সাক্ষাৎকার

মনে হচ্ছে, এমভি আবদুল্লাহ অরক্ষিত ছিল: ক্যাপ্টেন দিপায়ন বিশ্বাস

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়েছে বাংলাদেশের জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টার দিকে সোমালিয়ার জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাচ্ছিল। জাহাজে থাকা ২৩ বাংলাদেশি নাবিক এখন জলদস্যুদের হাতে জিম্মি। নাবিকদের কীভাবে জলদস্যুদের কবল থেকে নিরাপদে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়া আনা যায়, সে বিষয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন মেরিন এজেন্সি সার্ভিসেস লিমিটেডের মাস্টার মেরিনার ক্যাপ্টেন দিপায়ন বিশ্বাস। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাইজিংবিডির জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম।

রাইজিংবিডি: সোমালিয়ার জলদস্যুদের দ্বারা আক্রান্ত বাংলাদেশি জাহাজে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কি ছিল না? কীভাবে এত সহজেই জাহাজটি আক্রান্ত হলো দস্যুদের দ্বারা? 

ক্যাপ্টেন দিপায়ন: দেখুন, আমাদের জাহাজগুলো যখন সোমালিয়ার মতো এলাকা দিয়ে চলাচল করে, তখন ওই এলাকাকে আমরা পাইরেসিপ্রোন এরিয়া বলি। ওসব এলাকা দিয়ে সাধারণত আমরা ইউএস কোস্ট গার্ড বা অন্যান্য সম্মিলিত একটা নিরাপত্তা নিয়ে পার হই। অর্থাৎ তারা আমাদের এমন এলাকা পার করে দেয় নিরাপত্তা দিয়ে। নিরাপত্তার দেওয়ার বিনিময়ে তাদের বড় অংকের টাকা দিতে হয়। সম্ভবত, এই জাহাজের ক্ষেত্রে এটা ছিল না। আবার এমনও হতে পারে, জাহাজটি পাইরেসিপ্রোন এরিয়ার বাইরে ছিল। পাইরেটরা বা জলদস্যুরা গিয়ে হয়ত জাহাজটিকে আক্রমণ করে নিজেদের এলাকায় নিয়ে নিয়েছে। যদিও আমি এই বিষয়ে নির্দিষ্টভাবে জানি না, জাহাজটি কোন এরিয়া থেকে আক্রান্ত হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, আমরা জাহাজে যেসব সিকিউরিটি সাধারণত নিয়ে থাকি, সেগুলোও সম্ভবত অনুসরণ করা হয়নি। যেমন: আমরা চারিদিকে লেজার নিরাপত্তা বা ইলেকট্রিক ফেন্স ব্যবহার করি, সেসবও হয়ত ছিল না। 

রাইজিংবিডি: তার মানে, বলা যায়—জাহাজটি মোটামুটি অরক্ষিত ছিল? 

ক্যাপ্টেন দিপায়ন: আপাতত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, অরক্ষিত ছিল। খুব সহজেই রেলিং বেয়ে উঠে গেছে। প্রপার সিকিউরিটি অর্থাৎ ওসব এলাকা পার হতে গেলে, আমাদের শেখানো হয়—কীভাবে এমন এলাকা পার হবো, কী ধরনের ইকুইপমেন্ট আমরা ইউজ করব নিজেদের রক্ষা করার জন্য। জাহাটিতে এসবের ঘাটতি ছিল বলে মনে হচ্ছে।

রাইজিংবিডি: এর মানে দাঁড়াচ্ছে—জাহাজটিতে এ ধরনের কোনো সেফটি-সিকিউরিটি মেইনটেন করা হয়নি?

ক্যাপ্টেন দিপায়ন: জি, হ্যাঁ। যদি থাকত, তাহলে অন্তত এক ধরণের হিচিং তো হতো। এসব থাকলে পাইরেটরা ওঠার সময় আমরা বাধা দিতাম। কিংবা লেজার স্থাপন অথবা কারেন্ট ব্যবস্থা থাকলে শক খেয়ে পড়ে যেত। এমন কোনো ব্যবস্থা নিয়েছিল বলে মনে হয়নি। 

রাইজিংবিডি: আসলে এই যে জাহাজের ক্রুরা কিডন্যাপড হলেন বা যে একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি হলো, এর থেকে উদ্ধার হওয়ার একটা ব্যাপার সামনে এলো। এখান থেকে কীভাবে এখন বের হওয়া যাবে? টাকা-পয়সার একটা বিষয় চলে আসছে।

ক্যাপ্টেন দিপায়ন: আচ্ছা, শুনুন। ২০১০ সালে এই একই কোম্পানির জাহান মনি নামের একটি জাহাজ কিডন্যাপড হয়েছিল। ১০০ দিন পরে প্রায় চল্লিশ লাখ ইউএস ডলার দিয়ে সবাইকে উদ্ধার করা হয়েছিল। এবার হয়ত একটু কম দিয়ে রক্ষা পেতে পারে। যেহেতু, তারা ওয়েটা জানে, কিভাবে উদ্ধার পেতে হয়। 

রাইজিংবিডি: কেন আমাদের এই জাহাজগুলো এই পথেই যায় বা এই রুটটি এড়িয়ে যাওয়া যায় কি না?

ক্যাপ্টেন দিপায়ন: কিভাবে তা সম্ভব। আমি যদি এশিয়া থেকে ইউরোপে যেতে চাই, তাহলে আমাদের এই রুট দিয়েই যেতে হবে।

রাইজিংবিডি: উদ্ধার পাওয়ার জন্য মুক্তিপণের টাকাটা আসলে কে দেবে? ভুক্তভোগীর পরিবার নাকি বাংলাদেশ সরকার?

ক্যাপ্টেন দিপায়ন: এটা সাধারণত কোম্পানি বহন করে। কেএসআরএম বহন করবে।

রাইজিংবিডি: এ ক্ষেত্রে ইনস্যুরেন্সের কোনো বিষয় আছে কি না?

ক্যাপ্টেন দিপায়ন: এটার জন্য ইন্সুরেন্সের কাভারেজ আছে কি না, তা আমার জানা নেই। ইটস আ ম্যাটার অব লটস অব মানি। এখানে আমি মনে করি, জাহাজের দাম আর কত টাকাই হবে? জাহাজদের যে ক্রুরা আছে তাদের জীবনের মূল্য অনেক বেশি। এই মুহূর্তে জাহাজের ক্রুদের জীবনের সংশয় ইস্যুটাই মেইন।

রাইজিংবিডি: এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচার বা এটা সলভ করা উপায় কী? ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি থেকে আমরা কীভাবে রক্ষা পেতে পারি?

ক্যাপ্টেন দিপায়ন: গতবার যা শুনেছিলাম…  সোমালিয়া ইসরায়েলি একটা সংগঠনের সাথে মিলে টাকা নিয়েছিল। সেই পেমেন্ট হেলিকপ্টারের মাধ্যমে নিয়েছিল। সোমালিয়া এমন একটি দেশ, সেখান কোনো সরকার নেই। এখানে বড় কোনো রাষ্ট্রের হাত আছে। আমেরিকা ইরান-ইরাকে যুদ্ধ করতেছে, সেখানে এটা বন্ধ করতে কয় মিনিট লাগতে পারে? এটা যেহেতু ইন্টারন্যাশনাল একটা বিজনেসের ক্ষতি করতেছে, সেখানে এটা উৎখাত করতে কয় মিনিট লাগতে পারে, বলেন তো? ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি চায়, এটা কয় মিনিট লাগবে বন্ধ করতে? কেন তা করতেছে না তারা?