সারা বাংলা

মধু সংগ্রহে সুন্দরবনে মৌয়ালরা, লক্ষ্যমাত্রা আড়াই হাজার কুইন্টাল

মধু আহরণ মৌসুম শুরু হওয়ায় সোমবার (১ এপ্রিল) থেকে সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলের মৌয়ালরা মধু মহলে প্রবেশ করেছেন। বিভিন্ন ফরেস্ট স্টেশন থেকে অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করেছেন তারা। দেশের প্রাকৃতিক মধুর সবচেয়ে বড় উৎস সুন্দরবন থেকে মধু আহরণ মৌসুম চলবে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত। সোমবার (১ এপ্রিল) পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বলেন, এ বছর সুন্দরবন পশ্চিম ও পূর্ব বিভাগে মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে আড়াই হাজার কুইন্টাল। আর মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৫০ কুইন্টাল।

ড. আবু নাসের বলেন, সুন্দরবনে মধু আহরণ মৌসুম শুরু হয়েছে। সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগে মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দেড় হাজার কুইন্টাল। আর মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৫০ কুইন্টাল।

কয়রা উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন কাটকাটা, মঠবাড়ী, পাথরখালী, গড়িয়াবাড়ী, হরিহরপুর এলাকাসহ বিভিন্ন গ্রামের পেশাদার মৌয়ালরা বনে গেছেন মধু আহরণ করতে। তাদের মধ্যে একজন কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর এলাকার মৌয়াল আব্দুল গনি সরকার।

মৌয়াল আব্দুল গনি সরকার জানান, ছয় সদস্য নিয়ে সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করতে রওনা দিয়েছেন। সুন্দরবনের বানিয়াখালী, তেঁতুল তলা, ফুলতলা, সরদার ঘাট, নুয়ানি, চার নম্বর কয়রা, সিংগাসহ নানা স্থান থেকে তারা মধু সংগ্রহ করবেন। এখন বনে গরান, বাইন ও খলিশা ফুলের মধু পাওয়া যাবে।

বন বিভাগের তথ্যমতে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সুন্দরবন থেকে ৫ লাখ ৮০ হাজার ২৪০ কেজি মধু ও মোম সংগ্রহ করা হয়। মধু ও মোম থেকে রাজস্ব আদায় হয় ৪৬ লাখ ৮৬ হাজার ৪১৩ টাকা। এর মধ্যে ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৩১৫ কেজি মধু থেকে ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ৩৬৩ টাকা এবং ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯০৫ কেজি মোম থেকে ১৩ লাখ ৩৯০ হাজার ৫০ টাকা রাজস্ব আয় হয়। 

২০২২ সালে সুন্দরবনের মধু থেকে রাজস্ব আয় হয় ৩৬ লাখ ৯৩ হাজার ৬০০ টাকা এবং মোম থেকে ১৫ লাখ ৩১ হাজার ২০০ টাকা। সেই বছর সুন্দরবন থেকে ২ হাজার ৩২০ কুইন্টাল মধু ও ৬৯৬ কুইন্টাল মোম পাওয়া যায়।

২০২৩ সালের ১ হাজার ২২৫ কুইন্টাল মধু ও ৩৬৭ দশমিক পাঁচ কুইন্টাল মোম আহরণ করা হয়। আর এ থেকে ২৭ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা সরকারের রাজস্ব আসে।

১৮৬০ সাল থেকে সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করা হয়। বন সংলগ্ন একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী বংশ-পরম্পরায় মধু সংগ্রহ করে। তাদের মৌয়াল বলা হয়। সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে সবচেয়ে বেশি মধু পাওয়া যায়। 

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহম্মদ নূরুল করিম বলেন, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার কুইন্টাল। আর মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০০ কুইন্টাল। 

বন কর্মকর্তারা জানান, মৌয়ালরা বনে প্রবেশ করার পর মধু আহরণের জন্য মধু সংগ্রহের সময় মৌমাছি তাড়াতে অগ্নিকুণ্ড, মশাল বা অনুরূপ কোনো দাহ্য পদার্থ এবং রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করতে পারবেন না। তাদের জন্য নয়টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে বন আইনে শাস্তির বিধান রয়েছে।