সাতসতেরো

বিদায় মাহে রমজান, ব্যথিত মুমিনের হৃদয়

ঈদের সুসংবাদ নিয়ে হেসে উঠবে শাওয়ালের চাঁদ। বিদায় নেবে সাধনা সংযম ও ইবাদতের মহিমান্বিত মাস মাহে রমজান। তাই ব্যথিত প্রতিটি মুমিনের হৃদয়। মনের কোনে একটি প্রশ্ন বার বার উকি দেয়, দুনিয়ার সংক্ষিপ্ত সফরে আবার কী ফিরে পাবো আগামী রমজান? নাকি আমার জীবন থেকে চিরতরে বিদায় নিলো রহমত মাগফিরাত ও নাজাতে মোড়ানো বরকতময় এই মাস। রমজানুল মোবারকের শেষ প্রান্তে অনেকেরই হৃদয় ব্যথিত ও চোখ অশ্রুসিক্ত হয়, আরজ করেন মহান আল্লাহর দরবারে, আমাদের জীবনে আবার যেন ফিরে আসে মাহে রমজান।

তবে রমজানুল মোবারক শেষ হয়ে গেলেও এ মাসের সংযমের শিক্ষা জীবনের সব ক্ষেত্রে ধারণ ও লালন করতে হবে আমৃত্যুকাল। সুদ, ঘুষ, মিথ্যাচার, দুর্নীতি, হিংসা ও লালসা ইত্যাদি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বর্জন করতে হবে রমজানের মতো রমজান-পরবর্তী জীবনেও। কেননা প্রকৃত মুমিন ১২ মাসই রমজানের মতো অতিবাহিত করেন।

মাহে রমজানে আমরা যেভাবে জামাতে নামাজে পা বন্দি করেছি, বাকি ১১ মাসেও এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।

মহান আল্লাহ তায়ালা জামাতে নামাজ আদায়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা রুকুকারীদের সাথে রুকু করো’। (সূরা বাকারা, আয়াত:৪৩)

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরে বায়জাবিতে বলা হয়েছে- ‘তোমরা মুসল্লিদের সাথে জামাতে নামাজ আদায় করো।”

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, জামাতে নামাজ আদায় করা একা আদায় করার চেয়ে ২৭গুণ উত্তম। (বুখারী: ৬৪৫)

হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন প্রথম তাকবিরের সাথে জামাতে নামাজ আদায় করবে, আল্লাহতায়ালা তার জন্য দুটি পুরস্কার দান করবেন:  ১. জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন।  ২. মুনাফিকী থেকে পরিত্রাণ দিবেন। (বুখারী, মুসলিম)

হযরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি স্বীয় ঘর থেকে উত্তমরূপে অজু করে ফরজ নামাজের উদ্দেশ্যে বের হয়, সে ইহরাম বেধে হজে গমনকারীর ন্যায় সওয়াব লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি শুধু চাশতের নামাজের উদ্দেশ্যে কষ্ট করে বের হয়, সে ওমরাহ পালনকারীর ন্যায় সওয়াব লাভ করবে। (আবু দাউদ: ৫৫৫)

রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও ইরশাদ করেন, কোনো ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা যতবার মসজিদে যাতায়াত করে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতে ততবার মেহমানদারীর ব্যবস্থা করে রাখেন। (বুখারী: ৬২৯)

পক্ষান্তরে যারা জামাতের ব্যাপারে উদাসীন; বিনা কারণে জামাত ব্যতিত একা নামাজ আদায় করে মহানবী (সা.) তাদের সম্পর্কে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেন, ঐ সত্ত্বার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ। আমার ইচ্ছা হয় আমি কাঠ সংগ্রহ করার নির্দেশ দেই আর নামাজের আজান দিতে হুকুম করি। অতঃপর এক ব্যক্তিকে ইমামতির নির্দেশ প্রদান করি। আর আমি ঐ সব লোকদের দিকে যাই, যারা জামাতে হাজির হয়নি এবং তাদের ঘরগুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেই। (বুখারী: ৬১৮) 

মহান আল্লাহ আমাদেরকে মাহে রমজানের অনুপম শিক্ষা জীবনের সব ক্ষেত্রে বাকি ১১ মাসেও প্রতিপালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।