সারা বাংলা

কারাগারে সাধারণ বন্দিদের সঙ্গে আছেন রায়হান শরীফ

কারাগরে কেমন সময় কাটছে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীকে গুলি করে আলোচনায় আসা সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষক রায়হান শরীফের। জেল হাজতের সাধারণ বন্দিদের সঙ্গে তার সময় কাটছে। সেখানে প্রয়োজন ছাড়া কারও সঙ্গে তেমন কথাবার্তা বলছেন না। সাধারণ বন্দিদের জন্য যে খাবার বরাদ্দ রয়েছে, রায়হান শরিফ সেই খাবারই খাচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার মোহাম্মদ ইউনুস এ সব তথ্য জানান। 

শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ সুত্রে জানা যায়, তিন দিন আগেও খোলা আকাশের নিচে মুক্ত হাওয়ায় অবৈধ অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করতেন রায়হান শরীফ। বাকি খেতেন কলেজের ক্যান্টিনে। ক্যান্টিনের মালিক টাকা চাইলে ব্যাগ থেকে পিস্তল বের করে ভয় দেখিয়ে পরে দিবেন বলে চলে যেতেন। রায়হান শরিফ প্রচুর অ্যাকশন মুভি দেখতেন। সেই মুভিগুলোর মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ক্লাসের ছাত্রদের সামনে নিজেকে ভিলেন হিসেবে উপস্থাপন করতেন। মাঝে মাঝে সেসব সিনেমার ডায়ালগও দিতেন। সেটা তার আচরণে প্রকাশ পেত।

মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ডা. রায়হান শরীফের কাছে একটি ব্যাগ থাকত। ওই ব্যাগে দুটি পিস্তল, বেশকিছু ছুরিসহ অন্যান্য অস্ত্রও থাকত। অস্ত্রের প্রতি তার আকর্ষণ ছিল। এছাড়াও ব্যাগে ৬/৭টি মোবাইল ফোন থাকত। তিনি ক্লাসে প্রবেশ করে ব্যাগ থেকে দু-একটি অস্ত্র বের করে টেবিলে রাখতেন। তবে যেদিন বেশি রেগে থাকতেন সেদিন সবগুলো অস্ত্র টেবিলে রেখে ক্লাস করাতেন। শিক্ষার্থীরা তার ক্লাসে ভয়ে থাকতো। কোনো ছাত্র তার ক্লাস মিস করতে পারত না। যদি কেউ ক্লাসে না আসে তাহলে অন্য ছাত্রদের ছাত্রাবাসে পাঠিয়ে তাকে ডেকে আনতেন। প্রতিদিন ক্লাসে এসে কারও না কারও গায়ে হাত তুলতেন। এটা তার প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়ে উঠেছিল।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ক্লাসের কোনো ছাত্রের আচরণ পছন্দ না হলে পিস্তল বের করে ম্যাগজিন খুলে শ্যুট করে ভয় দেখাতেন। শুধু তাই নয়, রায়হান শরিফ শিক্ষার্থীদের টাকায় চা-নাশতা কিনে আনতে বাধ্য করতেন। মাঝে মধ্যে সেই সব চা-নাশতা কলেজের ছাত্রী হোস্টেলে পৌঁছে দিতে বাধ্য করতেন। একবার পিকনিকের বাসে উঠে পিস্তল বের করে সব ছাত্রদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন। তখন এটাকে ছাত্ররা নিছক মজা হিসেবেই নিয়েছিলেন।

কারাগারের জেলার মোহাম্মদ ইউনুস জামান, প্রতিদিন নতুন যে আসামি জেল হাজতে আসেন, প্রথমে তাদের আগমনি ওয়ার্ডে রাখা হয়। সেখানে তিন-চার দিন রাখার পর অন্যান্য ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। শিক্ষক রায়হান শরীফকে জেল হাজতের আগমনি ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। এখানে আসার পর থেকে তিনি স্বাভাবিক আছেন। নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ মানিয়ে নিতে সময় লাগবে। তিনি ভালো আছেন, কোনো সমস্যা নেই বলে তিনি জানিয়েছেন।

সোমবার (৪ মার্চ) বিকেলে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক রায়হান শরীফ শ্রেণিকক্ষের ভেতরে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আরাফাত আমিন তমালকে গুলি করেন। এরপর রায়হান শরীফকে ঘরে আটকে রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় পড়ে থাকা একটি পিস্তল উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়া তাঁর ব্যাগটিও জব্দ করা হয়। এই ব্যাগের ভেতরে আরও একটি পিস্তল, ৮১ রাউন্ড গুলি, চারটি ম্যাগাজিন, দুটি বিদেশি ছোরা ও ১০টি অত্যাধুনিক বার্মিজ চাকু জব্দ করা হয়।

এসব অবৈধ অস্ত্র রাখার অপরাধে গত মঙ্গলবার (৫ মার্চ) পুলিশ বাদী হয়ে রায়হানের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় মামলা করে। এছাড়া আহত শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালের বাবা আব্দুল্লাহ আল আমিন বাদী হয়ে তাঁর ছেলেকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে আরেকটি মামলা করেন। দুটি মামলায় শিক্ষক রায়হান আদালতে জবানবন্দি দেন। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠায় আদালত।