উদ্যোক্তা/ই-কমার্স

রোজির মূলধন ছিল মাত্র ৫০ টাকা

সোনিয়া আফরোজ রোজি। বাংলা সনেটের স্রষ্টা মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতি বিজড়িত যশোরের কেশবপুর উপজেলার মেয়ে। রাজধানীর ইডেন কলেজের ইতিহাস বিভাগ থেকে অর্নাস ও মাস্টার্স শেষ করেন। ২০১০ সালে মাস্টার্স শেষ করার পরই বিয়ে হয়ে যায়। শ্বশুরবাড়ি মাদারীপুরের শিবচরে হলেও এখন সবাই রাজধানীর বাসাবোতে স্থায়ী হয়েছেন। স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে ছোট সংসার। সংসার সামলানোর পাশাপাশি বাসায় তৈরি খাবার নিয়ে কাজ করছেন।

সোনিয়া উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন ২০২০ সালে করোনাকালিন সময়ে। তিনি বলেন, ইডেন  থেকে পড়াশোনা শেষ করার পর কখনও চাকরি করা হয়নি। তবে কিছু একটা করার ইচ্ছা সব সময়ই হতো। একদিন আমার এক বন্ধুর ইনভাইটে উই গ্রুপে যুক্ত হই। এরপরই উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছেটা আরও বেড়ে গেল। মনে হলো, ঘরে বসেই যদি এমন কিছু করা যায় মন্দ না। সেই ভাবনা থেকেই আমার উদ্দোক্তা হওয়া। কারণ দুই সন্তানকে সময় দেওয়ার পাশাপাশি এটা একটা দারুণ অপশন আমার জন্য।

তবে কাজ শুরু করতে গিয়ে প্রথম দিকে একটু প্রতিবন্ধকতা ছিল। বিশেষ করে সবাই কি বলবে, কিভাবে পণ্য ডেলিভারি করবে, মূলধন কিভাবে আসবে ইত্যাদি। এরই মাঝে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে “রোজি’স কুকিং হাউজ” নামে একটি ফেসবুক পেজ খোলেন।

অল্প কিছুদিনের মধ্যেই পরিচিতজন থেকে শুরু নতুন নতুন অসংখ্য ক্রেতা সোনিয়া আফরোজ রোজির তালিকায় যুক্ত হতে থাকেন। তার সিগনেচার খাবার যশোরের ঐতিহ্যবাহী নারকেলের দুধের হাঁসের মাংস ও ছিটা রুটি। এছাড়া তার কাছে চিকেন মোমো কাবাব, চিকেন স্পিং রোল, সমুচা, পিঠাসহ নানা ফ্রোজেন আইটেম রয়েছে। যার মাধ্যমে তিনি গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জন করে সফলতার সঙ্গে এগিয়ে চলেছেন।

রোজি বলেন, আমার বেশিরভাগই রিপিট কাস্টমার। এমনও কাস্টমার আছেন, যারা আমার হাঁসের মাংস ১০ বারেরও বেশি সময় নিয়েছেন। আমার মূল আইটেম নারকেলের দুধের হাঁসের মাংস ও ছিটা রুটি হলেও বিভিন্ন ফ্রোজেন আইটেম নিয়ে কাজ করি। আমার চিকেন মোমোর অনেক চাহিদা। এছাড়া চিকেন শামী কাবাব, বিফ শামী কাবাব, চিকেন সাসলিক, চিকেন স্পিং রোল ও চিকেন সমুচারও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো অর্ডার থাকে।

তার এই সফল যাত্রার শুরুতে কোনো মূলধনই ছিল না। বলা যায়, সম্পূর্ণ খালি হাতে তিনি ব্যবসা শুরু করেন। তিনি বলেন, আমার তেমন কোনো মূলধনই ছিল না। বাসায় চটপটির উপকরণ ছিল, যার মূল্য ৫০ টাকার মতো। সেটা দিয়েই শুরু। এই শীতে আমার সিগনেচার খাবার যশোরের ঐতিহ্যবাহী নারকেলের দুধের হাঁসের মাংস ও ছিটরুটি সেল করে লাখপতি হয়েছি। 

সোনিয়া মনে করেন, এটা তার এবং যশোর জেলার সফলতা। কারণ একটা খাবারকে ফোকাস করে নিয়মিত থাকার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে।

এ সফলতার পিছনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন এই নারী উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, আমার ব্যবসাটা মূলত অনলাইন ভিত্তিক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে আমি খুব সহজে কাজগুলো করতে পারছি। তাই এটার সঠিক ব্যবহারে আমিসহ সবার জন্যই খুব বেশি সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

তবে তিনি এ রান্নার জন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেননি, শিখেছেন হাতে-কলমে মায়ের কাছ থেকে। তিনি বলেন, আমি রান্নার কোনো প্রশিক্ষণ নিইনি। যা শিখেছি, সবই মায়ের কাছ থেকে। মা যেভাবে রান্না করতেন, আমিও ঠিক সেভাবেই রান্না করি। তবে আমি মনে করি, অবশ্যই একজন উদ্যোক্তার প্রশিক্ষণের দরকার আছে। কারণ প্রশিক্ষণ পেলে আমরা আরও বেশি দক্ষ করে নিজেকে আগামীর জন্য তৈরি করতে পারবো।

একাই সবকিছু করে থাকেন এই উদ্যোক্তা। তবে তার স্বামী চাকরির পাশাপাশি সুযোগ পেলেই তাকে সহযোগিতা করে থাকেন। তিনি বলেন, আমার স্বামী সবসময়ই আমাকে উৎসাহ দেন এবং খুবই সহযোগিতা করেন। যখন যেটা দরকার হয়, ছুটির দিন বা অন্য সময় তিনি বাসায় থাকলেই এনে দেন। আবার অনেক সময় যা যা প্রয়োজন, আগে জানিয়ে রাখলে অফিস থেকে বাসায় আসার সময় সেগুলো নিয়ে আসেন।

সোনিয়া স্বপ্ন দেখেন তার মাধ্যমে একদিন নারকেলের দুধের হাঁসের মাংস ও ছিটা রুটি সারাদেশের মানুষ এক নামে চিনবে এবং একটা ব্রান্ডিং খাবারে পরিণত হবে।