সারা বাংলা

স্ট্রবেরির দাম পাচ্ছে না চাষিরা  

চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাঠে আকারভেদে ১৫০-২০০ টাকা কেজি দরে স্ট্রবেরি বিক্রি হলেও বাজার ও সুপারশপে তা ৮০০ টাকা। ‘বাজারে স্ট্রবেরির চাহিদা নেই’— এমন অজুহাতে কম দামে চাষির কাছ থেকে স্ট্রবেরি কেনেন পাইকাররা। এতে চাষির লাভের টাকা যায় তাদের পকেটে। 

বাজারে চাহিদা থাকলেও আশানুরুপ দাম না পাওয়ায় স্ট্রবেরির আবাদ থেকে সরে যাচ্ছে এ জেলার চাষিরা। গত বছরের তুলনায় ১৮ হেক্টর কম জমিতে উচ্চ-ফলনশীল এ ফল চাষ হয়েছে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত বছর ১০০ হেক্টর জমিতে স্ট্রবেরি চাষ হয়। এবার ৮২ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এরমধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলায় ৮০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ১ হেক্টর এবং গোমস্তাপুর ও নাচোল উপজেলায় ১ হেক্টর রয়েছে। 

স্ট্রবেরি চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় সবচেয়ে বেশি স্ট্রবেরির চাষ হয় শিবগঞ্জ উপজেলায়। সাধারণত ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে এই ফলের চারা রোপণ করতে হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো ফলন হয়। 

চাষিরা জানান, ফলটি পরিপক্ব হওয়ার পর পাইকাররা ক্ষেতে আসেন। এখান থেকে স্ট্রবেরি কেনেন। ফলটি দ্রুত পচনশীল হওয়ায় পরিপক্বের পর একপ্রকার বাধ্য হয়ে চাষিকে বিক্রি করতে হয়। এবার মৌসুমের শুরুর দিকে প্রতিকেজি স্ট্রবেরি বিক্রি হয় ১৮০০-২২০০ টাকা। এখন আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৫০-২০০ টাকা। জেলা শহরে বিক্রি হওয়ার পাশাপাশি রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে। সেসব জায়গায় বিক্রি হচ্ছে আকার ভেদে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজিতে। 

রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলার বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আকারভেদে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে স্ট্রবেরি বিক্রি হচ্ছে। ছোট আকাদের স্ট্রবেরি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, মাঝারি ৭০০ টাকা, বড় ৮০০ টাকা। তবে বাজারে নিম্নমানের ছোট আকারের স্ট্রবেরি পাওয়া যায়। কয়েক দিন আগে তোলা এই স্ট্রবেরির দাম ৪০০ টাকা। 

শিবগঞ্জের স্ট্রবেরি চাষি মুনিরুল ইসলাম। তিনি পরের জমি লিজ নিয়ে কয়েক বছর ধরে স্ট্রবেরি চাষ করছেন। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। নিজে চারা তৈরি করে লিজ নেয়া জমিতে স্ট্রবেরি আবাদ করেছেন।

এই স্ট্রবেরি চাষি বলেন, এবার মৌসুমের প্রথমে স্ট্রবেরির আশানুরূপ দাম পাওয়া গেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দাম কমে গেছে। এখন কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় তিনি আশাহত। তিনি বলেন, ‘ভরা মৌসুমে দাম কিছুটা কমে। কিন্তু এখন ক্ষেত থেকে পানির দরে কিনছেন পাইকার ব্যবসায়ীরা।’ 

ওই এলাকার এক কৃষকের ছেলে সিয়াম উদ্দিন। তিনি অনলাইনে ফলটি বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন। সিয়াম বলেন, ‘এখন অনলাইনের মাধ্যমে স্ট্রবেরি বিক্রি করা সহজ। ভোক্তার অর্ডার কনফার্ম হওয়ার পর মাঠ থেকে ফল তুলে কুরিয়ারে বুকিং দিলেই হয়ে যায়। এতে আমরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি ভোক্তাও অনেক কম দামে কিনতে পারছেন।’ 

চাষি আনিসুর রহমান বলেন, ‘স্ট্রবেরি চাষ ঝুঁকিপূর্ণ। যথাযথ যত্ম নিতে না পারলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ কারণে অনেকে শাকসবজি চাষে ঝুঁকছেন।’ 

একজন পাইকার ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘ক্ষেত থেকে স্ট্রবেরি কেনা হয় বাজারে বিক্রির দামের তুলনায় একটু কমেই। এই ফল মাত্র কয়েক দিন রাখা যায়। সময় মতো বাজার ধরাতে না পারলে অনেক স্ট্রবেরি পচে যায়। তাই কম দামে কেনা হয় এই ফল।’ 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, স্ট্রবেরি সময় মতো বাজারজাত করা না গেলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ফলের আবাদ ঝুঁকির্পূর্ণ। যে সকল কৃষক স্ট্রবেরি আবাদ করছেন, তাদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার স্ট্রবেরি চাষাবাদ কমেছে। তবে বাজারে ভালো দাম থাকায় আশা করা যাচ্ছে, আগামী দিনে চাষিরা এ ফল চাষাবাদে ঝুঁকবেন।