রতি জার্মানি সফরে একটি মেলায় পাটশিল্পের সম্ভাবনা দেখে এসেছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার চার দিনের মাথায় জার্মানিতে একটি মেলায় গিয়েছিলাম। সেই মেলায় আমি দেখেছি বাংলাদেশের পাটপণ্য কীভাবে কোথায় এগিয়ে গেছে। আমি যদি মেলায় না যেতাম, এ বিষয়গুলো জানতে অনেক সময় লাগত। বাংলাদেশে পাটশিল্পের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।

পাটের উৎপাদন বাড়াতে সরকার কাজ করছে জানিয়ে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, পাটবীজ যদি আমাদের কৃষকের কাছে না পৌঁছে তাহলে কৃষক চাষ করতে পারবেন না। ফলে পাট উৎপাদন হবে না। সেজন্য আমরা গোঁড়া থেকে কাজ করছি। সঠিক সময়ে যাতে কৃষক পাটবীজ পায়, সে ব্যাপারে আমরা কথা বলছি এবং কাজ করছি।

‘যদিও পাট চাষ, পাট গাছ থেকে পাটকে বের করে আনা এবং সেই পাটকে বিভিন্নভাবে কাজে লাগানো, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা— এগুলো একটি সময়সাপেক্ষে ব্যাপার। এগুলো নিয়ে কিন্তু আমরা ভাবছি। আমি গোঁড়া থেকেই চেষ্টা করছি। পাটপণ্য নিয়ে আমাদের যে ভাবনা, যদি পাট ঠিকমত উৎপাদন না হয় তাহলে এ ভাবনা তো অর্থহীন হয়ে যাবে।’

এ সময় মন্ত্রী পাট থেকে উৎপাদিত সোনালী পলিথিন, টিনসহ বিভিন্ন পণ্য দেখিয়ে বলেন, বিজ্ঞানী মোবারক হোসেন, যিনি পাট থেকে সোনালী ব্যাগের আবিষ্কার করেছেন এবং আরও অনেক নতুন নতুন পণ্য পাট থেকে তৈরি করছেন। পাট থেকে টিনও উনি আবিষ্কার করেছেন।

বাজার থেকে পলিথিন উঠিয়ে তার স্থানে বিকল্প কিছু স্থলাভিষিক্ত করার জন্য বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের কথাও জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, বাস্তবতা দুটি বিষয়। এটার উৎপাদন ঠিকমত করা এবং মূল্যটাকে মানুষের আয়ত্তের মধ্যে রাখা। দ্বিতীয় হলো, এটি যদি ব্যাপক না করে আমরা পলিথিন করতে চাই, সেটি সঠিক হবে কি-না, এটাও ভাবনার বিষয়। কারণ, পলিথিনের ব্যাপারে এদেশের বাস্তবতা হলো, ক্রেতারা বিনামূল্যে পাচ্ছেন। ছিঁড়ে যেতে পারে এজন্য বলছি, আরেকটা ব্যাগ দেন। আবার আরও একটা অতিরিক্ত ব্যাগ চাইলেও দিচ্ছে। কারণ, এটা বিনামূল্যের জিনিস। কিন্তু, আমি যখন সোনালী ব্যাগ করছি, এটার সাত থেকে আট টাকা দাম পড়ে যাচ্ছে। আমাদের ডিপার্টমেন্টাল স্টোর অথবা স্টোরগুলোতে, চালের আড়ত বলেন, ডালের আড়ত বলেন, পেঁয়াজের আড়ত বলেন— যেসব বস্তাগুলো রয়েছে, সবগুলো নিয়ে ভাবছি। আমরা শিগগিরই আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করবো। ক্রেতাকে উদ্বুদ্ধ করার বিষয় রয়েছে।

পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করে বিকল্প ব্যাগ ব্যবহারের জন্য জনগণের সচেতনতা এবং প্রচার দরকার বলেও মনে করেন জাহাঙ্গীর কবির নানক।

‘দেখেন আমাদের দেশে যখন শপিংয়ের ওপর ভ্যাট ট্যাক্স দেওয়া হলো, তখন কিন্তু মানুষ ভ্যাট-ট্যাক্স নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ করেছে। কিন্তু একটা সময় মানুষ বুঝতে পেরেছে, সে এই টাকাটা দোকানিকে দিচ্ছে না, সরকারকে দিচ্ছে। অর্থাৎ, আমার কাজেই সরকার এই টাকা ব্যবহার করবে। আমাদের দেশে এই সোনালী ব্যাগটির উৎপাদনমূল্য যে পর্যায়ে যাচ্ছে, এই পর্যায়ে যেতে হলেও এটাকে বিকল্প হিসেবে রাখতে হবে। উদ্বুদ্ধ করতে হবে, জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে এবং বলতে হবে, ‘‘পলিথিন ব্যাগে দেব, নাকি এই ব্যাগে (সোনালী ব্যাগ)?’’ এই ব্যাগের দাম সাত টাকা আছে। ভ্যাট-ট্যাক্সের মধ্যে এটা ধরে দিতে হবে। এটাই সারা পৃথিবীতে চলছে।’

বহির্বিশ্বে এখন পরিবেশবান্ধব পলিথিন ব্যবহার করা হচ্ছে এবং এই পণ্যের জন্য পৃথকভাবে দাম দিতে হচ্ছে জানিয়ে নানক বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও চলছে, অন্য উন্নত দেশেও ব্যাগ দিচ্ছে কিন্তু দাম ধরে দিচ্ছে। কাজেই আমাদের বহুবিদ সমস্যা রয়েছে এবং সেটা থেকে বের হতে পথ খুঁজছি।