খেলাধুলা

বিদায়ী মোস্তাফিজের গল্প তুলে ধরলো চেন্নাই

আইপিএলের এবারের আসর থেকে মোস্তাফিজুর রহমানের বিদায় আসন্ন। আর মাত্র দুই ম্যাচ খেলেই তিনি দেশের বিমান ধরবেন। জাতীয় দলের জিম্বাবুয়ে সিরিজকে সামনে রেখে তাকে ডেকে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। তাইতো আইপিএল পাঠ চুকিয়ে দেশে ফিরতে হচ্ছে তাকে।

বিদায়ী মোস্তাফিজকে নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে চেন্নাই সুপার কিংস। তাদের ভেরিফাইড ফেসবুকে পেইজে প্রকাশিত সেই ভিডিওতে মোস্তাফিজকে ‘বাংলা লায়ন’ আখ্যা দিয়ে তার গল্প তুলে ধরেছে।

সেখানে মোস্তাফিজের শৈশব, ক্রিকেটার হয়ে ওঠা, ভালো লাগা, আইপিএলে খেলা, চেন্নাইর হয়ে খেলা নানাদিক তুলে ধরা হয়েছে ফিজের জবানিতে।

সেখানে শৈশব স্মৃতিচারণ করে ফিজ বলেন, ‘আমার গ্রাম সাতক্ষীরা কালিগঞ্জ। আমরা চার ভাই। আমরা সবাই প্রায় ক্রিকেট পাগল। বড় ভাইয়েরা এলাকায় খেলা নিতো। সে সময় আমি ছোট ছিলাম। যারা বাইরে থেকে ভাড়ায় খেলতে আসতো তাদের আমরা বোলিং করতাম। একটা বড় ভাই ছিল। সে আমার ভাইকে বলেছে তোর ছোট ভাই তো ভালো বোলিং করে। সেখান থেকেই আস্তে আস্তে আমার ক্রিকেটে আসা।’

নিজের কাটারের বিষয়ে বলেন, ‘এটা আসলে ন্যাচারাল বলা চলে। আমাকে এটা কেউ শেখায়নি, কাটারটা। এক সময় আমি ন্যাশনাল টিমে নেট বোলিং করছিলাম। তখন বিজয় ভাই বলছিল তুই কি স্লোয়ার মারিস না? তখন আমি খুব জোরে জোরে বোলিং করতাম। তিনি বলার পরে আমি নরম্যালি স্লোয়ার বল ট্রাই করতেছিলাম। তখন থেকে দেখলাম বল ভালোই ঘুরছিল। তখন অনেকেই স্লোয়ারে আউট হয়েছিল। সেখান থেকে কাটার বলটা শুরু হয় আমার।’

নিলামে চেন্নাই দলে ডাক পাওয়ার স্মৃতিচারণ করে ফিজ বলেন, ‘এটাই চেন্নাই দলে আমার প্রথম। ২০১৬ সালে আমি যখন আইপিএলে খেলা শুরু করেছিলাম, তখন থেকেই স্বপ্ন ছিল চেন্নাইতে খেলার। যখন আমি কল পাই, ওইরাতে আমার আর ঘুম আসতেছিল না। এরকম অবস্থা হয়েছিল।’

‘আমার পরেরদিন খেলা ছিল। আমি নিউ জিল্যান্ডে ছিলাম। রাতে আমি ঘণ্টাখানেকের মতো ঘুমিয়েছিলাম। তখন দেখি শুধু ম্যাসেজ আসতেই আছে। নিউ জিল্যান্ড টাইম রাত ১টার সময় অকশন শুরু হয়েছিল। দেখি মেসেজ আসতেই ছিল। সবাই বলছিল চেন্নাই টিমে সিলেক্ট হয়েছি।’

চেন্নাইর ড্রেসিংরুমের পরিবেশ ও ছোট ছোট বিষয় কাজে লাগা নিয়ে মোস্তাফিজ বলেন, ‘জাতীয় দলের পরিবেশ যেমন ফ্রেন্ডলি, এখানে আসার পর আমার আনইজি মনে হয়নি। এটা খুব বড় দিক। মাহি ভাই (ধোনি) কিছু ফিল্ডিং সেটাআপ, ব্রাভো ডেথ ওভারের দিকে কিছু কিছু ফিল্ডিং সেটআপের বিষয় বলছিল। আমার এই ছোট ছোট জিনিসগুলো ভালো কাজে লাগছে।’

ধোনির বিষয়ে বলেছেন, ‘তার সঙ্গে বোলিং নিয়েই বেশিরভাগ কথা হয়। মাঠে কথা বেশি হয়। বাইরে কম কথা হয়। কোনটা করলে কি হয়, মাহি ভাই এসেই আমাকে বলেন।’

আইপিএলের প্রশংসা করে কাটার মাস্টার বলেন, ‘অন্য যেকোনো টুর্নামেন্টের চেয়ে আইপিএলে বেশি স্টাররা থাকেন, সব দেশের। এখানে যদি আমি সফল হই তাহলে অন্য জায়গায় সফল হওয়াটা সহজ হবে, আমার কাছে মনে হয়।’

নিজের বেশি ভালো লাগার বিষয়ে ফিজ বলেন, ‘বেশি ভালো লাগা কাজ করে যখন আমি বড় টিমের বিপক্ষে খেলি। আর বড় টিমের বিপক্ষে আপনি যদি পারফর্ম করেন তাহলে হাইলাইট হয় বেশি। স্বাভাবিকভাবেই আমার সব সময় বড় টিমের বিপক্ষে খেলতে ভালো লাগে। দর্শক অনেক বেশি থাকে, সবকিছুই।’

খেলা কম দেখেন দাবি করে ফিজ বলেন, ‘বরাবরই আমি খেলা একটু কম দেখি। খেলতে পছন্দ করি, তবে খেলা দেখি কম। বিশেষ করে যদি টি-টোয়েন্টি খেলা দেখি তাহলে ডেথ ওভারের দিকে দেখি। তখন ব্যাটস্যানরা কি করে, কোনদিকে মারতেছে। এইগুলো একটু দেখি বেশি। এর বাইরে পুরো ৪০ ওভার শেষ করি খুবই কম।’

আগের আর এখনকার মোস্তাফিজের বিষয়ে বলেন, ‘আসলে ওটা একরকম লাইফ ছিল, এখন একরকম। আগে যখন ক্রিকেটার ছিলাম না তখন যেখানে খুশি যেতে পারতাম। এখন যেতে পারি না। যেতে কষ্ট হয়। সবাই ছবি উঠাতে যায়। আনইজি লাগে আরকি।’

শেষের দিকে এই তারকা পেসার বলেন, ‘যেকোনো স্পোর্টসেরই আসলে ভালোর শেষ নাই। যেটা পিছনে চলে গেছে তো চলে গেছে। সেটা তো আর আমি ফিরে পাবো না। যেমন আমি এই ম্যাচে এই উইকেট পেয়েছিলাম, এটা। ওটা ভেবে আমাকে বসে থাকলে হবে না। আমার সামনে আরও খেলা আছে। আমি কি করলে আরও ভালো করতে পারবো। সব সময় এটাই ভাবি।’