জাতীয়

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ চান প্রধানমন্ত্রী

আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকার আদায়ে একসাথে কাজ করে বিশ্ব দরবারে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

‘আমাদের যদি অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি করতে হয়, তাহলে নারী পুরুষের সমানভাবে শ্রম দিয়ে দেশকে গড়ে তুলতে হবে। কারণ সমাজের অর্ধেক নারী, সেই অর্ধেক যদি কাজ না করে, তাহলে সমাজ চলবে না। সমানতালে কাজ করলে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো’, বলেন তিনি।

শুক্রবার (৮ মার্চ) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৪ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও জয়িতা সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

নারীদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা তৈরি করেছে জানিয়ে নারীদের ঘরে না বসে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এখন মেয়েদের এগিয়ে আসতে হবে। ঘরে বসে থাকলে চলবে না। কারণ মেয়েরা সব থেকে বেশি কাজ করে। কাজের দিক থেকে শ্রমের দিক থেকে ৪৩ ভাগ দেখানো হচ্ছে, কিন্তু মেয়েরা অফিস-আদালত কাজ করে আরেকটা কাজ করে ঘরে এসে। সংসার সামলানো সেটা কিন্তু হিসেবে ধরা হয় না। সেটা যদি হিসেবে ধরা হয়, মেয়েরা কিন্তু অনেক বেশি কাজ করে, বেশি শ্রম দিচ্ছে।

আমাদের নারীরা কখনো পিছিয়ে থাকবে না সেটাই তার সরকারের লক্ষ্য জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দলের গঠনতন্ত্রে, ঘোষণাপত্রে আমরা একমাত্র রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যেখানে নারী পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা আছে। আমরা যখন ক্ষমতায় এসেছি শুধু বলা না, সেটা করে দেখিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতে মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত মা-বোনদের আত্মত্যাগ ও অবদান কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন। তাদের পুনর্বাসন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, নারীদের পুনর্বাসনের জন্য বঙ্গবন্ধু ‘নারী পুনর্বাসন বোর্ড’ করে দেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ডাক্তার, নার্স নিয়ে এসে তাদেরকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তখন অনেকেই শারীরিক এবং মানসিকভাবে খুবই খারাপ অবস্থায় ছিলেন। তাদের বিয়ে থেকে কর্মসংস্থান সবকিছু জাতির পিতা ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। তাদের সম্মাননা দিয়েছিলেন। তিনি তাদের মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। জাতির পিতা চাইতেন বাঙালি নারীরা শিক্ষায়-দীক্ষায় আলাদা স্থান করে নেবে। নারী পুরুষের সমান অধিকার তিনি স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন সংবিধানে। নারীদের চাকরির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ কোটা নিশ্চিত করেছিলেন। সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন রেখেছিলেন যাতে নারী নেতৃত্ব গড়ে উঠতে পারে।

৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার নারীর জাগরণ এবং তাদের এগিয়ে আসার সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইতিমধ্যে আমরা নারীদের জন্য অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, এমনকি বর্ডার গার্ড, কোথাও নারীদের অবস্থান ছিল না। এখন সব জায়গায় আমাদের মেয়েরা কাজ করছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের মেয়েরা ভালো কাজ করছে। জাতিসংঘ এখানে তারা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করছে।

জাতির পিতার সহধর্মীনী হিসেবে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অবদান উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে থাকতেন, তখন পরিবারকে দেখভাল করা, রাজনৈতিক দল সামলানো এবং আন্দোলন-সংগ্রাম অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তিনি করে গেছেন। যা করেছেন তিনি পর্দার আড়াল থেকে করেছেন।

এ সময় খেলাধুলায় নারীদের জাগরণ এবং সাফল্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তৃণমূল পর্যয়ে নারী জাগরণ এবং তাদের এগিয়ে আসা নিশ্চিত করতে গ্রামে তৃণমূল পর্যায়ে নারীদের অনেক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের জন্য আলাদা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের আমাদের যে বৃত্তি দেই সেই বৃত্তির টাকাটা সরাসরি মায়ের কাছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে। বাল্যবিবাহ নিরোধ করা, ইভটিজিং, যগোপযোগী আইন করে এসবের বিরুদ্ধে নারী নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করেছি। কর্মজীবী নারীদের আমরা বিশেষ ভাতা দিচ্ছি। মাতৃদুগ্ধ দানকারী কর্মজীবী মাকে আমরা বিশেষ ভাতা দিচ্ছি, যারা বিধবা বা স্বামী নিগৃহীতা তাদের জন্য আলাদা ভাতার ব্যবস্থা আছে, বয়স্কদের আলাদা ভাতা দিচ্ছি।

এ সময় নারী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কমিউনিটি ক্লিনিক এর কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এর মাধ্যমে নারীরা খুব সহজে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে পারছে। কমিটি ক্লিনিক এর সুবিধা হচ্ছে মেয়েরা নিজেরাই নিজে হেঁটে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারে।

নারী উদ্যোক্তা যাতে গড়ে ওঠে বিশেষ ছাড় দিয়ে অল্প সুদে ঋণ দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাতে মহিলারা নিজেরা কাজ করতে পারে, সেই ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি সেখানে নারীদের আলাদা প্লটের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কেউ যদি উদ্যোক্তা হয়ে সেখানে কিছু করতে চায় সেজন্য আলাদা ব্যবস্থা আছে, সুবিধা আছে।

তিনি বলেন, নারী উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করেছিলাম, কিন্তু বিএনপি সেটা সংশোধন করার নামে রেখে দিয়েছিল, কার্যকর করেনি। দ্বিতীয়বার আমরা সরকারে এসে সেটি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।

দারিদ্র্যতা দূর করে দেশের মানুষকে একটা উন্নত জীবন দিতে আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার কথা বলেছিলাম গড়ে তুলেছি। ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

নারী দিবসে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে তিনি বলেন, কেউ পিছিয়ে থাকবে না নারী-পুরুষ সমানভাবে গিয়ে এসে দেশকে বিশ্ব দরবারে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো।