সারা বাংলা

সার্জেন্টকে আহত করে পালানোর পর যেভাবে আটক বাইকার

মাথায় হেলমেট নেই। তাই মোটরসাইকেল আরোহী তরুণকে আটকেছিলেন পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট। মোটরসাইকেলটি থামলে সার্জেন্ট এক হাতে ধরেছিলেন হ্যান্ডেল। ঠিক তখনই হ্যাচকা টান দেন বাইকার। সার্জেন্টও বাইকের হ্যান্ডেল ধরে থাকেন। এভাবে প্রায় ৪০ ফুট ছেঁচড়ে যাওয়ার পরে সার্জেন্ট সড়কে ছিটকে পড়ে যান। আর পালিয়ে যান বাইকার।

রোববার (৩১ মার্চ) সকাল ১০টার দিকে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে রাজশাহীর এয়ারপোর্ট থানার বায়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর বাইকে থাকা ইফতারের খালি প্যাকেটের সূত্র ধরে দুপুরে পুলিশ অভিযুক্ত বাইকারকে আটক করেছে। তার নাম রেজাউল হোসেন ওরফে তারেক (৩০)। বাড়ি রাজশাহীর শাহমখদুম থানার ভুগরইল শিহাবের মোড় এলাকায়। বাবার নাম মিনারুল ইসলাম।

আহত ট্রাফিক সার্জেন্টের নাম ফিরোজ হোসাইন। তিনি রাজশাহী মহানগর পুলিশে (আরএমপি) কর্মরত। বাইকের সঙ্গে ছেঁচড়ে তিনি হাতে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সরকারি কাজে বাধা দেওয়া ও তাঁকে আহত করার অভিযোগে বিকেলে তিনি ওই বাইকারের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। 

অভিযুক্ত বাইকারকে শনাক্ত ও তাঁকে আটক করার অভিযানে নেতৃত্ব দেন এয়ারপোর্ট থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুর রাজ্জাক। তিনি জানান, বাবার একমাত্র ছেলে তারেক। আরওয়ান-ফাইভ বাইকের থার্ড ভার্সন নিয়ে তিনি এলাকায় দাপিয়ে বেড়ান। সকালে বায়া থেকে আমচত্বরের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। মাথায় হেলমেট না থাকার কারণে সার্জেন্ট তাকে থামান। এরপর সার্জেন্ট তার বাইকের হ্যান্ডেলে হাত রেখে কাগজপত্র চাচ্ছিলেন। তখনই হ্যাচকা টান দিয়ে তিনি পালিয়ে যেতে শুরু করেন। এতে প্রায় ৪০ ফুট ছেঁচড়ে আহত হন সার্জেন্ট। 

পুলিশ পরিদর্শক আবদুর রাজ্জাক জানান, ঘটনার পর সার্জেন্টের বডি ওন ক্যামেরা ও সিসি ক্যামেরা থেকে বাইকার তারেকের ছবি সংগ্রহ করেন। কিন্তু আশপাশের কেউ তাকে চিনতে পারছিলেন না। পরে একজন জানান, বাইকের পেছনে ইফতারের খালি প্যাকেট ছিল। এরপর তারা বায়া বাজারের দোকানে দোকানে খোঁজ নিতে থাকেন। যে দোকান থেকে তারেক প্যাকেটে কেনেন সেই দোকানিকেও পেয়ে যান। কিন্তু তারপরও ওই তরুণকে শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের প্রধান উৎপল কুমার চৌধুরীও তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ওই তরুণকে খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে জানা যায়, ভুগরইল শিহাবের মোড়ের এক তরুণ নীল রঙের এমন একটি বাইক চালান। পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, ওই তরুণের বাড়িতেই ইফতার মাহফিলের আয়োজন রয়েছে। এরপর তারেকের বাড়িতে হাজির হয় পুলিশ।

পরিদর্শক আবদুর রাজ্জাক জানান, তারেক বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন। তার বাবাকে বুঝিয়ে কৌশলে তাঁকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে। তারেক তাঁর বাইকটি পাশের বাড়িতে লুকিয়ে রেখে কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখেছিলেন যেন পুলিশ খুঁজে না পায়। সেই বাইকও জব্দ করে থানায় নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় আহত সার্জেন্ট ফিরোজ হোসাইন নিয়মিত মামলা করছেন। অভিযুক্ত বাইকারকে সোমবার (১ এপ্রিল) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।